কর্মে সাফল্য ও সুনাম বৃদ্ধি। উকিল, মৃৎশিল্পীদের শুভ। সংক্রমণ থেকে শারীরিক অসুস্থতা হতে পারে। আর্থিক ... বিশদ
কী ঘটেছিল হাতরাসে? দলিত পরিবারের ১৯ বছরের এক তরুণীকে গণধর্ষণ করার পর নৃশংসভাবে অত্যাচার করা হয়, পরিণামে দিন কয়েক বাদে মৃত্যুই হয় তাঁর। অভিযুক্তদের সকলেই উচ্চবর্ণের লোক। ভারতীয় সমাজ রাতারাতি অপরাধমুক্ত হয়ে যাবে কেউ প্রত্যাশা করে না। কিন্তু, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর পুলিস, সরকারি প্রশাসন এবং শাসক দল যে অপকর্মটি করেছিল সেটাই বিস্ময়কর। উপযুক্ত ধারায় অভিযোগটাই প্রথমে নিতে চায়নি পুলিস। মিডিয়ার চাপে পড়ে নিতে বাধ্য হয়েও তদন্ত চলে গয়ংগচ্ছভাবে। ঘটনাটি আদৌ ধর্ষণের তো? সরকারি কর্তাদের একটি গোষ্ঠী প্রথমেই এমন সংশয় প্রকাশ করে, গণধর্ষগণের অপরাধ মেনে নেওয়া তো অনেক পরের ব্যাপার। অভিযোগটি গ্রহণের পর, সংশ্লিষ্ট কর্তারা জঘন্যতম এই অপরাধের সঙ্গে জাতপাতের বৈষম্যের সত্যটি নস্যাৎ করতে চায়। আরও ভয়ানক ব্যাপার এই যে, নির্যাতিতার দেহ রাতের অন্ধকারে দাহ করে দিয়েছিল পুলিস-প্রশাসন। অতঃপর, নির্যাতিতার গ্রাম ও পরিবারে যাওয়ার ব্যাপারে জারি হয় এক অলিখিত নিষেধাজ্ঞা। উদ্দেশ্য, প্রভাবশালী অভিযুক্তদের অপরাধ লঘু করে দিয়ে বিচারপর্ব শুরু করা। তাহলে তারা নামমাত্র শাস্তির মুখে পড়বে, এমনকী ঠিকঠাক কলকাঠি নাড়তে পারলে দুষ্কৃতীরা বেকসুর খালাসও হয়ে যেতে পারে! হাতরাস কোনও বিছিন্ন ঘটনা নয়। পুলিস-রাজনীতিক-অপরাধী হরিহর আত্মা হওয়ায় সমস্ত ধরনের অপরাধ বেড়েছে হাওয়ার গতিতে। হাতরাস কাণ্ডের কয়েক বছর আগে এক দলিত মহিলার সাক্ষাৎকার নেন গবেষক জয়শ্রী মঙ্গুভাই। শীর্ণা সেই মহিলার বক্তব্য ছিল, ‘আমরা নিয়মিত হিংসার শিকার। কারণ একইসঙ্গে গরিব, নিচুজাত এবং নারী। সবাই আমাদের খারাপ নজরে দেখে। এমন একজনও নেই যে আমাদের সাহায্য করে কিংবা আমাদের পক্ষ নিয়ে কথা বলে। সবরকমে অক্ষম বলে আমরা অনেক বেশি যৌনহিংসারও শিকার।’ হাতরাসের ঘটনার পর পুরনো অভিযোগ অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে যে, ভারতের আট কোটি দলিত মহিলা যৌননির্যাতনের শিকার। ভারতের নারীসংখ্যার ১৬ শতাংশের এই অসহায় পরিস্থিতি বিশ্বের বিস্ময়। কোনও সংশয় নেই যে, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ‘অবদান’ যে রাজ্যটির তার নাম উত্তরপ্রদেশ।
আইনের শাসন এখানকার সাধারণ মানুষের জন্য কতটুকু বরাদ্দ তা এবার প্রমাণিত হল অন্যভাবে। আদালতের অনুমতি নিয়ে সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ থেকে সিআইডির একটি টিম একজনকে গ্রেপ্তার করতে গিয়েছিল আলিগড়। উদ্দিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খুনের হুমকি দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। শুধু হুমকি দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি যোগেশ বার্ষ্ণেয়, বাংলার জনপ্রিয়তম জননেত্রীর মাথার দামও ঘোষণা করেছিল সে! বোলপুর আদালত তার নামে আগেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। যোগীর পুলিস তা কার্যকর করেনি। এরপর সিআইডির আবেদনের ভিত্তিতে যোগেশের নামে হুলিয়াও জারি করে আদালত। সেই আদেশ বলেই অভিযুক্তকে ধরতে যায় সিআইডি। এব্যাপারে বাংলার সরকার নিয়মমাফিক যোগী সরকারের সাহায্যও চায়। তবু, অভিযুক্তকে ধরতে গিয়ে স্থানীয় পুলিসের সামনেই আক্রান্ত হল সিআইডি টিম। এনিয়ে তিনবার খালি হাতে এবং হেনস্তার শিকার হয়ে ফিরতে হল তাদের! বুঝতে অসুবিধা হয় না, অভিযুক্তের মূল শক্তি তার রাজনৈতিক পরিচয়। সে প্রধানমন্ত্রী এবং যোগীর দলের উত্তরপ্রদেশের এক যুবনেতা। অতএব সাত খুন মাফ! আইনশৃঙ্খলার এই বেনজির রেজাল্ট কার্ড হাতে নিয়েই পরবর্তী বিধানসভার নির্বাচন লড়তে চলেছেন বিজেপি এবং তাদের ‘সম্পদ’ যোগী আদিত্যনাথ। তাতে জয়-পরাজয় কার হবে সে বিচার ভবিষ্যতের। কিন্তু এই মুহূর্তে যোগী সরকারের সঙ্কীর্ণ নীতি এবং অপদার্থতায় রাজ্যে-রাজ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক যেভাবে জলাঞ্জলি গেল তা সাংবিধানিক ব্যবস্থার উপর এক বিরাট আঘাত।