কাজকর্মের ক্ষেত্রে দিনটি বিশেষ শুভ। নতুন যোগাযোগ ও উপার্জন বৃদ্ধির ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে পারে। বিদ্যায় ... বিশদ
সার্কের কী অবস্থা?
ভারতীয় পরিকল্পনায় এই প্রতিবেশীদের স্থান কী? একসময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইন্দরকুমার গুজরাল
লুক ইস্ট পলিসি বা পুবে তাকাও নীতি ঘোষণা করেন। অটলবিহারী বাজপেয়ি চাতুর্যের সঙ্গে সেই নীতিরই নাম দেন ‘অ্যাক্ট ইস্ট’। নরেন্দ্র মোদির
অনবদ্য কায়দা অনুসারে তাঁর সরকার ঘোষণা
করেছে ‘নেবারহুড ফার্স্ট’ বা প্রতিবেশীকে অগ্রাধিকারের নীতি।
আশেপাশের দেশগুলি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত আগ্রহের বিষয়টি জানার কৌতূহল হল আমার। সার্ক গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি মোদিজি শেষ কবে সফর করেছেন? এমন অনুসন্ধানে নেমে ‘পিএমইন্ডিয়া’ ওয়েবসাইট থেকে যে তথ্য পেয়েছি তা নিম্নরূপ:
ভুটান: মার্চ, ২০২৪
নেপাল: মে, ২০২২
বাংলাদেশ: মার্চ, ২০২১
মালদ্বীপ: জুন, ২০১৯
শ্রীলঙ্কা: জুন, ২০১৯
আফগানিস্তান: জুন, ২০১৬
পাকিস্তান: ডিসেম্বর, ২০১৫
আমি আরও দেখতে পেয়েছি যে, প্রধানমন্ত্রী গত দশ বছরে নেপাল ভ্রমণ করেছেন মোট পাঁচবার। তিনবার করে সফর করেছেন ভুটান আর শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তান সফরের সংখ্যা প্রতিটি ক্ষেত্রে দুই। তবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তান সফর করেছেন মাত্র একবারই। নরেন্দ্র মোদি তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বকালে বিদেশ সফর করেছেন মোট ৮২ বার। পড়শি দেশগুলিতে এই ১৮ বার সফর তার মধ্যেই ধরা আছে। তাঁর সফরসূচি লক্ষণীয়ভাবে আমাকে হতাশ করেছে যে, ২০২৪ সালের মার্চ মাসে একদিনের জন্য ভুটান সফর ব্যতীত, গত দু’বছরের বেশি সময়কালের ভিতরে তিনি অন্যকোনও প্রতিবেশী দেশে পা দেননি!
১৮তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০২১৪ সালের নভেম্বরে। সেবার আসর বসেছিল নেপালের রাজধানী শহর কাঠমান্ডুতে। ২০১৬ সালের
নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হয় ১৯তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন। কিন্তু পাকিস্তানের ইসলামাবাদের ওই আন্তর্জাতিক আসরে ভারত যোগ দেয়নি। ভারতের সঙ্গে ওই সম্মেলন বয়কট করেছিল আরও চারটি দেশ। তারপর থেকে সার্কের আর কোনও শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। বাজপেয়ি সরকারের বিদেশমন্ত্রী যশবন্ত সিং সার্ককে ‘পুরো ব্যর্থ’ বলে ঘোষণা করেন। মনে হচ্ছে, মোদি সরকার সেই সিদ্ধান্তকেই ‘চূড়ান্ত’ বলে স্বেচ্ছায় মেনে নিয়েছে।
ড্রাগন-হাতির দ্বন্দ্ব
নরেন্দ্র মোদি তাঁর শাসনকালের ২০১৫ থেকে জুন, ২০১৮ সালের মধ্যে পাঁচবার চীন সফর করেন। দু’দেশের সম্পর্ক তারপরই খারাপ হয়। তিনি দু’বার মায়ানমার ও একবার মরিশাস সফর করেছেন। চীনের এই ভূমিকায় মোদিজি ক্ষুব্ধ, কিন্তু যতটা জানা যায় তাতে মনে হয় যে তিনি অসহায়। ভারতের নীতি, চীনকে নির্ধারণের অনুমতি দিয়েছেন তিনি! সেনা প্রত্যাহার বা বিবাদ মীমাংসার আলোচনার এজেন্ডা চীনই ঠিক করছে। তার ফল যা হওয়ার হচ্ছে সেটাই। অন্তহীন আলোচনার পরেও কোন মীমাংসা সূত্র সামনে আসছে না। সামরিক উপস্থিতির ক্ষেত্রে কী ঘটছে? প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর চীন তাদের সেনা মোতায়েন বাড়িয়েছে। এমনকী সেখানেই নির্মাণ করে চলেছে সড়ক, সেতু, ক্যাম্প এবং মাটির নীচে স্টোরেজসহ একাধিক সুবিধাযুক্ত কেন্দ্র। এছাড়া সেখানে জনবসতিও গড়ে তুলছে তারা। চীনের
সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ২০১৩-১৪ সালে ছিল ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৩-২৪ সালে বা দশ বছরে সেটা বেড়ে হয়েছে ৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যেসব ভারতীয় উদ্যোগপতি মরিশাসে গিয়ে অর্থ বিনিয়োগ করতে চান, তাঁদের জন্য
মরিশাস সানন্দে একটি নির্ঝঞ্ঝাটের দেশ হতে প্রস্তুত। অন্যদিকে, মায়ানমার ভারতে রোহিঙ্গা শরণার্থী
পাচার করছে। তা না-হলে ওই দেশটির কোথায় কী ঘটছে বা না-ঘটছে, তা জানার জন্য ভারতের কারও কোনও মাথাব্যথা থাকে না। এইসমস্ত সমস্যা কাটিয়ে উঠতে ভারত কতদূর কী করেছে? দৃশ্যত, এখনও পর্যন্ত কিছুই না।
প্রতিবেশীদের উপেক্ষা করার একটা মূল্য আমাদের চোকাতে হয়েছে। নেপাল সরকারে যে একটা মধ্যবর্তী পরিবর্তন হতে যাচ্ছে এবং কে পি শর্মা ওলি তাদের প্রধানমন্ত্রী পদে ফিরে আসছেন, এটা কিন্তু আমরা অনুমান করতে পারিনি। শেখ হাসিনাকে আক্ষরিক অর্থেই বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করা হবে, সেটাও অনুমান করতে ব্যর্থ হয়েছি আমরা। আমরা মাখামাখি চালিয়ে গিয়েছি রনিল বিক্রমসিংহের সঙ্গে। অনুরা দিসানায়েকের সঙ্গে আমাদের কোনও যোগাযোগই ছিল না। অথচ, ৪২.৩ শতাংশ ভোট পেয়ে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন তিনিই। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর মোহাম্মদ মুইজ্জুর প্রথম এজেন্ডা ছিল সে-দেশে যে সামান্য সংখ্যক ভারতীয় সামরিক উপদেষ্টা ছিলেন তাঁদের সেখান থেকে খেদানো। পাকিস্তানের ব্যাপারে যতদূর বুঝতে পারছি তা হল, মোদি সরকারের পাকনীতি সম্ভবত ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির অঙ্কেই ঠিক হচ্ছে। পাকিস্তানের প্রকৃত শাসক কারা, তা নিয়ে বোধহয় মোদি সরকারের কোনও মাথাব্যথা নেই।
খুঁচিয়ে ঘা করা
দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে ভারতের প্রভাব ক্রমে খর্ব হচ্ছে। এটা নিজের গা খুঁচিয়ে ঘা করারই শামিল। নরেন্দ্র মোদির বিদেশনীতির লক্ষ্য হয়ে উঠেছে বিশ্ব পরিস্থিতিতে ভারতকে একটি ‘পিস ব্রোকার’ বা ‘শান্তির দালাল’ হিসেবে তুলে ধরা। মোদি সরকার এইভাবেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে তুলতে সচেষ্ট। এর সাক্ষ্য দেয় রাশিয়া, ইউক্রেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং অন্য একাধিক দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে মোদিজির যোগাযোগ বৃদ্ধি ও বৈঠকের ঘটা এবং জি-২০, রাষ্ট্রসঙ্ঘের শীর্ষ সম্মেলন ও কোয়াড-এ তাঁর উপস্থিতি।
নরেন্দ্র মোদির জন্য সবসময় আমাদের শুভকামনা আছে। তবু আমরা তাঁকে মনে করিয়ে দিতে পারি যে, তাঁর সরকারের প্রতিবেশী নীতি বস্তুত হয়ে উঠেছে—নেবারহুড লাস্ট বা নেবারহুড লস্ট! সোজা কথায়, অগ্রাধিকারের তালিকা থেকে পড়শিরা ছিটকে গিয়েছে।