কাজকর্মের ক্ষেত্রে দিনটি বিশেষ শুভ। নতুন যোগাযোগ ও উপার্জন বৃদ্ধির ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে পারে। বিদ্যায় ... বিশদ
যখন ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) নৃশংস অপরাধ বেড়ে চলার ছবিটা সামনে আনে তখন সেটি নিঃসন্দেহে আইশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার দিকটিকেই নির্দেশ করে। যখন স্বঘোষিত মাতব্বরের দল কোনও অল্প বয়সি দম্পতিকে নিগ্রহ করে কিংবা কাউকে পিটিয়ে হত্যা করে, তখন সেটা মাথা এবং হাড় ভেঙে যাওয়ার খবর। সরকারি কর্তৃপক্ষের তরফে জবরদখল উচ্ছেদে বুলডোজারের ব্যবহারকে বাড়ি ভাঙার খবর বলা যেতে পারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন বিরোধী দলকে, বিশেষ করে কংগ্রেসকে—‘টুকরে টুকরে গ্যাং’ কিংবা ‘শহুরে নকশাল’ দেগে দেন, তখন সেই ব্রেকিং নিউজ উদ্বেগের কারণ হয়।
আশা, হৃদয় ভঙ্গ হচ্ছে
আজ যে-সব গুরুত্বপূর্ণ ব্রেকিং নিউজ শেয়ার করব তাতে আপনাদের আশা এবং হৃদয় দুটিই ভঙ্গ
হতে পারে। কে ভি কামাথ একজন বিশিষ্ট ব্যাঙ্কার। আইসিআইসিআই নামক প্রতিষ্ঠানকে তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি ব্যাঙ্ক হিসেবে গড়ে তুলেছেন। নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের (ব্রিকস ব্যাঙ্ক)
প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। কামাথ বর্তমানে ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ফর ফাইনান্সিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার
অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এনএ-বিএফআইডি) শীর্ষকর্তা। দেশ ঠিক কোন পথে এগলে ২০৪৭ সালে বিকশিত ভারতে (ডেভেলপড ইন্ডিয়া) গিয়ে পৌঁছতে পারবে সম্প্রতি একটি বুক রিভিউতে তারই সন্ধান তিনি দিয়েছেন।
একটি প্রথম সারির সংবাদপত্রে কামাথের একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ওই লেখায় সংশ্লিষ্ট গ্রন্থ প্রণেতা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রামনিয়নকে আন্তরিকভাবেই প্রশংসা করেছেন। তাঁকে সাধুবাদ—‘প্রত্যাশিতভাবে তাঁর অন্তর্নিহিত থিমটি তুলে ধরার জন্য’ এবং এটা বলার জন্য যে ‘অতীতের হতাশাগ্রস্ত শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে হবে এবং ভালো চিন্তাভাবনার মধ্য দিয়ে নির্ধারণ করতে হবে সাহসী লক্ষ্য।’ কামাথ লেখকের সঙ্গে একমত যে, নমিনাল জিডিপির বার্ষিক ১২.৫ শতাংশ বৃদ্ধি (মার্কিন ডলারে) ঘটলে ‘প্রতি ছ’বছরে তা দ্বিগুণ হবে। ২০২৩ সালের ৩.২৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ জিডিপি বেড়ে ২০৪৭ সালে ৫৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে বা প্রায় ১৬ গুণ বৃদ্ধি পাবেো এটি বাস্তবিকই সম্ভব।’ আমিও অন্তর থেকে এই মতের পক্ষে এবং এমত সুস্থায়ী বৃদ্ধির লক্ষ্যে সওয়ালও করেছি।
দংশনটা শেষ দিকে
