প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-প্রণয়ে আগ্রহ বাড়বে। তবে তা বাস্তবায়িত হওয়াতে সমস্যা আছে। লৌহ ও ... বিশদ
ভারতের সবচেয়ে বড় সম্পদ হল তার উন্নত মেধার কোটি কোটি মানুষ আর বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ। কিন্তু এজন্য সরকারি স্তরে সদিচ্ছা এবং অবদান যতটা থাকা দরকার ততটা কিন্তু নেই। তাই ভারতের বহু বিরলপ্রায় মেধা উন্নত দেশগুলিতে চলে যাচ্ছে। আমেরিকা, ব্রিটেনসহ ইউরোপের দেশগুলি, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান প্রভৃতি দেশে প্রতি বছর যেসব কৃতী মানুষ পুরস্কৃত হন তাঁদের একটি বড় অংশ ভারত বংশোদ্ভূত। বিজ্ঞানসহ শিক্ষার নানা বিষয়ে গবেষণার সুযোগ পেয়ে তাঁরা ভারত ছেড়ে চলে গিয়েছেন। এই ‘ব্রেন ড্রেন’ কোনওভাবেই ভারতের পক্ষে গৌরবের নয়। ভারতের ভিতরে উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণার উপযুক্ত পরিকাঠামো নির্মাণ করা গেলেই এই অবিরাম ‘গ্রেট লস’ ঠেকানো যেত। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে সেই চেষ্টা সামান্যই হয়েছে। গত কয়েক বছরে রিসার্চ ও গবেষণার সুযোগ কিছু বেড়েছে। প্রতি বছরই বাড়ছে গবেষণাপত্র প্রকাশের সংখ্যা। এনিয়ে সরকারগুলি গর্ব করে থাকে। সেটি অন্যায্য নয়। কিন্তু একটি সত্য সরকার চেপে যায় যে, এই প্রশ্নে উন্নত দেশগুলির তুলনায় ভারত অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। আমেরিকা, চীন, জার্মানি, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জাপান, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশের অগ্রগতির হারের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের দৈন্য অনেক বেশি প্রকট হয়।
প্রতি ১০ লক্ষ জনসংখ্যায় ভারতে নানা ক্ষেত্রে গবেষকের সংখ্যা মাত্র ১৪০ জন। সেখানে সংখ্যাটি আমেরিকায় ৪,৬৫১ জন। তার একটি বড় কারণ অর্থনৈতিক। আমেরিকা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণায় ভারতের প্রায় ৭৫ গুণ বেশি অর্থ ব্যয় করে থাকে! এমনকী নিকটতম বৃহৎ প্রতিবেশী চীনেও এই ক্ষেত্রে ব্যয়ের পরিমাণ ভারতের চতুর্গুণ। গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্স অনুসারে ২০২০ সালে ভারত চার ধাপ এগিয়ে ৪৮তম পজিশন পেয়েছে। টপ ফিফটির মধ্যে প্রবেশ নিঃসন্দেহে একটি গর্বের বিষয়। ভাবতে হবে, আমাদের গবেষকদের কৃতিত্ব কতখানি। নিধিরাম সর্দারের দশাতেও তাঁরা দেশকে নিরন্তর এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এই অবস্থায় সরকারের আরও বেশি ‘ইনভলভমেন্ট’ কাম্য। আরও বেশি সরকারি বরাদ্দ জরুরি। কিন্তু বুধবার মন্ত্রক যে পঞ্চম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির খসড়া নীতি প্রকাশ করেছে, সেটি দেশবাসীর এই প্রত্যাশা পূরণের অন্তরায় বলেই মনে করছেন গবেষক ও অধ্যাপকদের একাংশ। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় কেন্দ্রীয় বরাদ্দের বিষয়টি তাতে স্পষ্ট নয়। তাতে স্পষ্ট যেটা তা হল, খরচের দায় রাজ্য সরকারগুলি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রের ঘাড়ে বেশি করে চালান করার ইঙ্গিত, যা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। সঙ্কীর্ণ রাজনীতিতে ওস্তাদি অনেক হয়েছে। সব দলই কমবেশি করে চলেছে। তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে দেশের। নানা ক্ষেত্রে কুফল ভুগছি আমরা সবাই। এবার তাতে ইতি টানার দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন নরেন্দ্র মোদি। গালভরা নীতি ঘোষণায় বাস্তবে কোনও লাভ হবে না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণায় ভারতকে বিশ্বসেরা করে তোলার মতো করে নেতৃত্ব দিন। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দে দরাজ হোন। অন্যথায় ভারতের আর্থিক বিকাশের স্বপ্নটিও অধরা রয়ে যাবে।