উকিল ও ডাক্তারদের কর্মব্যস্ততা বাড়বে। পত্নী/পতির স্বাস্থ্য আকস্মিক ভোগাতে পারে। মানসিক অস্থিরভাব। ... বিশদ
আশঙ্কার শুরু অবশ্য নরেন্দ্র মোদি দ্বিতীয় দফায় দিল্লির কুর্সি দখল করার পর থেকেই। ২০২১-২২ অর্থবর্ষ থেকে এই খাতের মোট খরচ কমাতে শুরু করেছে কেন্দ্র। ২০২২-২৩ সালে এই খাতে খরচ করা হয়েছিল মোট বাজেটের মাত্র ১.৭৮ শতাংশ। অঙ্কটি বিগত একদশকের ভিতরে সর্বনিম্ন! সেইসময় থেকেই এই প্রকল্প চালু রাখার ব্যাপারে মোদি সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে গভীর সংশয় তৈরি হয়। তার উপর শুরু হয় এই প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে ‘সিঙ্গল ইঞ্জিন’ সরকারগুলির সঙ্গে দৃষ্টিকটু রকমের বৈষম্য। বিরোধী রাজ্য সরকারকে বিপাকে ফেলার এই ঘৃণ্য খেলার সবচেয়ে বড় শিকারের নাম পশ্চিমবঙ্গ। বাংলার জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সবক শেখাতে গিয়ে আসলে এই রাজ্যের কোটি কোটি গরিব মানুষকে ভাতে মারার ব্যবস্থা হয়েছে। বাংলায় মনরেগার টাকা বন্ধ ২০২১-এর ডিসেম্বর থেকে। ফলে পরবর্তী দু’বছরেও বাংলার গরিব মানুষকে এই প্রকল্পে কোনও কাজ দেওয়া যায়নি। তার ফলে গ্রামবাংলার জন্য পরিকল্পিত ৬২ কোটি শ্রমদিবস নষ্ট হয় সেইসময়। গরিব মানুষগুলোর সঙ্গে বঞ্চনার আর্থিক পরিমাণটাও ছিল বিশাল—২২ হাজার কোটি টাকা! তার সঙ্গে চলতি অর্থবর্ষে বঞ্চনার হিসেব যোগ করলে ক্ষতির পরিমাণটা আরও মস্ত। কেন্দ্রের দাবিমতো রাজ্য ইতিমধ্যেই সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েছে। তারপরেও জানা যাচ্ছে না, বাংলার গরিব মানুষের দাবি মেটাতে মোদি সরকার ফের কবে আন্তরিক ও সক্রিয় হবে।
অথচ গ্রামীণ অর্থনীতির দুর্দশা কমাতে ২০০৬ সালে মনমোহন সিং সরকার চালু করেছিল মনরেগা। মহাত্মা গান্ধীর নামাঙ্কিত এই প্রকল্পের প্রত্যক্ষ লক্ষ্য হল—গ্রামভারতের বেকারত্ব ও দারিদ্র্য কমানো। দাবি জানানো মাত্রই গ্রামের গরিব পরিবারকে বছরে অন্তত একশো দিনের কাজ দিতে হবে। গরিব মানুষের এই দাবিকে আইনি অধিকারে রূপান্তিত করে মনমোহন সিংয়ের সরকার। তাই এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পটি ১০০ দিনের কাজের গ্যারান্টি প্রকল্প নামেই পরিচিত। প্রকল্পটি সারা দেশে রূপায়িত হতেই তার ইতিবাচক ফল মিলেছিল বেশ দ্রুত—কমতে শুরু করেছিল বেকারত্ব ও দারিদ্র্য এবং বেড়ে চলেছিল জাতীয় গড় আয়। তবুও জনসংখ্যার নীচের দিকের ২০ শতাংশের দুর্দশা আজও বর্তমান। তাই মনরেগার পরিধি বৃদ্ধির উপরেই গুরুত্ব আরোপ করার সুপারিশ করেন অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞদের একাংশ। আর ঠিক সেইসময়ই উল্টোপথে হাঁটা শুরু করে মোদি সরকার। ২০২১-২২ অর্থবর্ষ থেকে এই খাতের মোট খরচ কমাতে শুরু করেছেন দিল্লির মাতব্বরগণ। কেন্দ্রীয় মনোভাবে বাংলা তো জ্বলছেই। তারই মধ্যে সামনে আসে নীতি আয়োগের সমীক্ষার খবর। এবার সামনে এল বেসরকারি সংস্থার রিপোর্ট। মোদি সরকার কতটা ‘ইউনিক আইডিয়া’র অধিকারী দিল্লির দরবার তার প্রমাণে মরিয়া গোড়া থেকেই। পালাক্রমে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে নেহরু-ইন্দিরা জমানার উত্তরাধিকার। এমনকী রাজীব-রাও-মনমোহন ত্রয়ীর রাষ্ট্রভাবনার উপরেও যবনিকা ফেলে দেওয়ার পালা অনুষ্ঠিত হয়ে চলেছে। আর এসব করতে গিয়েই প্রথম ও সবচেয়ে বড় কোপটি দেওয়া হচ্ছে গরিব জনগণের উপর। ভ্রান্তনীতি থেকে এই সরকার একচুলও সরেনি। উল্টে চমকের পিঠে চমক প্রদর্শনই অব্যাহত। কিন্তু এসবে জনগণের পিলেই চমকে যাচ্ছে কেবল বিমোহিত কিংবা উপকৃত হচ্ছে না কেউই। কর্মনাশা সংস্কৃতি কবে ছাড়বেন মোদিবাবু, জনগণ এটাই জানতে চায়।