উকিল ও ডাক্তারদের কর্মব্যস্ততা বাড়বে। পত্নী/পতির স্বাস্থ্য আকস্মিক ভোগাতে পারে। মানসিক অস্থিরভাব। ... বিশদ
ফ্ল্যাট বুকিংয়ের সময় কত টাকা জমা করতে হবে? আর যদি বাতিল করতে হয়, তাহলেই-বা কত টাকা মাশুল গুনতে হবে? রিয়েল এস্টেটে টাকা ঢালার আগে এই দুটোই মধ্যবিত্তের প্রধান প্রশ্ন। ফ্ল্যাট নির্মাণ শুরু হওয়ার আগেই ক্রেতার কাছে মোটা অঙ্কের বুকিং মানি দাবি করা হয়। কিন্তু মন্দ পরিস্থিতিতে সেই বুকিং বাতিল করতে গিয়েও গুনতে হয় মোটা আর্থিক ‘জরিমানা’। বুকিং অ্যামাউন্ট ফেরে না কিংবা কিছু প্রোমোটার বুকিং ফি’র ২৫ শতাংশ পর্যন্ত দাবি করেন। সাধারণ মানুষকে এই চেনা ভোগান্তি থেকে রেহাই দিতেই রাজ্য সরকার এবার রেরা বিধি সংশোধনে উদ্যোগী হয়েছে। ফ্ল্যাটের বুকিং এবং ক্যানসেলেশন মোট দামের ১০ শতাংশের মধ্যে সীমিত করতে চায় নবান্ন। তাই সংশোধনী আসছে ওয়েস্ট বেঙ্গল রিয়েল এস্টেট (রেগুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) বা রেরা’র বিধিতে। এর ১৮ নম্বর রুলে ৪৫ দিনের মধ্যেই টাকা ফেরানোর কথা বলা আছে। আম জনতার স্বার্থে সংশোধিত রুলে বিষয়টি আরও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে সাফ বলা থাকছে, সর্বোচ্চ অগ্রিম নেওয়া যাবে ফ্ল্যাটের মোট দামের ১০ শতাংশ। ক্রেতা ও প্রোমোটারের মধ্যে প্রাথমিক চুক্তি হবে তারই ভিত্তিতে। এরপর ক্রেতা যদি যুক্তিযুক্ত কারণে ফ্ল্যাটের বুকিং বাতিলও করেন তবে শুধুমাত্র ওই ১০ শতাংশ টাকাই কাটা যেতে পারে, বাদবাকি টাকার পুরোটাই ক্রেতাকে ফেরাতে বাধ্য থাকবেন ডেভেলপার। বুকিং অ্যামাউন্টের অতিরিক্ত টাকা ‘ফরফিট’ করা যাবে না।
রাজ্যজুড়ে প্রোমোটারদের তুঘলকি কারবার রুখতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য সরকার বিধিতে সময়োচিত গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনকী, খেলাপি প্রোমোটারের জন্য থাকছে যথাযথ আর্থিক জরিমানারও সংস্থান। অন্যদিকে, ক্রেতা বকেয়া অর্থ মেটাতে অপারগ হল তাঁকেও একই নিয়মে বাঁধা যাবে। সংশোধিত আইনে এই নিয়মে আসছে আরও স্পষ্টতা। কিন্তু পর পর কতগুলি মাসের কিস্তি বকেয়া পড়লে ক্রেতা ‘খেলাপি’ বলে গণ্য হবেন? এই গেরোয় পড়ে তাঁর বাড়ি বা ফ্ল্যাট ক্রয়ের চুক্তি কখন বাতিল বলে বিবেচিত হবে? প্রস্তাবিত রুলে তার নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা মিলতে চলেছে। নিয়মটা এরকম হতে যাচ্ছে যে, দ্রুত বকেয়া মেটানোর জন্য প্রোমোটার প্রথমে খেলাপি ক্রেতাকে নোটিস ধরাবেন। তারপরও তিনমাস পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করবেন। কিন্তু ক্রেতা যদি তার মধ্যেও টাকা না মেটান তখন প্রোমোটার চুক্তি বাতিল করার অধিকার পাবেন। তবে সেক্ষেত্রেও সর্বাধিক ১০ শতাংশ বুকিং অ্যামাউন্টই আটকাতে পারবেন তিনি। ফ্ল্যাট ক্রয় বাবদ এর অতিরিক্ত যত টাকা ক্রেতা মিটিয়েছেন, সমস্তটাই প্রোমোটারকে ফেরাতে হবে। চুক্তি খারিজের পদক্ষেপ আইনত গ্রাহ্য হবে তবেই। আর হ্যাঁ, সেটাও ৪৫ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি সাপেক্ষ। সংশোধিত রুলের খসড়া আবাসন দপ্তর ইতিমধ্যেই যথাস্থানে পেশ করেছে। রাজ্য আইন এবং আবাসন দপ্তরের মধ্যে মতবিনিময়ও সম্পন্ন হয়েছে সম্প্রতি। সব মিলিয়ে সংশ্লিষ্ট বিলটি রাজ্য বিধানসভায় উত্থাপন এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা। কোনও সন্দেহ নেই, এই পদক্ষেপ রাজ্যের সাধারণ মানুষেরই স্বার্থে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পদক্ষেপ বাংলার মানুষকে আরও বেশি বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার সাহস জোগাবে। কমে যাবে ক্রেতা ও প্রোমোটারের মধ্যেকার চেনা বিবাদ। গৃহ সমস্যার সমাধানে একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় রচনা হিসেবেই প্রশংসা পাবে এই আন্তরিক উদ্যোগ।