উকিল ও ডাক্তারদের কর্মব্যস্ততা বাড়বে। পত্নী/পতির স্বাস্থ্য আকস্মিক ভোগাতে পারে। মানসিক অস্থিরভাব। ... বিশদ
অথচ কয়েকদিন আগেই ময়দানে বাজিবাজার পরিদর্শনে গিয়ে কলকাতার পুলিস কমিশনার মনোজ ভার্মা কালীপুজো ও দীপাবলিতে নিষিদ্ধ বাজির ‘তাণ্ডব’ বন্ধ করতে দৃঢ় পুলিসি পদক্ষেপের কথা শুনিয়ে মহানগরবাসীকে আশ্বস্ত করেছিলেন। শহরের বিভিন্ন বহুতল আবাসনের দিকেও তীক্ষ্ণ নজরদারির কথা শুনিয়েছিলেন তিনি। হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, কেউ বিধি ভাঙলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এও জানিয়েছিলেন, নিষিদ্ধ বাজি রুখতে শহর জুড়ে অভিযান চলছে। কিন্তু ঘটনা হল, ম্যাচ শুরুর আগে প্লেয়ারদের গা-ঘামিয়ে নেওয়ার মতো সন্ধ্যার দিকে কিছুটা কম হলেও পুজোর রাত যত বেড়েছে, শব্দবাজির তাণ্ডব তত লাগাম ছাড়িয়েছে। এবারেও এই শব্দবাজি ফাটানোর শীর্ষে উঠে এসেছে বহুতল আবাসনগুলির কথা। এই নির্মম তাণ্ডবের হাত থেকে রেহাই মেলেনি হাসপাতাল চত্বরও। এমনটা যে হতে পারে তার আভাস মিলছিল গত দু-তিন দিন ধরেই। সে সব দেখেও পুলিস কেন ব্যবস্থা নেয়নি সেই সঙ্গত প্রশ্নও উঠেছে। শব্দদূষণের করাল গ্রাসে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়েন হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় আক্রান্তরা। ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করেও তাঁদের রেহাই মেলেনি। শিশুদের কেউ কেউ ভয়ে কেঁপে উঠেছে, পথকুকুরদের উদভ্রান্ত হয়ে ছোটাছুটি করতেও দেখা গিয়েছে। নাগরিকদের একাংশের বাজি নিয়ে তাণ্ডবের এমন অমানবিক আচরণে পরিবেশের বিপদ বেড়েছে। এরা যেন জেনেও জানে না, বুঝেও বোঝে না। আসলে বোধবুদ্ধির অভাব! কলকাতার নাগরিকরা আর কবে সচেতন হবে, পুলিস কবে কঠোর হবে—তা বোঝা দায়।
বাজি কোথায় তৈরি হয় তা প্রায় সকলেই জানে। শহর ও শহরতলি এলাকায় আইনসিদ্ধ বাজির আড়ালে নিষিদ্ধ বাজি তৈরির ব্যবসার আঁতুড়ঘর কোথায় রয়েছে—তা পুলিস ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলির অজানা নয়। কিন্তু সেই উৎসমুখগুলিকে বাগে আনতে বছরভর তৎপরতা ও নজরদারি ঠিকমতো হয় না বলেই অভিযোগ প্রায় সর্বত্র। শুধু তাই নয়, নিষিদ্ধ বাজি বিক্রিতে রাশ টানতে হলে বৈধ কারবারিদের পাশাপাশি পাড়ায় পাড়ায় গজিয়ে ওঠা অস্থায়ী দোকানগুলিতেও সমান নজরদারি প্রয়োজন। এমন ছবি একেবারেই বিরল নয় যেখানে দেখা যায় পান-সিগারেটের দোকান, মুদির দোকান, সব্জি বিক্রেতা, এমনকী ইমিটেশন গয়না বিক্রির দোকানের আড়ালেও তাৎক্ষণিক লাভের আশায় দেদার বিক্রি হয়েছে শব্দবাজি। এসব এবারই প্রথম হয়েছে তা নয়, পুলিসের নাকের ডগায় দীর্ঘদিন ধরে এসব চলছে। সুতরাং দীপাবলির কয়েকদিন আগে অথবা পুজোর দিন কিছু গ্রেপ্তার বা বাজেয়াপ্ত করে এই ব্যাধিকে নির্মূল করা তো দূরের কথা, কমানোও যাবে কি না সন্দেহ। বরং পুলিসের এমন গয়ংগচ্ছ মনোভাব দেখে যারা নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি করে এবং যারা তা কিনে ফাটায় তারা আড়ালে তাচ্ছিল্যের সুরে বলতে পারে আসছে বছর আবার হবে।