উকিল ও ডাক্তারদের কর্মব্যস্ততা বাড়বে। পত্নী/পতির স্বাস্থ্য আকস্মিক ভোগাতে পারে। মানসিক অস্থিরভাব। ... বিশদ
এই মামলার রায় ঘোষণা না হলেও বিচারপতিরা তাঁদের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটি সংবিধানের মূল কাঠামোর অংশ এবং অপরিবর্তনীয়। সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে যে অধিকারগুলির কথা বলা আছে তাতেই পরিষ্কার যে, ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য হিসাবেই দেখা হয়েছে। আর সমাজতন্ত্র শব্দটির অর্থ হিসেবে সুযোগ ও সম্পদের সাম্যও বোঝানো হয়। অতীতে সুপ্রিম কোর্ট এমন বহু আইন ও বিধি বাতিল করে দিয়েছে যা ধর্মনিরপেক্ষতার পরিপন্থী। মামলাকারীদের উদ্দেশে একজন বিচারপতির সরাসরি প্রশ্ন ছিল, আপনারা কি চান না ভারত ধর্মনিরপেক্ষ থাক? আসলে ধর্ম ও রাষ্ট্রের সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়ে কোনও ধোঁয়াশা থাকার কারণই নেই। কারণ মূল সংবিধানের ২৫ থেকে ২৮ নম্বর ধারাতেই নাগরিকদের ধর্মাচরণের স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রের ধর্ম থেকে দূরত্ব মেনে চলার কথা স্পষ্ট করে বলা আছে। ১৯৭৬ সালের সংশোধনীতে একথাই আরও স্পষ্ট উচ্চারণে বলা হয়েছে। আসলে ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণা হল, এদেশে সকলের নিজের ধর্ম গ্রহণ ও প্রচারের সমান অধিকার রয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রের নিজস্ব কোনও ধর্ম থাকবে না। শুধু এই মামলাই নয়, কয়েক বছর আগে কেশবানন্দ ভারতী মামলায় সুপ্রিম কোর্ট তার যুগান্তকারী রায়ে বলেছিল, সংবিধানের মূল কাঠামো পরিবর্তনের অধিকার নেই সংসদের। পরে একাধিক মামলায় একই কথা শোনা গিয়েছে আদালতের মুখে। যদিও এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন দেশের বর্তমান উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকর, তাঁর বক্তব্য ছিল, সুপ্রিম কোর্টের এই যে বক্তব্য তা নিয়ে সংসদে আলোচনা হওয়া উচিত। এর পাল্টা হিসেবে কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম বলেছিলেন, সংসদ নয়, সংবিধানই সর্বোচ্চ। সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার সংবিধানের মূল নীতি বদলাতে পারে না। তবু নানা পথে সংবিধান বদলাতে চাইছে এই গেরুয়া শাসকেরা। সেই কারণেই আবার মামলা।
পরপর আদালতে ধাক্কা খেয়েও সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে মেনে নিতে পারছে না মোদিবাহিনী। হিন্দুরাষ্ট্রের প্রচার এখন আড়ালে আবডালে নয়, সোচ্চারে ঘোষিত হচ্ছে। ঘটনা হল, কয়েক মাস আগে অনুষ্ঠেয় লোকসভা ভোটে কোনওরকমে গদি বাঁচানোর পর ফের এই হিন্দুত্বকেই আঁকড়ে ধরে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে বিজেপি ও তাদের মেন্টর আরএসএস। তাদের নেতৃত্বের ধারণা হয়েছে, লোকসভা নির্বাচনে সব হিন্দুদের ভোট না মেলায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। অতএব পুরনো লাইন মেনে হিন্দুদের এককাট্টা করাই নাকি এক ও একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত। মোদি-অমিত শাহদের এই টোটকাই দিয়েছেন নাগপুরের কর্তারা। ঠিক হয়েছে, আসন্ন মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ড বিধানসভার ভোট প্রচারে হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডাকেই সামনে আনা হবে। এর থেকে কী বোঝা গেল? সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষতা, সুপ্রিম কোর্টের রায়—এসব তাঁদের কাছে গৌণ, আসল সত্য ধর্মনিরপেক্ষতার চরিত্রকে অস্বীকার করে হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া। যদিও শত চেষ্টা করেও এতদিন তা সফল হয়নি। তাই আগামী দিনে ফের স্বপ্নপূরণের চেষ্টা হবে। হয়তো শুধু সময়ের অপেক্ষা। আশঙ্কা সেখানেই।