পারিবারিক সম্পত্তি ভাগাভাগিতে লাভবান হবেন । ব্যবসায়িক ক্ষেত্রটি কম বেশি চলবে। শিক্ষার্থীদের পক্ষে দিনটি শুভ। ... বিশদ
কিন্তু মোদিজি মনে রাখতে হবে, সন্দেশখালি যেমন ভারতেরই অংশ, কানপুরও তাই। সন্দেশখালির মা-বোনেদের অধিকারের জন্য যেমন আপনি জনসভায় সরব হলেন, কানপুরের কন্যা সন্তানদের জন্যও হতে হবে। তাদেরও বেঁচে থাকার অধিকার আছে। সম্মানের অধিকার আছে। আপনার সরকার নারী সশক্তিকরণ করছে ঠিকই, কিন্তু এই ভাবগম্ভীর চিন্তাধারা প্রচারের জন্য ভালো। বেঁচে থাকার জন্য নয়। সম-অধিকার। এই একটি শব্দবন্ধের ভিতের উপর দাঁড়িয়ে ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউ ইয়র্কে পথে নেমেছিলেন মহিলারা। শুধু মহিলা বলা ভুল হবে। তাঁরা ছিলেন মহিলা বস্ত্রশ্রমিক। চেয়েছিলেন তাঁরা উপযুক্ত কাজের পরিবেশ। ছেলেরা যেমন সুবিধা এবং ভাতা পেয়ে থাকে, ঠিক তেমনটাই দাবি করেছিলেন নারী সমাজের প্রতিনিধিরা। দেড়শো বছর আগের কথা। আমাদের দেশ তারও ৯০ বছর পর স্বাধীন হয়েছে। আধুনিকতার অলিন্দে প্রবেশ করেছে। ২০১৪ সালের আগে না হলেও এখন তো তেমনটাই হয়েছে বলে আপনি এবং আপনার বশংবদরা দাবি করে থাকেন। তারপরও তাহলে কেন সম-অধিকারের জন্য লড়তে হয় ভারতের মেয়েদের? কেন পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ধ্বজাধারীরা সবসময় তাদের পিছনের সারিতেই ঠেলে রাখে? কেন একজন ধর্ষিতার অভিযোগ পুলিস নিতে চায় না? আসলে কী জানেন তো, অধিকার শুধু বেঁচে থাকার নয়, শরীরেরও। ১৪০ কোটি জনতার দেশে এই সুস্থ এবং স্বাভাবিক সচেতনতার প্রচারটাই কখনও হয় না। মেয়েদের যদি এখনও কানপুর, বাহরাইচ, গুজরাত বা সন্দেশখালিতে ভোগ্যপণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে নারী দিবসের সেলিব্রেশনে আপনার পদযাত্রা না করাই ভালো। আপনি তিন তালাক বাতিল করেন, অথচ বিলকিস বানোদের ন্যায়বিচারের আশায় সম্মান জলাঞ্জলি দিয়ে ঘুরতে হয় আদালতের দরজায় দরজায়। কী অপরাধ ছিল মণিপুরের ওই দুই যুবতীর? কুকি আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হওয়া? গণধর্ষণের পর নগ্ন করে হাঁটানো হয়েছিল তাঁদের। প্রায় ৮০০ জনতার একটা পাল তাদের তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল সেদিন। প্রতি পদক্ষেপে অপেক্ষা করছিল যৌন নির্যাতন। ভিডিও করছিল অনেকে। আর পুলিস ছিল দর্শক। মোদিজি... বছর ঘুরতে চলল, একবারও কি এই নৃশংসতার কথা ভেবে আপনার গা রিরি করে ওঠেনি? একবারও ভেতরটা মুচড়ে ওঠেনি? তাহলে কেন কোনও জনসভায় মণিপুরের যন্ত্রণার কথা তুলে ধরেননি আপনি? বিজেপি সেখানকার শাসক বলে? কেন মনে পড়েনি আপনার মণিপুরের মেয়েদের অধিকারের কথা। ওখানকার মা-বোনেদের সম্মানের কথা? তাঁদের ন্যায়বিচার পাইয়ে দেওয়ার কথা? কেন এই ১০ মাসে একবারও আপনি মণিপুরে গিয়ে সেখানকার মানুষের পাশে দাঁড়াননি? আপনি তো তাঁদেরও প্রধানমন্ত্রী।
মণিপুরও তো ভারতেরই অংশ।
