সাংগঠনিক কর্মে বড় সাফল্য পেতে পারেন। উপস্থিত বুদ্ধি আর সাহসের জোরে কার্যোদ্ধার। বিদ্যায় সাফল্য। ... বিশদ
ভারত সেটা পারেনি। অন্যদিকে, অনেক বেশি সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, মালয়েশিয়া তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এই প্রসঙ্গে চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার নাম দুটি নিতে হয় সবার আগে। ২০০৬ সালের আয়কে চীন দ্বিগুণ করেছে ২০১০ সালে, অর্থাৎ মাত্র চারবছরে। এই কীর্তি স্পর্শ করতে দক্ষিণ কোরিয়া সময় নিয়েছে পাঁচবছর (১৯৮৩-১৯৮৮)। অন্যদিকে, সব থেকেও ভারতের এই ‘নেই’ দশা কেন? এর বড় কারণ গণতন্ত্রকে গ্রহণ করেও আমরা তাকে শক্তিশালী করতে পারিনি। স্বচ্ছতা হল শক্তিশালী গণতন্ত্রের প্রধান লক্ষণ। স্বচ্ছতা কাম্য রাজনীতি, নির্বাচন, আইনসভা, প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা, গণমাধ্যম প্রভৃতি সব ক্ষেত্রে। কিন্তু সবকিছুর ভিত্তি প্রত্যক্ষ এবং/অথবা পরোক্ষভাবে রাজনীতি। আর দুর্ভাগ্য সেখানেই, যে যখন ক্ষমতায় বসার সুযোগ পায় সবকিছুর উপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে মরিয়া হয়ে ওঠে সে। পরিণামে স্বৈরতন্ত্র চেপে বসে ভারতের ভাগ্যে। গত কয়েক দশকে কী কেন্দ্রে, কী রাজ্যে—খুব কম সরকারই গণতন্ত্রের উপর আস্থা রেখেছে। স্বৈরতন্ত্র দুর্নীতির সবচেয়ে বড় আখড়া—কে না জানে! রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নই এই কুচক্রের পিতামাতা। দুর্নীতির কারণেই ভারতে সবধরনের বৈষম্য জাঁকিয়ে রয়েছে। যে-সমাজে যত দুর্নীতি, তার সঙ্গে সার্বিক উন্নয়নের দূরত্বও তত বেশি। ভারত এজন্যই এখনও নিম্ন মধ্য আয়ের স্তরে হামাগুড়ি দিচ্ছে। ভুক্তভোগী নাগরিকদেরও এটা নিত্যদিনের উপলব্ধি।
তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই মাত্রই বিশেষ সমীহ ও শ্রদ্ধা আকর্ষণ করে। সেই সূত্রে সিআইডি, সিবিআই প্রভৃতি তদন্তকারী সংস্থা এবং আদালত আম জনতার কাছে বরাবরের ‘হিরো’। ওই তালিকায় নয়া সংযোজন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। বস্তুত ইডির গণপরিচিতি দিয়েছে মোদিযুগ। আগে দুষ্টু লোকদের পাকড়াও করে কঠিন সাজার ব্যবস্থা করত সিবিআই। ওই কেন্দ্রীয় সংস্থার দোসর হিসেবেই ইডির নামডাক হয়েছে ইদানীং। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ইডির কাছে সিবিআই’কে ন্যূনই দেখাচ্ছে! কে ছোট, কে বড়—এখানে বিচার্য নয়, বিচার্য কেন্দ্রীয় সংস্থা দুটি বাস্তবে যা করছে। নরেন্দ্র মোদির শাসনকালে তারা বহু রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেপ্তার করে নিজ নিজ হেফাজতে নিয়ে বারবার জেরা করেছে। তাঁদের সুদীর্ঘ শ্রীঘরবাসেরও ব্যবস্থা হয়েছে। ধৃতদের তালিকায় রয়েছেন অনেক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী কিংবা অন্য ধরনের রাঘববোয়াল। কিন্তু তাঁরা কারা? মূলত বিরোধী রাজনীতির কারবারি অথবা তাঁদের ঘনিষ্ঠজন। অবিজেপি সরকার যেসব রাজ্যে চলছে সেখান থেকেই তাঁদের পাকড়াও করা হচ্ছে। কখন? বিশেষ বিশেষ নির্বাচনের মুখে। শাস্তির কী ব্যবস্থা হয়েছে? সাফল্যের হার অত্যন্ত লজ্জাজনক। বছরের পর বছর মামলা চললেও বেশিরভাগ অভিযোগ কেন্দ্রীয় এজেন্সি প্রমাণ করতে পারছে না। সোজা কথায়, সিবিআই এবং ইডির ব্যর্থতায় নিষ্পত্তি হচ্ছে না অধিকাংশ মামলার। তাদের ব্যর্থতার কারণও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। সেটা বিরোধীরা অভিযোগ আকারে বারবার সামনেও এনেছে—বিশেষ রাজনৈতিক মতলবে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি ব্যবহৃত হচ্ছে। মোদি সরকারের একচক্ষু নীতির পাশে এই অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। নিরপেক্ষ প্রশাসনের অপব্যবহারের এই যে কালচার তৈরি হয়েছে, এতে সংস্থাগুলির গরিমা এবং গুরুত্ব নষ্ট হচ্ছে; বাড়ছে উল্টে শাসকের দুর্নীতি বৃদ্ধির অবকাশ।