পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি। ... বিশদ
সবাই ভেবেছিলেন যে বিজেপির শ্বেতপত্রের বিষয় হবে তাদের এক দশকের কার্যকালের উপর ভিত্তি করে। কিন্তু মানুষ অবাক হয়ে দেখল যে, শ্বেতপত্রটি তৈরি ২০০৪-১৪ সালে ইউপিএর মেয়াদ নিয়ে। এই শ্বেতপত্রের উদ্দেশ্যই ছিল—ইউপিএ জমানার ১০টা বছরকে শুধু কালো রঙে চিহ্নিত করে দেওয়া। তবে সেটা করতে গিয়ে ইউপিএ সরকারের সাফল্যগুলো আলোচনায় জায়গা পেয়ে গেল। অনিবার্যভাবে, চলে এল ইউপিএ এবং এনডিএর তুলনা। এই জাতীয় যেকোনও তুলনায়, কিছু মাপকাঠিতে এনডিএর চেয়ে ইউপিএ অবশ্যই শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ রেখেছে। সেজন্যই আমি এটাকে পাগলামি বলেছি, কিন্তু চতুর কুশলীদের খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।
বড় পার্থক্য
একটা সংখ্যা আলোচনার বৃত্তে চলে এসেছে, সেটা হল—স্থির মূল্যে গড় জিডিপি বৃদ্ধির হার (অ্যাভারেজ জিডিপি গ্রোথ রেট ইন কনস্ট্যান্ট প্রাইসেস)। এই মাপকাঠিতে ইউপিএ বড় সাফল্য পেয়েছিল। পুরনো ভিত্তিবর্ষ ২০০৪-০৫ অনুযায়ী, ১০ বছরে গড় জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৭.৫ শতাংশ। ২০১৫ সালে, বিজেপি সরকার ইউপিএ-এর সংখ্যা ম্লান করে দেখানোর জন্য ভিত্তিবর্ষটা পাল্টে করেছিল ২০১১-১২। তা সত্ত্বেও গড় বৃদ্ধির হার ৬.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। সেই তুলনায় এনডিএর ১০ বছরে গড় বৃদ্ধির হার হল ৫.৯ শতাংশ। তফাতটা কিন্তু ফেলনা নয়। ১০ বছর মেয়াদে, প্রতিবছর ১.৬ শতাংশের (বা ০.৮ শতাংশ) তফাত—জিডিপির আকার, মাথাপিছু আয়, পণ্য ও পরিষেবার পরিমাণ, রপ্তানির পরিমাণ/মূল্য, রাজকোষ ও রাজস্ব ঘাটতি এবং অন্যান্য মাপকাঠিতে একটা বিরাট পার্থক্য গড়ে দেয়। একটা জিনিস অন্য একটা দিকও দেখিয়ে দেয় এবং শুরু হয়ে যায় তুলনা টানার খেলা।
টেবিল দেখুন:
অনেক মাপকাঠিতে এনডিএর ফলাফল আরও খারাপ। এনডিএর ভাবমূর্তি সবচেয়ে ম্লান করে দিয়েছে এই জমানার কয়েকটি তথ্য—বিপুল পরিমাণ মোট জাতীয় ঋণ, মারাত্মক পরিমাণে পারিবারিক সঞ্চয় হ্রাস; পাইকারি হারে ব্যাঙ্কঋণ মকুব (রিটন অফ), স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাতে অতিসামান্য ব্যয় এবং কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীর সংখ্যায় বিরাট হ্রাস। এগুলোতে তাদের ভুল নীতি এবং অর্থনীতি সামলানোর ক্ষেত্রে চূড়ান্ত অব্যবস্থাই প্রকট হয়েছে। অন্যকিছু মেট্রিক বা মাপকাঠিতে অবশ্য এনডিএর পারফরম্যান্স ভালোই হয়েছে।
সাদা মিথ্যাচার
