কর্মে সাফল্য ও সুনাম বৃদ্ধি। উকিল, মৃৎশিল্পীদের শুভ। সংক্রমণ থেকে শারীরিক অসুস্থতা হতে পারে। আর্থিক ... বিশদ
দেশজুড়ে মানুষ বুঝতে চাইছিলেন, এই নজিরবিহীন সাফল্যের আসল কারিগর কে? নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহের মধ্যে কাকে দেওয়া হবে ‘নয়া চাণক্য’ খেতাব? কিন্তু কৌশলটি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ধীরে ধীরে পরিষ্কার হল যে কুশলীদের ভাবনার গোড়ায় অনেক গলদ ছিল। মনে রাখা দরকার ছিল যে বিজেপির একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস নয়। কিছু দল আদৌ বন্ধু ছিল না, কৌশলগত কারণে অল্প সময়ের জন্য বন্ধুত্বের ভান করেছিল। তেলেজলে যেমন মিশ খায় না, ঠিক তেমনি বিজেপির সঙ্গে তাদেরও বন্ধুত্ব টেকেনি। আজকের বন্ধুটি কালই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে। যেমন অকালি, শিবসেনা, এলজেপি, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা প্রভৃতি হয়েছে। ফলে পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড-সহ কয়েকটি রাজ্যে এজন্য মোদি-শাহের পার্টিকে রামধাক্কা খেতে হয়েছে। সত্য প্রমাণিত হল মহাভারতের অমৃতকথা—‘রাজধর্মে ভ্রাতৃধর্ম বন্ধুধর্ম নাই।’ এর বাইরে রয়েছে আরও কিছু দল, যারা সোজাসাপ্টা প্রতিদ্বন্দ্বী, যাদের গেরুয়া শিবিরে শামিল করার চেষ্টার অধিক পণ্ডশ্রম কিছু নেই। যেমন তৃণমূল কংগ্রেস এবং কিছু বামপন্থী দল। এবারের ভোটের মাধ্যমে বাংলা দখলের চেষ্টায় মোদিরা ‘ডবল ইঞ্জিন’ তত্ত্ব খাড়া করেছিলেন। এজন্য গোটা বিজেপি পার্টি এবং কেন্দ্রীয় সরকার যাকে বলে জান লড়িয়ে দিয়েছিল। মমতা-মোদি সেই দ্বৈরথে মোদি বস্তুত গোহারা হয়েছেন। কোনও সংশয় নেই, এরপর থেকে সারা দেশে বিজেপি পার্টি এবং মোদির রাজনৈতিক উচ্চতা অনেকখানি খাটো হয়ে গিয়েছে।
এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে বিজেপির অভ্যন্তরেও। অন্দরের ঐক্য দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যেমন পশ্চিমবঙ্গে একের পর এক বিধায়ক তৃণমূলে নাম লেখাচ্ছেন। রাজনৈতিক সূত্রের খবর—এমএলএ, এমপি মিলিয়ে আরও অনেকে বিজেপি ছাড়ার জন্য পা বাড়িয়ে বয়েছেন—তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবুজসঙ্কেত পাওয়ার জন্য প্রহর গুনছেন। এমনকী, যেসব রাজ্যে ক্ষমতা খাতাকলমে ধরে রেখেছে বিজেপি, সেসব জায়গাতেও নিত্যনতুন অস্বস্তির ছবি প্রকট হচ্ছে। যেমন মোদি-শাহের রাজ্য গুজরাতের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী গদিচ্যুত হয়েছেন সদ্য। শনিবার আচমকা ইস্তফা দিয়েছেন বিজয় রুপানি। আগামী বছরই সেখানে বিধানসভার ভোট। তার আগেই এই কাণ্ড! গত বিধানসভা ভোটের আগে, ২০১৬-য়, ইস্তফা দিয়েছিলেন মোদির উত্তরসূরি মুখ্যমন্ত্রী আনন্দীবেন প্যাটেল। পাঁচবছরের ব্যবধানে সেই নাটকেরই যেন পুনরাভিনয় দেখল দেশ। এটাই প্রথম নয়, গত ছ’মাসে এই নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপির পাঁচ পাঁচজন মুখ্যমন্ত্রীর গদি টলে যেতে দেখলাম আমরা। জল্পনার অবকাশ নেই যে, এর এক ও একমাত্র কারণ অন্তর্দ্বন্দ্ব। আর এই ঝামেলার নেপথ্যে রাজ্য এবং দেশশাসনে ব্যর্থতার দায় স্বীকার নিয়ে চাপানউতোর। করোনা মোকাবিলার ব্যথর্তা, অনুন্নয়ন এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়েই নেতৃত্ব দলের অভ্যন্তরে সবচেয়ে বেশি প্রশ্নবাণে জর্জরিত হচ্ছেন। অশ্বমেধের ঘোড়াকে চুপি চুপি ঘরে ফিরিয়ে এনে নিজের গদি রক্ষায় আপাতত মনোযোগী হওয়া উচিত মোদির। মুহুর্মুহু হাততালি কুড়নোর ভ্রান্ত পথ ছেড়ে জনস্বার্থ রক্ষার প্রতিশ্রুতি পালন করলেই তাঁর গদি আপাতত রক্ষা পেতে পারে। তার ভিত্তিতে মানুষ ঠিক করবে, চব্বিশের খেলায় তাঁকে কয়টি গোল হজম করতে হবে অথবা কয়টি গোল তিনি দেবেন।