পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি। ... বিশদ
এখানে একটা উল্টো প্রশ্ন করা যাক। কংগ্রেসের মতো ধনী পার্টির একটা অ্যাকাউন্ট নজরদারিতে চলে যাওয়া মানে তারা ভোট করতে পারবে না? এও কি বিশ্বাসযোগ্য? বরং যে প্রশ্ন এখানে লাগসই সেটা হল, কংগ্রেস সত্যিই এবার ৪০ আসন পেরতে পারবে তো? পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীরা গত কয়েক বছর ধরেই খোরাক। কারণ, ২৩৫ থেকে ওরা এখন শূন্যে পৌঁছে গিয়েছে। আবার কবে পিদিম জ্বলবে, সেই পিদিম কবে মশাল হবে, কবেই বা হ্যালোজেনের আলো দেবে... এইসব আকাশ-কুসুম চিন্তাধারায় কিছু উচ্চাকাঙ্ক্ষী মানুষ দিনপাত করছেন। কিন্তু বলতে পারেন, কংগ্রেসের জন্য এই প্রশ্ন কেন উঠছে না? অথচ, তাদেরই বেশি করে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তাদের প্রাপ্ত আসন সংখ্যা যথাক্রমে ৪৪ এবং ৫২। নরেন্দ্র মোদির প্রথম ইনিংসে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা কমেছিল ১৬২টি। এর কারণ কী? শুধুই দুর্নীতি? কয়লা কেলেঙ্কারি, অথবা টুজি? খুচরো দুর্নীতি দেখে ভারতবাসী অভ্যস্ত। সেটা আর বিরাট পরিধিতে মানুষের মধ্যে দাগ কাটে না। তার জন্য ৫০টি আসন কমতে পারে। কিন্তু পতনের সংখ্যা ১৬২? কখনওই নয়। তার উপর যেখানে বেশ কয়েকটি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প শুরু করেছিল ইউপিএ’র দ্বিতীয় সরকার। প্রধান তো অবশ্যই ছিল খাদ্য সুরক্ষা। তাহলে কারণটা কী? একটা বিষয় এক্ষেত্রে নজর করতে হবে। ২০০৪ সালে কংগ্রেসের মুখ কে ছিলেন? সোনিয়া গান্ধী। আর ২০০৯ সালে? মনমোহন সিং। এ পর্যন্ত কোনও অসুবিধা ছিল না। কিন্তু ২০১৪ সালে? কংগ্রেস কিন্তু ততদিনে একজনকেই প্রজেক্ট করায় মন দিয়েছিল—রাহুল গান্ধী। তারপর তৃতীয় সাধারণ নির্বাচন হতে চলেছে। এখনও মুখ সেই রাহুল গান্ধী। তিনি গত কয়েক বছরে সাংবাদিক সম্মেলন এবং ভারত জোড়ো ছাড়া কী করেছেন? তাও এমন সব রাজ্যে, যেখানে বিজেপির কোমরে জোর নেই! কোন কর্মসূচি গত কয়েক বছরে কংগ্রেস নিয়েছে যে, আসন সংখ্যা ৪৪ থেকে লাফিয়ে ১৫৫-তে গিয়ে পৌঁছবে? ইস্যু ধরার ক্ষেত্রে কংগ্রেস গত পাঁচ বছর ধরেই শর্ট টার্ম মেমোরি লস উপসর্গে ভুগছে। কোনও ইস্যুই ছ’মাসের বেশি তাদের মনে থাকে না। তা সে পেগাসাস হোক, টাকার অবমূল্যায়ন, আদানি, পেট্রল-ডিজেল... সবই শেষ ওই প্রেস কনফারেন্সে। তারপরও মানুষ কংগ্রেসের উপর ভরসা রাখবে? এই আশা রাহুল গান্ধীও করেন তো?