সরকারের শ্বেতপত্রটা অত্যধিক সাদা। এখানে ইউপিএ সরকারের অনেক সাফল্যের উপর কালো রং লেপে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, এনডিএ সরকারের ঐতিহাসিক ভুলগুলোর (নোট বাতিল এবং মাইক্রো ও স্মল সেক্টর ধ্বংস সমেত) উপর করে দেওয়া হয়েছে চুনকাম। তার ফলে শ্বেতপত্রটার ডাকনাম জুটেছে ‘হোয়াইট-লাই পেপার’ বা ‘শ্বেত-মিথ্যা-পত্র)। উল্লেখ করতে হবে—জন ধন (আগের ‘নির্ঝঞ্ঝাট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট’; সোজা কথায়, ন্যূনতম ডকুমেন্টের কেওয়াইসি দিয়ে জিরো ব্যালান্সের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট), আধার এবং মোবাইল বিপ্লবের ধারণা ও উৎসটা যে ইউপিএতেই ছিল, এই সত্যটা নির্মলা সীতারামনের এই শ্বেতপত্র স্বীকার করতে পারেনি।
এই সরকারের অভিযোগ অনুসারে, ইউপিএ জমানার অব্যবস্থাপনার সময়কালটা (যেমন শ্বেতপত্রের টেবিল এবং গ্রাফ থেকে দেখা যাচ্ছে) ছিল মূলত ২০০৮-১২ সাল। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে, আন্তর্জাতিক অর্থ বাজারগুলো ভেঙে পড়েছিল। সেবারের একটা আর্থিক সুনামি ধ্বংস করে দিয়েছিল প্রতিটা দেশের অর্থনীতি। সমস্ত বড় অর্থনীতিগুলো ‘কোয়ান্টিটেটিভ ইজিং’ পলিসি মেনে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়ে ব্যয়ের বহর বাড়িয়ে করেছিল চতুর্গুণ। তাতে সর্বত্র ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি ঘটেছিল। ২০০৯-এর জানুয়ারি থেকে ২০১২-র জুলাই পর্যন্ত, অর্থাৎ মুদ্রাস্ফীতি এবং রাজস্ব ঘাটতির সর্বোচ্চ সময়কালে অর্থমন্ত্রী ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। প্রণববাবু দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে যা অনুসরণ করেছিলেন, সেটা প্রচলিত প্রজ্ঞা। আর্থিক বৃদ্ধি এবং অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির দিকেই তাঁর লক্ষ্য ছিল। তবে রাজকোষ ঘাটতি এবং মুদ্রাস্ফীতির মূল্যও চোকাতে হয়েছিল তাঁকে।
পলিমিক্স হল পলিটিক্স
কংগ্রেসের কৃষ্ণপত্রটাও অবশ্য একতরফা। স্বাভাবিকভাবেই, এতে রয়েছে কৃষিক্ষেত্রের ভয়াবহ দুর্দশা, একরোখা অগ্নিমূল্য, রেকর্ড বেকারত্ব এবং ক্রোনিজম বিষয়ে কিছু কথা। অন্যান্য বক্তব্যের মধ্যে রয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার, প্রতিষ্ঠানগুলিকে ধ্বংস করা, ভারতীয় ভূখণ্ডে চীনা অনুপ্রবেশ এবং মণিপুরের কান্না। শিরোনামটা কিন্তু যথার্থ, এনডিএর উপর তৈরি একটা ব্ল্যাক পেপার বা কৃষ্ণপত্র। আর্থিক সত্যের দিকটা একেবারে পরিষ্কারই। তবু পেপার বা পত্র দুটোর উদ্দেশ্য যত না অর্থনৈতিক তার চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক। দুটি পত্রে উত্থাপিত বিষয়গুলো নিয়ে সংসদের উভয় কক্ষে ১০ বছর ধরে আলোচনা হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু তা হয়নি। কারণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির উপর বিতর্কের অনুমতি দেয়নি সরকার। বিতর্কের জন্য পত্র দুটো তাই জায়গা খুঁজে নিয়েছে নির্বাচনের ময়দান। শুধু সময়ই বলে দেবে, সেখানে এমন বিতর্ক আদৌ হবে, নাকি টাকার জোর, ধর্ম ও বিদ্বেষমূলক ভাষণ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারই ঠিক করে দেবে ভোটের ফলাফল।