কে ভি কামাথের সমালোচনায় দংশনটা রয়েছে শেষের ছয়টি অনুচ্ছেদে। তিনি লেখা শুরু করেছেন ‘চারটি স্তম্ভ’-এর কথা তুলে ধরে, সেগুলিই ভারতকে পরিপূর্ণতা এনে দেবে। অভীষ্ট সেই বিষয়গুলি কী কী? সমষ্টির অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, সামাজিক ও আর্থিক ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা, বেসরকারি ক্ষেত্রে সম্পদ সৃষ্টিতে নীতি-নৈতিকতা অবলম্বন এবং ধারাবাহিক ব্যক্তিগত বিনিয়োগের মাধ্যমে একটি কল্যাণময় পরিবেশ সৃষ্টি। মোদি জমানায় উপর্যুক্ত ‘স্তম্ভগুলি’ কী অবস্থায় রয়েছে যাচাই করে নেওয়া যাক।
বৃদ্ধির উপর সামষ্টিক-অর্থনৈতিক গুরুত্ব: সামষ্টিক-অর্থনৈতিক বৃদ্ধির (ম্যাক্রো-ইকনমিক গ্রোথ) উপর গুরুত্ব অটুট রাখার সূচকগুলি হল—ফিসকাল ডেফিসিট বা রাজকোষ ঘাটতি, মুদ্রাস্ফীতি এবং সুদের হার, কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট এবং ঋণ/জিডিপি অনুপাতের তথ্যাদি। জিডিপির ৩ শতাংশ পরিমাণ ফিসকাল ডেফিসিটের লক্ষ্যে পৌঁছতে সরকারকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। এই ঘাটতির হার এখন ৫.৬ শতাংশ! মুদ্রাস্ফীতির হার এখনও ৪ শতাংশের অধিক। ২০২২ সালের মে মাস থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রেপো রেট ৬.৫ শতাংশে স্থির রয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের শেষেও কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিটের চেহারাটা বেশ বড়সড়ই ছিল—২৩.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাঁচিয়ে দিয়েছে কেবল ফরেন রেমিটেন্স বা প্রবাসীদের পাঠানো বিপুল অর্থ। ১৮.৭ শতাংশের ঋণ/জিডিপি অনুপাত নিয়ে ম্যানেজ করা সম্ভব। অর্থাৎ পরিস্থিতিটা ভালো-মন্দ মিশিয়েই।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি: মোদি জমানায় সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছে বৈষম্য হ্রাসে সরকারের ব্যর্থতা। মাথাচাড়া দিয়েছে ক্রনি ক্যাপিটালিজম বা স্বজনতোষী পুঁজিবাদ। সরকারি বিনিয়োগ হচ্ছে পুঁজি-নিবিড় শিল্পে। কমানো হয়েছে কর্পোরেট ট্যাক্স। কর চেপে রয়েছে জনগণের বহুল ব্যবহার্য পণ্যগুলির উপর। জ্বালানি এককথায় অগ্নিমূল্য। ন্যূনতম মজুরি শ্রমিক পরিববারগুলির প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। যাঁরা পরের জমি চষে পেট চালান সেই কৃষকরা অবহেলার শিকার। গরিব মানুষ যেসব পরিষেবার উপর নির্ভর করেন সেগুলির প্রতি সরকার বিমুখ। এমন পক্ষপাতের দৃষ্টান্ত হিসেবে ‘বন্দে ভারত’ ট্রেনের পাশে রেলে সেকেন্ড ক্লাস এবং অসংরক্ষিত কোচে ভ্রমণের বিষয়টি সামনে রাখা যায়। এছাড়া রয়েছে আরও একাধিক জনবিরোধী কেন্দ্রীয় নীতি। আর এজন্যই জনসংখ্যার উপরের দিকের ১ শতাংশ এবং নীচের দিকের ২০ শতাংশের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়ে গিয়েছে।
ঘৃণা প্রচার এবং সাম্প্রদায়িক সংঘাতের কারণে সামাজিক অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া বড় ধাক্কা খেয়েছে। কে ভি কামাথ যেটিকে দ্বিতীয় স্তম্ভ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সেটি দুর্বল তো বটেই, নড়বড়ও করছে!
