কাবুলের পতনের পর আফগানিস্তানের ‘দাসত্বমুক্তি’-র তত্ত্ব বাজারে ছেড়েছেন ইমরান খান। নাম না করে তিনি যে আমেরিকা এবং ভারতকেই কটাক্ষ করেছেন তা স্পষ্ট হয়েছে সারা দুনিয়ার কাছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শুধু মৌখিক বিবৃতি দিয়েই ক্ষান্ত হননি, রাষ্ট্র হিসেবে দেশটি তালিবানের পাশে কতটা রয়েছে সেটাও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে একাধিক উপায়ে। একদিকে, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামর জাভেদ বাজওয়া সম্প্রতি নাম না করে ভারতের মুণ্ডপাত করেছেন এবং তালিবানের পক্ষ নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। অন্যদিকে, কাবুলে তালিবান সরকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে অতি তৎপরতা দেখিয়েছেন সে-দেশের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই প্রধান জেনারেল ফৈয়াজ হামিদ স্বয়ং। অতীতের থেকে অনেক বেশি বেপরোয়াও দেখা গিয়েছে পাকিস্তানকে এবার। এই নিন্দনীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার আগে ইমরান প্রশাসন কোনও রাখঢাক করেনি, পুরোটাই করেছে খুল্লাম খুল্লা, যা স্বাভাবিক নয়। অনুমান করতে কষ্ট হয় না যে, চীনকে নতুন মুরুব্বি পাওয়ার কারণেই পাকিস্তানের এই হঠকারী মূর্তিধারণ। ইমরান খান পরিষ্কার করে দিয়েছেন, কাবুলে যে সরকার বসেছে সেটা পাকিস্তানের হাতের পুতুল। সরকারটি পিছন থেকে নিয়ন্ত্রণ করবেন আইএসআই এবং পাক সেনাকর্তারা, যাঁদের একমাত্র বল-ভরসা চীনের বর্তমান বিধাতা জি জিন পিং। আমরা ভুলব না, সাম্প্রতিক কয়েক দশকের ভিতরে তাঁর আমলেই ভারত-চীন সম্পর্কের সবচেয়ে বেশি অবনতি হয়েছে। ভুটান সীমান্তে অশান্তি করেছে লাল ফৌজ। নেপালের সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিষিয়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে দেশটি। চীন একাধিকবার উত্তপ্ত করে তুলেছে অরুণাচল এবং লাদাখ সীমান্ত। চারদশকের স্থিতাবস্থা জলাঞ্জলি দিয়ে লাদাখ সীমান্তে ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষেও লিপ্ত হয়েছে চীনা সেনারা। বাণিজ্য এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্ত সৃষ্টির অছিলায় ভারত-বিরোধী একাধিক ধরনের রাষ্ট্রিক জোট গঠনেরও সন্দেহজনক পদক্ষেপ করে চলেছে চীন সরকার। আন্তর্জাতিক আইন, রীতিনীতির মাথা খেয়ে দক্ষিণ চীন সাগরে এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলির উপর দাদাগিরি চালাতে চাইছে জিন পিং প্রশাসন। রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদ পাওয়ার ন্যায্য অধিকারী ভারত। জনসংখ্যা এবং আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বের যে যোগ্যতা বিচার্য তাতে ভারত সবসময় এগিয়ে রয়েছে। এই প্রশ্নে আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ব্রাজিল সহ বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ দেশ ভারতকে সমর্থন করে। কিন্তু চীনের অন্যায় আপত্তির কারণেই নিরাপত্তা পরিষদে ভারত বঞ্চিত।
এতে আঞ্চলিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হলেও ভয়ানক উল্লসিত আর একটি দেশ, তার নাম পাকিস্তান। দেশটি বরাবর নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গে বিশেষ তৃপ্তি অনুভব করে। পাকিস্তান খোয়াব দেখছে, এহেন চীনকে পাশে রেখে তারা কাবুলে ছায়া সরকার চালাবে। তালিবানের নামে ওই সরকার আসলে পাকিস্তানের কথা বলবে, পাকিস্তানের হয়ে কাজ করবে, পাকিস্তানের ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটবে আফগানিস্তান সরকারের সমস্ত কাজকর্মে। কী সেই স্বপ্ন? কাশ্মীরে জঙ্গি নষ্টামি বৃদ্ধি করা—তালিবানের সাহায্য নিয়ে কাশ্মীরে কাতারে কাতারে জঙ্গি এবং বেআইনি বিদেশি অস্ত্রশস্ত্র চালান করা। ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে দু-দুবার নাক-কান কাটা গিয়েছে পাকিস্তানের। তারপরও মহম্মদ আলি জিন্নার দেশের কাণ্ডজ্ঞান হয়নি। বলিহারি, এখনও তারা ভারত থেকে কাশ্মীর ছিনিয়ে নেওয়ার খোয়াব দেখে যাচ্ছে! রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ সভায় ভাষণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে-ভাষায় এই বিষয়ে ওই দুই দেশকে (ইঙ্গিতে) সতর্ক করে দিয়েছেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে। আশা করা যায়, আন্তর্জাতিক মহলও এই ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে সহমত হবে, ভারতেরই পাশে থাকবে। কারণ, সন্ত্রাসবাদের চরিত্র আগুনের মতো, সবাইকে নিয়েই ধ্বংসাত্মক রূপ ধারণ করে। পাকিস্তানের মাটিতে জন্ম-লালিত-পালিত কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদীরা সুদূর আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানিতেও ভয়ানক নাশকতা ঘটিয়েছে। ভারত, আফগানিস্তান, মিশর, তুরস্ক, ইরাক, ইরান, সিরিয়াতেও তাদের কালো হাত সক্রিয় কয়েক দশক যাবৎ। পাকিস্তানের ধৃষ্টতার একটাই জবাব হতে পারে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উদ্ধার করা। ওই ভূখণ্ড একান্তভাবে শুধুই ভারতের। দেশেরই কিছু মানুষকে এখনও একটা হিংস্র নেকড়ের মুখে ফেলে রাখা অন্যায়। তাঁদের স্বাধীন সার্বভৌম ভারতীয় গণতন্ত্রের স্বাদ ফিরিয়ে দেওয়াই কর্তব্য। আমরা নিশ্চিত, ভারতের ওই মানুষগুলি কয়েক প্রজন্ম ধরে অধীর আগ্রহে তারই প্রতীক্ষায় রয়েছেন।