উকিল ও ডাক্তারদের কর্মব্যস্ততা বাড়বে। পত্নী/পতির স্বাস্থ্য আকস্মিক ভোগাতে পারে। মানসিক অস্থিরভাব। ... বিশদ
কানাডার সঙ্গে ভারতের মিত্রতার সম্পর্ক ঐতিহাসিক। একে অপরের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার। দীর্ঘদিনে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নত হয়েছে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, সামরিক সহযোগিতা এবং শিক্ষা-সংস্কৃতি ক্ষেত্রে আদান-প্রদানের মাধ্যমে। বহু ভারতীয় নাগরিক সেদেশে নানা কারণে বসবাস এবং আসা-যাওয়া করেন। বিশ্বায়নের যুগে যাবতীয় দূরত্ব ও ব্যবধান কমানো যেখানে উভয়ের বাধ্যবাধকতা, তখন এই দূরত্ববৃদ্ধির প্রয়াস দুর্বোধ্য। ইতিমধ্যেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে, জাস্টিন ট্রুডোর জনপ্রিয়তা নিজ দেশে ক্রমে তলানিতে পৌঁছচ্ছে। নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় ফিরে আসা তাঁর পক্ষে হয়ে উঠছে কঠিন থেকে কঠিনতর। এতেই তিনি দিশেহারা হয়ে টার্গেট করেছেন ভারতকে। তাঁর ভরসা সেদেশে ঘাঁটি গাড়া খালিস্তানপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরাই, যারা ভারতের অখণ্ডতার সামনে অন্যতম বৃহৎ এক চ্যালেঞ্জ। ট্রুডো হয়তো ভেবেছেন, খালিস্তানপন্থীদের প্রকাশ্যে সমর্থন করে নির্বাচনে বাজিমাত করবেন। তাঁর কারবার দেখে এটাই মনে হয় যে, কূটনৈতিক শিষ্টাচারের সমস্ত পাঠ তিনি ভুলেছেন এবং ভারত-বিরোধিতায় প্রতিযোগিতায় নেমেছেন পাকিস্তানের সঙ্গে। কোনও সন্দেহ নেই যে, তাঁর এই অন্যায় ও বিস্ময়কর ভূমিকায় পাকিস্তান এবং কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা উৎসাহিত হবে।
একই সঙ্গে অনুপ্রাণিত হয়েছেন কানাডা সরকারের অন্য ভারত-বিরোধী নেতারাও। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপবিদেশমন্ত্রী ডেভিড মরিসন। কানাডা প্রশাসনের তরফে তিনি সরাসরি দায়ী করেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে! তাঁর অভিযোগ, সে-দেশে বসবাসরত খালিস্তানি নেতাদের খতম করার গোপন অভিযানে নেমেছে ভারত। ওই চক্রান্তের প্রধান কারিগর নাকি অমিত শাহ স্বয়ং! গত সপ্তাহে কানাডার নিরাপত্তা বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সামনে মরিসন বলেন, ‘হত্যা-ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে রয়েছে অমিত শাহের পরিষ্কার নির্দেশ।’ নানাবিধ এজেন্টকে দিয়ে কানাডায় এই ভয়াবহ কাণ্ড ভারত সরকারই ঘটাচ্ছে বলে ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’কে তিনিই বলেছেন। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের সরকারের ‘সেকেন্ড-ইন-কমান্ড’কে পরোক্ষে ‘সুপারি কিলার’ দেগে দেওয়ার এমন দৃষ্টান্ত বেনজির। ভারত যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েও প্রথমে তেমন পাত্তা দেয়নি। হয়তো ভেবেছিল, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব দ্রুত মিটিয়ে ফেলতে পারবে কানাডা এবং তাদের প্রশাসনেরও বোধোদয় হবে। কিন্তু ভারতের প্রতীক্ষা ও প্রত্যাশা ভুলই প্রমাণিত হয়েছে। ভারত-বিরোধিতার পারদ আরও চড়িয়ে এবার কানাডায় বাতিল করা হয় দীপাবলির সরকারি অনুষ্ঠান। এখানেই শেষ নয়, শনিবার জারি হওয়া সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক নির্দেশিকাতেও ভারতকে ‘শত্রু’ দেশের তালিকাভুক্ত করেছে ট্রুডো প্রশাসন! হুমকি ও হেনস্তার সমস্ত সীমাই ছাড়িয়েছে তারা। ভারত-কানাডা সম্পর্ক একতরফাভাবেই ধ্বংস করে চলেছেন ট্রুডো। অবশেষে শনিবার অত্যন্ত কড়া প্রতিক্রিয়াই জানিয়েছে ভারত সরকার। নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত কানাডার কূটনীতিককে শুক্রবার তলব করে তাঁর হাতে প্রতিবাদপত্র তুলে দিয়েছে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘ওই কূটনৈতিক প্রতিবাদপত্র মারফত মরিসনের ভিত্তিহীন, অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।’ ভারত একইসঙ্গে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে, ‘এখনও সময় আছে, শুধরে যাক কানাডা, নয়তো ভয়ংকর পরিণতির জন্যই তাদের তৈরি থাকতে হবে।’ কোনও একটি পশ্চিমি দেশের জন্য ভারতের তরফে এমন প্রতিক্রিয়া অভূতপূর্ব। কোনও সন্দেহ নেই, শান্তির নীতিতে অবিচল বলেই ভারত এমন প্রতিক্রিয়া জানাতে সময় নিয়েছে। ভারতের এই পদক্ষেপ ‘বিলম্বিত’ নয়, একইসঙ্গে সময়োচিত এবং সাহসী ও প্রশংসনীয়। আমাদের মর্যাদা আহত করার যেকোনও অপচেষ্টার জবাব সমস্ত শক্তিকে বারবার এই ভাষাতেই দেওয়া কর্তব্য।