বেসরকারি ক্ষেত্রে নৈতিক সম্পদ সৃষ্টি: ব্যাঙ্ক
জালিয়াতি এবং কর্পোরেট সেক্টরে পতন গত দশ বছরে বেড়েছে। ব্যাঙ্কের দেনা মকুবকে (রাইট-অফ) বৈধ করতে এবং তথাকথিত ব্যর্থ কোম্পানিগুলিকে বাঁচাতে হাতিয়ার হয়েছে দি ইনসলভেন্সি অ্যান্ড ব্যাঙ্করাপসি কোড (আইবিসি)। অন্যদিকে, আইবিসির মাধ্যমে ঋণের অর্থ ফেরতের হার (রিকভারি রেট) মাত্র ৩২ শতাংশ। যাঁরা সাকসেসফুল রেজোলিউশন অ্যাপ্লিক্যান্ট (এসআরএ) তাঁরা দাঁও মেরেছেন। আইনকে সামনে রেখে অন্যায় হস্তক্ষেপ, চোরাগোপ্তা ও ধীর নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং দমনপীড়নমূলক কর ব্যবস্থা সৎ ব্যবসায়ীদের মনোবল ভেঙে দিচ্ছে। এই কারণে তরুণ উদ্যোগীরা বিদেশে ব্যবসা বা মাইগ্রেট করতে চান।
৪,৩০০ ভারতীয় ধানঢ্য (মিলিয়নেয়ার) ব্যক্তি ভারত ছেড়ে চলে গিয়েছেন (সূত্র: মিস্টার রুচির
শর্মা, টাইমস অফ ইন্ডিয়া)। বস্তুত কম্পিটিশন কমিশনই মনোপলি (একচেটিয়া) ও অলিগোপলিকে উৎসাহ জুগিয়েছে। বিমান পরিবহণ (এয়ারলাইন্স), বন্দর (পোর্ট), বিমানবন্দর (এয়ারপোর্ট), টেলিযোগাযোগ, তেল শোধনাগার (অয়েল রিফাইনারি) এবং সৌরশক্তির (সোলার এনার্জি) মতো শিল্পে প্রতিযোগিতা খুবই কম। সিমেন্ট,
ইস্পাত, বিদ্যুৎ এবং খুচরো ব্যবসা ক্ষেত্রে দ্রুত কনসোলিডেশন বা একত্রীকরণ চলছে, এবং এসব ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা বাড়বে না কমবে, তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক
বাজার অর্থনীতির জন্য এই প্রবণতাগুলি ভালো নয়, যদিও নীতিনিষ্ঠা মেনে বেসরকারি ক্ষেত্রের সম্পদ সৃষ্টি (এথিক্যাল ওয়েলথ ক্রিয়েশন) নিশ্চিত করণের সময়-পরীক্ষিত উপায় এটাই।
ধারাবাহিক ব্যক্তিগত বিনিয়োগের মাধ্যমে একটি কল্যাণময় পরিবেশ সৃষ্টি: সরকারের আর্জি, তদ্বির এবং হুমকি সত্ত্বেও বেসরকারি বিনিয়োগ সরকারি বিনিয়োগের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। ব্যবসা যেহেতু সরকারের আস্থাশীল নয়, তাই সরকারের প্রতিও ব্যবসার আস্থা নেই। হুমকি বিবাহ (শটগান ওয়েডিং)—বিতর্কিত উপায়ে ব্যবসা দখল—পরিবেশকে উত্তপ্ত করেছে। ২০০০ সাল থেকে এই পর্যন্ত আট হাজারের বেশি ভারতীয় কোম্পানি সিঙ্গাপুরে রেজিস্ট্রেশন নিয়েছে বা ব্যবসা প্রক্রিয়া শুরু করেছে (সূত্র: এইচসিআই, সিঙ্গাপুর)। তদন্তকারী সংস্থার বাড়াবাড়ি ব্যবসায়ী শ্রেণির মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে অর্থমন্ত্রী ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ভারতীয় অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে কী তাঁদের বাধা হচ্ছে? এই বিষয়ে আমাদের নির্দেশ দেওয়ার জন্য কে ভি কামাথ বিশেষভাবে যোগ্য ব্যক্তি।