কর্মে সাফল্য ও সুনাম বৃদ্ধি। উকিল, মৃৎশিল্পীদের শুভ। সংক্রমণ থেকে শারীরিক অসুস্থতা হতে পারে। আর্থিক ... বিশদ
অসমে নাগরিক পঞ্জি নিয়ে বিতর্ক পঞ্চাশ বছর আগে থেকে। সে রাজ্যে সত্তরের দশকে অসমের ছাত্র সংগঠন ‘আসু’র নেতৃত্বে ‘বাঙালি খেদাও’ আন্দোলনও শুরু হয়। সেই ভয়ঙ্কর রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের কাছে মাথা নত করতে হয় তদানীন্তন কেন্দ্রীয় সরকারকে। তারা ‘বিদেশি’ বিতাড়নের জন্য এনআরসির দাবি মেনে নেয়। আসুর হাত ধরে জঙ্গি আন্দোলন তখন বাঙালি বিতাড়নের দাবি করলেও হিন্দু-মুসলমান ধর্মীয় মেরুকরণের প্রশ্ন ওঠেনি। বিজেপি সেটাই চেয়ে এনআরসির সলতেতে আগুন দিয়েছে। কিন্তু খসড়ায় পরিষ্কার, বাদ পড়ার তালিকায় হিন্দু-মুসলমান, অসমিয়া-বাঙালি কেউ ছাড় পায়নি। আসলে ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে এনআরসি ‘আপডেট’ করার কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর তালিকার একটি অংশ প্রকাশিত হয়। ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই খসড়া প্রকাশিত হয়। এরপর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয় ২০১৯-এর ৩১ আগস্ট। এনআরসি তালিকায় নাম না-থাকা মানে, দশকের পর দশক ধরে বসবাসকারী মানুষকে এক কলমের খোঁচায় ‘বিদেশি’ বলে রাষ্ট্রহীন করে দেওয়া। বিজেপি চায় প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে ‘বিতাড়িত’ বা অন্য কারণে আসা হিন্দু শরণার্থীদের এদেশে নাগরিকত্ব দিতে। বিনিময়ে নানা বজ্র আঁটুনি তৈরি করে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে ‘দেশছাড়া’ করতে। বিজেপির বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ নতুন নয়। কিন্তু সেটা করতে গিয়েই দেখা দিয়েছে বিপত্তি।
বাদ পড়ছে বিপুল সংখ্যক হিন্দু বাঙালি। যাঁরা প্রতিনিয়ত অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। অসমে পদ্ম ফোটাতে গত নির্বাচনেও বিজেপি এনআরসি তাস খেলে বাজিমাত করেছে। এখন তাই ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণে বিজেপির চাপ বাড়ল আর অনিশ্চিত হয়ে পড়ল দু’লক্ষ বাঙালির নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়টি। বিজেপির মতলববাজির কারণেই নিজভূমে পরবাসী হওয়ার যন্ত্রণায় বিদ্ধ লক্ষ লক্ষ অসমবাসী। বিজেপির হাত শক্ত করার ফল কী মারাত্মক হতে পারে তা তাঁরা এখন সম্ভবত বুঝতে পারছেন।
কিন্তু বঙ্গবাসী বিজেপিওয়ালাদের ধাপ্পাবাজিতে বিশ্বাস করেনি। তাঁরা অসমবাসীর মতো অনিশ্চয়তায় দিন কাটাতে চাননি। আগেভাগেই কড়া আপত্তির কথা জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি করতে দেবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সাফ কথা—রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড সহ বিভিন্ন পরিচয়পত্র নিয়ে যাঁরা যুগযুগ ধরে বাংলায় বসবাস করছেন তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়ার কোনও চক্রান্ত মানা হবে না। তাই এরাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে এনআরসি তাস খেলেও বাজিমাত করতে পারেনি বিজেপি। ফলে বাংলায় এনআরসি ইস্যু নিয়ে এখন মুখে কুলুপ এঁটেছেন মোদি-শাহরা। কিন্তু প্রতিবেশী অসম রাজ্যের বিষয়টি বাংলার মানুষকেও এখন ভাবাচ্ছে। এই মুহূর্তে মোদি সরকারের উচিত, কোনওরকম ধোঁয়াশা না-রেখে অসমের খসড়া তালিকার বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করা। যাতে মানুষের মনের যাবতীয় সংশয় দূর হয়ে যায়। তাঁরা নিশ্চিন্তবোধ করতে পারেন।