কর্মে সাফল্য ও সুনাম বৃদ্ধি। উকিল, মৃৎশিল্পীদের শুভ। সংক্রমণ থেকে শারীরিক অসুস্থতা হতে পারে। আর্থিক ... বিশদ
সরকারি-বেসরকারি তথ্য, বিভিন্ন সময়ের পরিসংখ্যান ও ঘটনা প্রবাহ জানান দিচ্ছে, নিরাপত্তা প্রশ্নে রাজধানী বরাবরই ডাহা ফেল করে এসেছে। রাজধানী বলেই দিল্লিতে ভিভিআইপিদের সমাগম সবচেয়ে বেশি। সেখানেই রয়েছে নর্থ ব্লক, সাউথ ব্লকের মতো কেন্দ্রীয় সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই অফিস বাড়ি। এই শহরেই অবস্থিত সংসদ ভবন, সুপ্রিম কোর্ট, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সাংসদদের বাসস্থান, বিদেশি দূতাবাস এবং আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। চৌম্বকে এমন এক ভিভিআইপি শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যে বজ্রআঁটুনি থাকবে তা বলাই বাহুল্য। খাতায় কলমে তা আছেও। কিন্তু এই শহরের একদিন প্রতিদিনের জীবনযাত্রা অন্য কথা বলছে। বেশি আগের ঘটনা নয়, বছর কয়েক আগেই এখানে গণতন্ত্রের পীঠস্থান সংসদভবনে প্রায় ঢুকে পড়েছিল জঙ্গিরা। আবার সরকার বিরোধী আন্দোলনের জেরে ২০২০ সালে দিল্লি দাঙ্গায় প্রাণ হারান ৫০ জনেরও বেশি মানুষ। দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে পুলিস সক্রিয় ছিল না বলে অভিযোগও ওঠে। দাঙ্গা পীড়িতদের সাহায্যের আবেদনে সাড়া দেয়নি শাহের পুলিস—এমন অভিযোগ শোনা গিয়েছিল তখন। এজন্য আদালতে তীব্র ভর্ৎসনার মুখেও পড়ে দিল্লি পুলিস। আবার শিশু ও নারী নির্যাতনের লজ্জাজনক ঘটনায় এই শহর দেশের যে কোনও রাজ্যকে পিছনে ফেলে দিতে পারে। দিল্লির নির্ভয়াকাণ্ডের স্মৃতি এখনও দগদগে ঘায়ের মতো সেঁটে রয়েছে ভারতবাসীর বুকে। গত জুলাই মাসেই দিল্লির আদালত চত্বরেও এক দুষ্কৃতী গুলি চালিয়ে চম্পট দেয়। এবারে পুলিসের নাকের ডগায় ঘটল রোহিণী আদালতের ঘটনা।
এজলাসে পুলিসের সঙ্গে গুলি বিনিময়ে তিন গ্যাংস্টারের মৃত্যুর পর আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ছবিটা নগ্ন হয়ে পড়েছে। নিয়ম মেনে আদালত চত্বরে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকার কথা। অথচ ঘটনা বলে দিচ্ছে সেই বজ্রআঁটুনিতে ফস্কা গেরো ছিল। আর সেই রন্ধ্রপথেই শরীরী পরীক্ষা (বডি স্ক্যানিং) ছাড়াই অকেজো মেটাল ডিটেকটরের ফাঁক গলে আততায়ীরা পৌঁছে যেতে পেরেছে এজলাসে। এতে বোঝা যাচ্ছে আদালত চত্বরে সেখানকার আইনজীবীরা কতটা নিরাপত্তাহীন! সাদা জামা আর কালো প্যান্ট পরা থাকলেই নাকি আইনজীবী ভেবে জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করা হয় না। সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে দুই ভয়ঙ্কর দুষ্কৃতী। তাদের কাছে পিস্তল থাকা সত্ত্বেও কোনও ধাতব চোখ তার সন্ধান পায়নি। দিল্লির পুলিস কমিশনার রাকেশ আস্থানা নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ লোক বলেই পরিচিত। বিরোধীদের অভিযোগ, মোদি শাহের আস্থা অর্জনে তিনি যতটা সক্রিয় থাকেন, শহরের নিরাপত্তা রক্ষার কাজে তিনি ততটাই উদাসীন। রোহিণীর ঘটনার পর এই পুলিস কমিশনার রুটিন তদন্তের কথা বলেছেন। যদিও শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি এ ঘটনার পর আদালত চত্বরের নিরাপত্তা নিয়ে পুলিসের সঙ্গে কথা বলতে বলেছেন দিল্লি হাইকোর্টকে। দিল্লির পুলিস কমিশনার অবশ্য দুই গ্যাংস্টারকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিসের প্রশংসাও করেছেন। এই ঘটনার ক্ষেত্রে কোথাও কোনও ত্রুটি আছে কি না তা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু আদালতের মতো একটি নিরাপদ স্থানে কী করে এমন নিরাপত্তাহীনতার ঘটনা ঘটল তা নিয়ে নীরব তিনি! অথচ পুলিসের কাছে নাকি এমন আশঙ্কার খবর আগেই ছিল। তার পরও এমন ঘটনা ঘটায় চরম গাফিলতিরই নজির রাখল দিল্লি পুলিস। ব্যর্থতার দায় তাদেরই। অদ্ভুত ব্যাপার হল নিরাপত্তায় এত বড় গাফিলতির পরও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিংবা বিদেশ সফররত প্রধানমন্ত্রী এই নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন! তাই কয়েকদিন পর এই ঘটনা ধামাচাপা পড়লে রাজধানীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে আবারও কোনও বড়সড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে না তা হলফ করে বলা যায় না। আশঙ্কা কিন্তু থেকেই গেল।