প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-প্রণয়ে আগ্রহ বাড়বে। তবে তা বাস্তবায়িত হওয়াতে সমস্যা আছে। লৌহ ও ... বিশদ
অন্যদিকে, পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালির প্রতিবাদ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের রূপ নিল। মানবিক কারণে বাঙালি যোদ্ধাদের পাশে ভারত দাঁড়াল পূর্ণ শক্তি নিয়ে। পরিণামে পূর্ববঙ্গের দখল হারাল পাকিস্তান। জন্ম নিল স্বাধীন সার্বভৌম ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। অনেকে ভাবল, হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান নির্বিশেষে পূর্ববঙ্গের বাঙালির দুঃখের দিনের অবসান হল। কিন্তু বিধি বাম। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করল পাকপন্থী মৌলবাদীরা। ফের বাংলাদেশ তার ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র হারাল। দ্রুত সংবিধান বদলে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ ইসলাম চাপিয়ে দেওয়া হল। বাঙালি হিন্দুকে বুঝিয়ে দেওয়া হল, ধর্মীয় কারণে তুমি সমান নয়, এদেশ তোমার কাছে স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি হলেও নয়। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ বাঙালি হিন্দুর সামনে একটা ভয়ের নোটিস ঝুলিয়ে রেখে দিল। তাই বিপুল অর্থ খরচ করে সীমান্তে কাঁটাতার দিয়েও বাঙালি হিন্দুর ভারতে প্রবেশ আজও পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকারের অভিযোগ, অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়েরও বহু মানুষ এই দীর্ঘ সময়ে ভারতে এসেছে। তাদের আসার কারণ অর্থনৈতিক কিংবা অন্যকিছু। ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের মধ্যে যারা ভারতে এসেছে তাদের নিয়ে কোনও সমস্যা নেই (অবশ্য এটা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা পরিবারকেই তার উপযুক্ত প্রমাণ দিতে হবে)। কিন্তু তার পরে আসা ব্যক্তি বা পরিবারকে ভারত সরকার অনেক আগেই ‘অনুপ্রবেশকারী’ ঘোষণা করেছে। এই অনুপ্রবেশকারীদের বিতাড়নের রাজনীতি পূর্ব এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যেগুলিতে একটি লোভনীয় ইস্যু। ভোট-রাজনীতি ভীষণভাবে আবর্তিত হয় অনুপ্রবেশকে কেন্দ্র করে। কোনও দল বিতাড়নের পক্ষে থাকে, কোনও দল থাকে তাদের ভারতে রেখে দেওয়ার পক্ষে। এই রাজনীতি সংসদ কক্ষকেও কাঁপিয়ে দিয়েছে একাধিকবার। এটা চেনা ছবি। কিন্তু অনুপ্রবেশ রাজনীতিকে সত্যিকার ঝাঁকুনি দিয়েছে বিজেপি—বিভাজন ঘটিয়ে। তাদের চোখে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে যারা অত্যাচারিত হয়ে ভারতে চলে আসতে বাধ্য হয়েছে তারা ‘শরণার্থী’।
শরণার্থীদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য মোদি সরকার নতুন আইন (সিএএ) তৈরি করেছে। কিন্তু ওইসব দেশ থেকে এর বাইরে আর যারা এসেছে তারা এই সরকারের বিচারে ‘অনুপ্রবেশকারী’। জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) তৈরি করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মোদি সরকার। সরকারে সাফ ঘোষণা, এনআরসিতে অনুপ্রবেশকারীদের কোনও জায়গা হবে না। এনআরসি কথাটির সঙ্গে দেশবাসী বিশেষভাবে পরিচিত হয় ২০১৮ সালে। অসমে প্রথম খসড়া তালিকা প্রকাশের পর। সেখানে বসবাসকারী বাঙালিদের মধ্যে ৪০ লক্ষের নাম তাতে ছিল না! এতে একদিকে যেমন সারা ভারতে আলোড়ন পড়ে যায়, অন্যদিকে প্রতিবেশী বাংলাদেশেও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ২০১৯-এর আগস্টে প্রকাশিত ফাইনাল লিস্টেও অসমের ১৯ লক্ষ বাঙালির নাম ছিল না, যাদের মধ্যে প্রায় ১২ লক্ষ হিন্দু। এনআরসি-বিরোধী আন্দোলন দিল্লি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। করোনা মহামারীর কারণে ইস্যুটি দশমাস শীতঘুমেই চলে গিয়েছিল। সম্প্রতি ফের উস্কে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। উপলক্ষ পশ্চিমবঙ্গ, অসমসহ পাঁচটি রাজ্যের ভোট। কিন্তু বিজেপির এনআরসি জুজুতে বুধবার জল ঢেলে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন—ভোটার লিস্টে নাম থাকলেই ভোট দেওয়া যাবে, এনআরসিতে নাম আছে কী নেই তা বিচার্য হবে না। আইনপ্রণয়কারীরা যাদের ভোটে নির্বাচিত হবেন, তাদেইর নাগরিকত্ব নিয়ে সংশয় রাখার অবকাশ কোথায়? ভাবতে হবে মোদি সরকারকে। সবার ভারত। সবার শান্তিতে বসবাসের উপরেই নির্ভর করছে ‘আত্মনির্ভর’ ভারত নির্মাণের বাস্তবতা।