আতঙ্ক, আর বুকে কাঁপুনি ধরিয়ে দেওয়ার পরিবেশ। এটাই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ফর্মুলা। শুরু হয়েছিল সৃষ্টির আদি থেকে। চলছে এখনও। তিনজন মাত্র পুরুষ সন্দেশখালিকে নিজেদের জমিদারিতে বদলে দিয়েছিল। জমি তাদের, টাকা তাদের, মানুষগুলোও তাদের। বাড়ির মেয়েদের ‘রাতের বৈঠকে’ ডেকে পাঠানো হতো। ‘অফিসঘরের’ বাইরে তাঁরা বসে থাকতেন... ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আতঙ্ক গ্রাস করত তাঁদের... এই বোধহয় ডাক পড়ল। খুশি করে দিতে হবে বাবুদের। প্রাণভয়, আবার কখনও স্বামী-সন্তানকে ‘সরিয়ে দেওয়ার’ হুমকি। বসে থাকতেন তাঁরা। কদাচিৎ ভিতর থেকে ‘ডাক’ আসত। বেশিরভাগই চাকরবৃত্তির জন্য। ফুর্তির মদ-মাংস জোগানের জন্য। একবুক ভয় নিয়ে তরুণী, যুবতীরা বসে থাকতেন... এই বোধহয় ডাক এল। তারপর শেষ রাতে বলা হতো, ‘বাড়ি চলে যা।’ কিন্তু নেপথ্যে একমাত্র যে ফর্মুলাটা কাজ করত... তা হল আতঙ্ক কায়েম রাখা—‘ডরনা জরুরি হ্যায়’। সেই কারণেই শাহজাহান বাহিনীর ‘নিশির ডাক’। বলতে দ্বিধা নেই, একটি ঘরও যদি শেখ শাহজাহান বাহিনীর নারী নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে, তা ন্যক্কারজনক। তার জন্য চরম শাস্তিই ধার্য হওয়া উচিত। কিন্তু একই সাজা তো ধার্য গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ বা মণিপুরের জন্যও। পশ্চিমের বহু দেশ পেরেছে। কারণ তারা সচেতন হয়েছে। আমরা হইনি। তাদের সরকারের কাছে গুরুত্ব পেয়েছে নাগরিক। আর আপনাদের কাছে ভোট। মোদিজি, আপনার এই নতুন ভারতে রাজনীতি মানুষের জন্য নয়। রাজনীতির জন্য মানুষ। তাকে ব্যবহার করে, ছিবড়ে করে ফেলে দিতে হবে। শেষ কথা ভোটই বলবে। দিনের শেষে আপনি গুনবেন, বিজেপির ঝুলিতে কতগুলি ভোট নিশ্চিত হল। আপনাকে এবার ৩৭০ পেতেই হবে। জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ আপনি মুছে দিয়েছেন। তাই ৩৭০টি আসনই আপনাকে পেতে হবে। আপনি জানেন, মহিলা ভোট এবার আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। আরামবাগ, কৃষ্ণনগরে একের পর এক বাসে চেপে সভায় পৌঁছেছেন মহিলারা। মাঠ আলো করে বসেছেন। আপনি তাঁদের অভিবাদন করছেন, তাঁরাও দেশের প্রধানমন্ত্রীকে সামনে পেয়ে উচ্ছ্বাস জানাচ্ছেন। আপনি হয়তো ভাবছেন, এই ভোটটা বিজেপির ঝুলিতে নিশ্চিত হলেই কাজ হাসিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধুমাত্র এই মহিলা ভোটেই তাঁর বঙ্গজয়ের স্বপ্ন একুশে ধুলিসাৎ করে দিয়েছেন। এবার আমি পারব না? পারতেই হবে। আপনি ভাবছেন, সন্দেশখালি বাংলায় আপনাকে সেই সুযোগ করে দেবে। উত্তরপ্রদেশে রামমন্দির, গুজরাতে আপনার ক্যারিশ্মা, মধ্যপ্রদেশ-ছত্তিশগড়ে কংগ্রেসের প্রতি মানুষের অনীহা। মণিপুর? ওই দুটো আসন না হলেও চলবে।
মণিপুরের মা-বোনেরা কি তাহলে ভারতের নাগরিক নয়?
আজ থেকে ঠিক ১০ বছর আগে কুয়ালা লামপুর থেকে বেজিংগামী একটি বিমান আচমকাই উধাও হয়ে গিয়েছিল। গোটা বিশ্ব নেমে পড়েছিল এই রহস্যের উদ্ঘাটনে। কিন্তু লাভ হয়নি। পুরো রুটের সর্বত্র তন্নতন্ন করে খুঁজেও বিমানটির হদিশ মেলেনি। বোয়িং বিমান। অন্যান্য দিনের মতো খুব স্বাভাবিকভাবেই রওনা দিয়েছিল সেটি। ২২৭ জন যাত্রী ছিল তাতে। কিন্তু আচমকা উধাও? কোটি কোটি ডলার খরচ করেও বিফল হাতে ফিরেছিল বিশ্ব। ওই ঘটনা বুঝিয়েছিল, সর্বশক্তিমানও ব্যর্থ হতে পারে। তার জন্য একটা অসতর্ক মুহূর্ত, সামান্য ওভার কনভিডেন্সই যথেষ্ট। মোদিজি, বিমানের নামটাও কিন্তু ছিল এমএইচ-৩৭০।