যে কোনও ব্যবসায় শুভ ফল লাভ। বিশেষ কোনও ভুল বোঝাবুঝিতে পারিবারিক ক্ষেত্রে চাপ। অর্থপ্রাপ্তি হবে। ... বিশদ
মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের সাঙ্গোপাঙ্গোদিগের অন্যতম বলিয়া শ্রীরামকৃষ্ণ মুখে যে ভক্তপ্রবরের জন্মান্তর পরিচিতি সেই শুদ্ধসত্ত্ব বলরামের জন্ম হয় ১২৪৯ বঙ্গাব্দের ২১ অগ্রহায়ণ (৭ ডিসেম্বর, ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে) এক প্রসিদ্ধ ভক্ত পরিবারে। তাঁহার পূর্বপুরুষগণ সকলেই পুরুষানুক্রমে ঈশ্বরপরায়ণ এবং আদর্শ গৃহস্থ ছিলেন। বলরামের প্রপিতামহ দেবদ্বিজে ভক্তিপরায়ণ স্বনামধন্য কৃষ্ণরাম বসু দুর্ভিক্ষ-নিবারণকল্পে স্বোপার্জিত লক্ষাধিক টাকা দান করিয়াছিলেন। উত্তর কলিকাতায় কৃষ্ণরাম বসু স্ট্রিট আজও তাঁহার স্মৃতির সাক্ষ্য প্রদান করিতেছে। কৃষ্ণনগরে ১৫টি জলাশয় ও ১০টি শিবালয় প্রতিষ্ঠা, মাহেশ হইতে বল্লভপুর পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ, মাহেশের শ্রীশ্রীজগন্নাথের কাষ্ঠনির্মিত রথ—তাঁহার বহুবিধ কীর্তির নিদর্শন। বলরামবাবুর পিতামহ পরমবৈষ্ণব গুরুপ্রসাদ বসু বহু সহস্র মুদ্রা ব্যয়ে বৃন্দাবনে একটি ‘কুঞ্জ’ নির্মাণ করেন, ইহা ‘কালাবাবুর কুঞ্জ’ নামে খ্যাত। এই কুঞ্জে শ্রীমা সারদাদেবী, স্বামী ব্রহ্মানন্দ, স্বামী প্রেমানন্দ প্রমুখ অনেকে কঠোর তপস্যা করেন। গুরুপ্রসাদ বসু কর্তৃক স্বগৃহে প্রতিষ্ঠিত শ্রীশ্রীরাধাশ্যামচাঁদ জীউবিগ্রহের নামানুসারেই উত্তর কলিকাতায় একটি পল্লির নাম হয় শ্যামবাজার, ইহাও তাঁহার উজ্জ্বল কীর্তির নির্দশন। পরবর্তিকালে উক্ত বিগ্রহ উড়িষ্যার কোঠারে স্থানান্তরিত হয়। ভক্ত বলরামের পিতৃদেব রাধামোহন বসু বিষয়কর্ম হইতে দূরে থাকিয়া বৃন্দাবনে নিরন্তর ভগবচ্চিন্তায় রত থাকিতেন।
ভক্ত পরিবারে জন্মলাভ এবং পূর্বজন্মার্জিত নিজ শুভ সংস্কারের ফলে বাল্যকাল হইতেই বলরামের মন ঈশ্বরাভিমুখী হইয়াছিল। সদালোচনা সচ্চিন্তা এবং সদ্গ্রন্থপাঠে তাঁহার বহু সময় ব্যয়িত হইত।
বাবুরাম মহারাজের জ্যেষ্ঠা ভগিনী কৃষ্ণভাবিনীর সহিত বলরামবাবুর পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। এই বিবাহ হইয়াছিল যেন মণিকাঞ্চনসংযোগ। ইহা স্বামী ও স্ত্রী উভয়েরই সাধনার পথ প্রশস্ততর করিয়া দিয়াছিল। ভক্ত বলরামের উপযুক্ত সহধর্মিণী রূপে মহীয়সী কৃষ্ণভাবিনী সর্বকার্যে তাঁহার সহায়িকা হইয়াছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণদেব বলিতেন, কৃষ্ণভাবিনী শ্রীমতীর (রাধারাণীর) অষ্ট সখীর প্রধানা। বিবাহের পর বলরাম উড়িষ্যা প্রদেশের বালেশ্বর জেলার অন্তর্গত তাঁহাদের ভদ্রক মহকুমার কাছারি বাটীতে কিংবা ভদ্রক হইতে কিছুদূরে অবস্থিত কোঠার গ্রামের বাড়িতে কখনো বা পুরীতে থাকিতেন। তখন তাঁহার বিশেষ কাজ হইয়াছিল পৈতৃক বিগ্রহ শ্রীশ্রীরাধাশ্যামচাঁদের পূজা-সেবা ও ভাগবত, ভক্তমাল প্রভৃতি ভক্তিগ্রন্থ পাঠ। বিষয়কর্ম ভাল লাগিত না বলিয়া তিনি জমিদারির কাজে মন দিতে পারিতেন না।
স্বামী শিবপ্রদানন্দ সম্পাদিত ‘শ্রীরামকৃষ্ণ-ভাবতীর্থ বলরাম মন্দির’ থেকে