নরেন্দ্র মোদির আর কিছু না থাকুক, নিত্যনতুন স্বপ্ন দেখানোর প্ল্যানিং রয়েছে। আর আছে ঢাক পেটানোর ক্ষমতা। সব মিলিয়ে মার্কেটিংয়ের অকাট্য প্যাকেজ। একটু তলিয়ে দেখলে, মাসখানেক যাবৎ মোদি লাগাতার একটি সংখ্যার উপর জোর দিয়ে চলেছেন—৩৭০। বিজেপি নাকি আসন্ন নির্বাচনে এই অঙ্ক দখল করে ফেলবে। নেপথ্য কারণ কী? কাশ্মীরকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ থেকে ‘মুক্ত’ করার নিঃশব্দ প্রচার। মানুষকে মনে করিয়ে দেওয়া, ‘আমরাই করেছি। কয়েক বছর কেটে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু ওই ঐতিহাসিক ঘটনা ভুলে গেলে চলবে না! তাই বারবার আমরা হাতুড়ির ঘা দিয়ে যাব আপনাদের মগজে। বলব, আমরা ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করেছি। ওটাই আমাদের ‘নম্বর’। আসন প্রাপ্তির নিরিখেও তাই ৩৭০ আসবে। বারবার। ভোট পর্যন্ত।’ আম জনতাকে বিশ্বাস করানো হবে, নরেন্দ্র মোদিই ফিরছেন ক্ষমতায়। অন্যত্র ভোট দিয়ে লাভ নেই। কারণ, তাদের কোনও সম্ভাবনাই এটাই নিয়তি।
নিয়তির প্রসঙ্গ টেনেছিলেন জওহরলাল নেহরুও। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্বাধীন ভারতবর্ষের প্রথম ভাষণে। এই দেশ কীভাবে যুগ যুগ ধরে নিয়তির সঙ্গে ঘর-সংসার পেতে এসেছে। কীভাবে তাকে মাথা পেতে নিয়েছে। কীভাবে লড়াই করেছে। বলেছিলেন, ‘যে প্রাপ্তি নিয়ে আজ আমরা আনন্দ করছি, সেটা প্রথম ধাপ মাত্র। সাফল্য আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। সেই পথচলা শুরু হয়ে গিয়েছে আজ। সেই সাফল্য ছোঁয়ার মতো সাহস এবং বিবেচনা করার ক্ষমতা আমাদের আছে তো? ভবিষ্যৎ যে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে, তা আমরা নিতে প্রস্তুত তো?’ নেহরুর সেই বিখ্যাত ভাষণের অর্থ অবশ্য মোদি জমানায় বদলে গিয়েছে। নতুন সূর্যোদয়ে দেশবাসীকে জাগিয়ে তোলার যে চেষ্টা তিনি করেছিলেন, এখন সেটাই হয়ে গিয়েছে ভারতকে হেয় করার চেষ্টা! নরেন্দ্র মোদি সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেছেন, ভারতের সামর্থ্যে আস্থা ছিল না নেহরুর। স্বাধীনতার ৭৫ বছরেও তাও দেশ এতটুকু এগতে পারেনি। ভারতকে সামনের সারিতে ঠেলে দেওয়ার কারিগর শুধু এবং শুধুই মোদি। কংগ্রেস মুক্ত ভারত হলে দেশবাসীর লাভ কী হবে? দুর্নীতি কমে যাবে? মূল্যবৃদ্ধি থাকবে না? বছরে ২ কোটি চাকরি হবে? নাকি প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা ঢুকবে? আসলে, এর কোনওটাই হবে না। তাহলে কংগ্রেস-মুক্ত ভারতে লাভ কার? একমাত্র নরেন্দ্র মোদির। কারণ তিনি জানেন, এই একটি দল যদি কোনওভাবে ১৫০ আসন পেয়ে যায়, তাঁর তৃতীয়বার সরকারে ফেরা হবে না। আঞ্চলিক দলগুলি সব মিলিয়ে কত আসন পেতে পারে? খুব বেশি হলে ১৫০! তার মধ্যেও আবার তৃণমূল কংগ্রেস এবং ডিএমকে ছাড়া ৩০ পেরনোর ক্ষমতা খুব বেশি দলের নেই। আম আদমি পার্টি দিল্লি এবং পাঞ্জাব দিয়ে কিছুটা মেক আপ দেবে। সমাজবাদী পার্টি যদি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে আসরে নামত, তাহলে উত্তরপ্রদেশেও কিছুটা লাভের মুখ দেখার সম্ভাবনা ছিল। এখন বিজেপি বিরোধী ভোট নিশ্চিতভাবে কংগ্রেস এবং সমাজবাদী পার্টির মধ্যে ভাগ হয়ে যাবে। কয়েকটা আসন মায়াবতীও দখল করবেন। তেলেঙ্গানায় কেসিআর যে ক’টা পাবেন, কিংবা অন্ধ্রে জগন্মোহন রেড্ডি... ধরে নেওয়া যেতে পারে, সবটাই চলে যাবে বিজেপি তথা এনডিএর ঝুলিতে। তাই এভাবে কুড়িয়ে-বাড়িয়ে সরকার গড়া মুশকিল। শুধুমাত্র কংগ্রেস যদি ধুলো ঝেড়ে উঠে দাঁড়াতে পারে, জোট সরকার গঠন সম্ভব। নরেন্দ্র মোদি সেটাই চান না। তাই রাহুল গান্ধীদের কফিনে পেরেক মেরেই চলেছেন তিনি। এই ট্রেন্ড আপাতত চলবে। আর মোদি জানেন, যতদিন রাহুল গান্ধীরা বিরোধী পক্ষকে ‘নেতৃত্ব’ দেবে, ততই তাঁর লাভ। বিরোধীদের উপর থেকে ভরসার ‘ভ’ টুকুও আর থাকবে না দেশবাসীর মনে। তাই অ্যাকাউন্ট তো বাহানা মাত্র। লক্ষ্য তাঁর অনেক বড়। দাবার বোর্ড সাজিয়ে বসেছেন মোদি। গুটিগুলো সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কিন্তু এখনও সবটা তাঁর নিয়ন্ত্রণে। অঘটন ঘটানোর মতো মন্ত্রী-ঘোড়া বিরোধীদের নেই। বোড়েই শেষ আশা তাদের। আর রাজনীতির দাবাখেলায় বোড়ে কারা? আম জনতা।