সাংগঠনিক কর্মে বড় সাফল্য পেতে পারেন। উপস্থিত বুদ্ধি আর সাহসের জোরে কার্যোদ্ধার। বিদ্যায় সাফল্য। ... বিশদ
গত ৩৪ বছরের বাম আমল দেখেছেন, বয়সে প্রবীণ এমন যাঁরা আছেন তাঁরা জানেন প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে কীভাবে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছিল বাম সরকারের বড় শরিক সিপিএম। তখন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি নিয়োগেই আসল যোগ্যতা ছিল প্রার্থীর সিপিএম ঘনিষ্ঠতা। দলের সর্বক্ষণের কর্মী তো বটেই, বাম নেতাদের পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং ঘনিষ্ঠরা চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতেন। এ অভিযোগ প্রায়শই উঠত। সিপিএম মনেপ্রাণে বিশ্বাস করত সরকারে থাকা সুনিশ্চিত করতে হলে সবক্ষেত্রে দলীয় লোক থাকা জরুরি। তাই অভিযোগ, যোগ্যদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজেদের অনুগতদের দিয়ে শূন্যপদ পূরণের অলিখিত জাল বিস্তার করেছিলেন আলিমুদ্দিনের কর্তারা। এর সামান্য ব্যতিক্রম হলে ফল কী হতে পারে তার উদাহরণ ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে সন্তোষ ভট্টাচার্যের নিয়োগের ঘটনা। সেইসময়ে রাজ্যপাল কর্তৃক নিযুক্ত উপাচার্যকে (প্রয়াত) হেনস্তা করতে সিপিএম সেদিন কোনও পথই বাকি রাখেনি। কিন্তু এমন কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া বাকি সবই ছিল সরকারি ব্যবস্থাপনার আড়ালে চোরাপথে দলীয় ক্যাডার নিয়োগের মসৃণ কারবার।
এই সর্বগ্রাসী দুর্নীতির একটা নমুনামাত্র ‘ক্যাগের’ রিপোর্ট। ২০০৯ সালে রাজ্যকে বিভিন্ন রিজিয়নে ভাগ করে শিক্ষক নিয়োগ করত স্কুল সার্ভিস কমিশন। ক্যাগের রিপোর্ট বলছে, সহকারী শিক্ষক পদে সেবার পূর্ব রিজিয়নে ৬ হাজার ৪৯৩ জন, উত্তর রিজিয়নে ১১ হাজার ২১ জন, দক্ষিণ রিজিয়নে ৮ হাজার ৩৪ জন এবং পশ্চিম রিজিয়নে ১২ হাজার ৫৫৩ জন প্রার্থীর নম্বরে গরমিল করা হয়েছিল। গরমিল ধরা পড়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রিজিয়নে ৮ হাজার ৫৪৬ জন প্রার্থীর নম্বরেও। দুর্নীতির গন্ধ পাওয়া গিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও। এছাড়াও বাম আমলে তৈরি মেধা তালিকার ভিত্তিতে ২০১২ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ করেছিল তৃণমূল সরকার। কিন্তু তার নাকি কোনও নথিই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না! প্রায় সাড়ে তিন দশকের বাম জমানায় শিক্ষক নিয়োগের দুটি ক্ষেত্রে এই দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে। ঘটনা হল, প্রকৃত তদন্তের সুযোগ থাকলে যে এমন ভূরি ভূরি উদাহরণ উঠে আসতে পারে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। খবরে প্রকাশ, ক্যাগের রিপোর্টের প্রেক্ষিতে কোনও তদন্তই করেনি তৃণমূল সরকার। কেন করেনি তার উত্তরও নেই। একইভাবে এই রিপোর্টের কথা জানা থাকলেও কেন জেলবন্দি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী এতদিন নীরব ছিলেন তার উত্তরও স্পষ্ট নয়। ইদানীং শিক্ষায় দুর্নীতির বিষয়টি রাজ্যজুড়ে হইচই ফেলে দেওয়ায় বাম আমলে ‘চিরকুট’ দিয়ে চাকরির অভিযোগের কথা তুলছেন তৃণমূল নেতারা। ওই পথে কতজনের চাকরি হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তা খতিয়ে দেখছেন শিক্ষামন্ত্রী। সিপিএম এই নিয়ে তদন্ত করে দেখার জন্য চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, আদালত গ্রাহ্য প্রমাণ পেতে হলে যে ধরনের নথির প্রয়োজন, এত বছর বাদে তার হদিশ পাওয়া যাবে তো? নাকি সরকারি নিয়মের জাঁতাকলেই সেসব নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। উত্তর আপাতত জানা নেই। কিন্তু শুধু অভিযোগে যে চিঁড়ে ভিজবে না, তা বলাই বাহুল্য।