কর্মে সাফল্য ও সুনাম বৃদ্ধি। উকিল, মৃৎশিল্পীদের শুভ। সংক্রমণ থেকে শারীরিক অসুস্থতা হতে পারে। আর্থিক ... বিশদ
আধুনিক অর্থনীতিও ঋণকে অচ্ছুৎ করেনি। তবে এই দুই চরম পথের কোনওটিকেই আদর্শ মনে করেনি। আধুনিক অর্থনীতি মধ্যপন্থায় আস্থা রেখেছে। ভালো থাকার জন্য ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্র সবাইকেই কিছু ঋণ করতে হবে। তবে ঋণ গ্রহণ করতে হবে সেই পরিমাণ, যা যথাসময়ে সুদে-আসলে পরিশোধ করা সম্ভব। সেটা ঋণগ্রহীতা এবং ঋণদাতা দু’জনের পক্ষেই ভালো। গ্রহীতার পক্ষে ভালো এই যে, তাঁর সুনাম বজায় থাকবে, তিনি টেনশনমুক্ত হবেন এবং ভবিষ্যৎ প্রয়োজনেও ঋণ পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন। অন্যদিকে, ঋণদাতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ভালো এই যে, তাঁর আয়পত্তর ঠিক থাকবে, সুদসহ ফেরত পাওয়া অর্থ তিনি নতুন কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ হিসেবে দিতে পারবেন। পরিকল্পনা মাফিক প্রতিষ্ঠানের পরিকাঠামো বাড়াতে পারবেন। ইত্যাদি। কিন্তু সামর্থ্যের অতিরিক্ত ঋণগ্রহণ সবসময়ই অস্বাস্থ্যকর। সময়ে পরিশোধ করতে না-পারলে ঋণ চক্রবৃদ্ধি সুদের হারে বেড়ে যেতে থাকে। ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান থেকে রাষ্ট্র (ভারতের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার) সবার পক্ষেই তা সমস্যার ব্যাপার। ঋণগ্রহণ এবং সময় ও শর্তমতো তা পরিশোধ করা হল একটি আর্ট। এর মধ্যে ঋণগ্রহীতার দক্ষতার সাক্ষ্য থাকে। প্রমাণ হয় যে গ্রহীতা লোন ম্যানেজমেন্টে এক্সপার্ট। সেই হিসেবে দেখা যাচ্ছে, রাজ্য এবং সরকার হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ যথেষ্ট উন্নত অবস্থানে রয়েছে। কারণ জাতীয় গড়ের নীচে তো বটেই, দেশের বড় রাজ্যগুলির মধ্যে বাংলার কৃষক পরিবারের ঋণভার সবচেয়ে কম। বরং ‘ডবল ইঞ্জিন’ বা বিজেপিশাসিত কিছু রাজ্যের চাষি পরিবারগুলির ঋণভার ভয়ানক বেশি। তারা রীতিমতো ঋণের জ্বালায় জর্জরিত। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সংক্রান্ত রিপোর্ট বলছে, সারা দেশে কৃষক পরিবারগুলির গড় ঋণ ৭৪ হাজার টাকার বেশি। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে অঙ্কটি ২৬,৪৫২ টাকা মাত্র। অন্যদিকে, মোদি-অমিত শাহের গুজরাতের কৃষক পরিবারের ঋণভারের পরিমাণ ৫৬,৫৬৮ টাকা। ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভের এই সংক্রান্ত সাম্প্রতিক রিপোর্টে প্রকাশ: হরিয়ানা (১,৮২,৯২২ টাকা), হিমাচল প্রদেশ (৮৫,৮২৫ টাকা), কর্ণাটক (১,২৬,২৪০ টাকা), মধ্যপ্রদেশ (৭৪,৪২০ টাকা), উত্তরপ্রদেশ (৫১,১০৭ টাকা) এবং উত্তরাখণ্ডের (৪৮,৩৩৮ টাকা) কৃষক পরিবারের গড়পড়তা ঋণভারের অঙ্ক যথেষ্ট বেশি। বলা বাহুল্য, এই রাজ্যগুলির সবক’টিই বিজেপিশাসিত।
সোজা বাংলায় বলা যায়, প্রধানমন্ত্রীর সাধের ডবল ইঞ্জিন চালিত রাজ্যগুলির কৃষকরাই সবচেয়ে বেকায়দায় ও অসুখী। পরিষ্কার হয়ে যায়, প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধির কার্যকারিতা সারা দেশে এখনও অব্দি নগণ্য। কৃষক আন্দোলনের উপর দমনপীড়নের নীতিতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে অন্নদাতাদের প্রতি মোদি সরকারের প্রকৃত মনোভাবটা কী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কৃষিনীতির শ্রেষ্ঠত্বই প্রমাণিত হয়েছে বাংলাজুড়ে একের পর এক কৃষকদরদি কর্মসূচির আন্তরিক রূপায়ণের মধ্য দিয়ে। মোদি সরকারের উচিত, কৃষক সমাজের প্রতি একটু সদয় হওয়া। করোনাকালে অর্থনীতির বেশিরভাগ ক্ষেত্র যখন মুখ থুবড়ে পড়েছিল তখন একমাত্র বুক চিতিয়ে ছিল কৃষি। ভারতের মতো বিশাল অর্থনীতিকে কৃষি একা কুম্ভের মতোই রক্ষা করে গিয়েছে। অন্তত এই কৃতজ্ঞতাবোধ থেকেই কৃষি এবং কৃষকের প্রতি আন্তরিক হতে হবে সমস্ত সরকারকে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গৃহীত নীতিতে তার সাক্ষ্য স্পষ্ট হলেও বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপে তা দুঃখজনকভাবে অনুপস্থিত।