উকিল ও ডাক্তারদের কর্মব্যস্ততা বাড়বে। পত্নী/পতির স্বাস্থ্য আকস্মিক ভোগাতে পারে। মানসিক অস্থিরভাব। ... বিশদ
উপর্যুপরি চতুর্থ এনডিএ সরকার গঠন যাতে কষ্টকল্পনায় পর্যবসিত না-হয় তার জন্য এখন থেকেই ঘুঁটি সাজাচ্ছেন কি মোদি? মোদি সরকারের সেন্সাস এবং ডিলিমিটেশন ভাবনাই রাজনৈতিক মহলের সামনে প্রশ্নটি উপস্থিত করেছে। প্রথমে হবে সেন্সাস বা জনগণনা। তার ভিত্তিতে সরকার হাত দেবে ডিলিমিটেশনে—অর্থাৎ দেশজুড়ে বিধানসভাগুলি এবং লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাসের কাজে। তারপরই নেওয়া হবে লোকসভার ভোট। যেকোনও শাসকই এই কাজটি করার ভিতরে তাঁর প্রত্যাবর্তনের পন্থাও নিশ্চিত করতে চান। মোদি-শাহরা কোনোভাবেই তার ব্যতিক্রম নন, বরং অধিক কৌশলী। তাই রাজনৈতিক মহলের অনুমান, এই ডিলিমিটেশন ভাবনা জুড়েই থাকছে গেরুয়া শিবিরের আসন বৃদ্ধির অঙ্ক। বহুচর্চিত ‘ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন’ আদৌ হবে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে ২০২৯ সালের লোকসভা ভোটে দুটি পরিবর্তন নিয়ে কোনও সংশয় নেই। ডিলিমিটেশন এবং মহিলা আসন সংরক্ষণের বাস্তবায়ন। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিশ্লেষকদের ধারণা, লোকসভায় আসন সংখ্যা বেড়ে হতে চলেছে অন্তত ৭৮৮। এই পুনর্বিন্যস্ত ও বর্ধিত আসনের ভিত্তিতেই হবে পরবর্তী লোকসভা নির্বাচন। আর সেখানেই কার্যকর হবে ২০২৩ সালে পাস হওয়া মহিলা সংরক্ষণ বিল। নরেন্দ্র মোদিরই উদ্যোগে বিপুল অর্থ খরচ করে নয়া সংসদ ভবন নির্মিত হয়েছে। বিতর্কিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ওই ভবনের উদ্বোধনও করেছেন তিনি। সংসদের অধিবেশন এখন ওই সুবৃহৎ কক্ষেই বসে। ভবিষ্যতে বর্ধিত সংখ্যক সদস্যদের কথা মাথায় রেখেই এই ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এমনকী লোকসভা-রাজ্যসভার যৌথ অধিবেশন আয়োজনেরও উপযোগী এই নবনির্মিত ভবন। এমন আয়োজন যাঁর হাতে ও নেতৃত্বে পরবর্তী লোকসভায় তিনিই সেখানে থাকতে পারবেন না, এই জিনিস মেনে নেওয়া নরেন্দ্র মোদির পক্ষে কল্পনাতীত বইকি।
তাই রণকৌশল তৈরি চলছে অত্যন্ত সুচতুরভাবে। অবশেষে নতুন বছরে, অর্থাৎ ২০২৫-এ সেন্সাসের কাজ শুরু হবে। সেন্সাসের প্রকাশিত পরিসংখ্যান হাতে নিয়ে পরের বছর গড়া হবে ডিলিমিটেশন কমিশন। একাধিক মাপকাঠি অনুযায়ী লোকসভা ও বিধানসভা আসনের সীমানা পুনবির্ন্যাস করে দেবে তারা। বর্ধিত লোকসভা আসনের ভিত্তিতেই ২০২৯ সালে হবে সাধারণ নির্বাচন। রাজনৈতিক মহলের খবর, মোদি কেবল বর্ধিত লোকসভা আসনের ভিত্তিতে ভোট করেই থেমে থাকতে চাইছেন না, তাঁর লক্ষ্য ‘ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন’ ভাবনারও বাস্তবায়ন। আর এখানেই শুরু মোদির আসল অঙ্ক। জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা থেকে বিশেষজ্ঞদের অনুমান, দক্ষিণ ভারতে লোকসভা আসন কমবে এবং বাড়বে উত্তর ও পূর্ব ভারতে। তাতে নিজেদের লাভের পাল্লা ভারীই দেখছেন হিন্দুত্ববাদীরা। কিন্তু তাতেও যে স্বস্তিতে নেই মোদিবাবুরা! কারণ চব্বিশের লোকসভা এবং পরবর্তীকালে অনুষ্ঠিত একাধিক রাজ্যে বিধানসভা ভোটের ফলাফল, হিন্দিবলয়ে দলের শক্ত ঘাঁটিতেও মোদির নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা স্পষ্ট করেছে। তাই গেরুয়া শিবিরের থিঙ্কট্যাঙ্ক আসন পুনর্বিন্যাসের ভিতরেই খুঁজছে এই দগদগে ক্ষত পূরণের মহৌষধ। তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হবে, বাংলা এবং উত্তরপ্রদেশ। এই দুই রাজ্যে আসন বাড়িয়ে, তাদের দু’ভাগে ভেঙে দেওয়ার ফর্মুলা কাজে লাগানো হলেও বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। চেষ্টা থাকবে বিজেপির পক্ষে দুর্বল আসনের পার্শ্ববর্তী মজবুত ভোটব্যাঙ্কের আসনটিকে জুড়ে দিতে। তাতে ভোটের মাধ্যমে বিজেপির আসন সংখ্যা বৃদ্ধির সুযোগ বাড়বে। আসন বিন্যাস এই অঙ্কে চললে কোনও সন্দেহ নেই তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে—কংগ্রেস, তৃণমূল, সপা, আরজেডি, জেএমএম প্রভৃতি প্রধান বিরোধী দল। সমস্ত বিরোধী দলের এই ব্যাপারে এখন থেকেই সতর্ক হওয়া দরকার। দেশের গণতন্ত্র এবং বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যকে সংহত করার স্বার্থেই এটা জরুরি।