প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-প্রণয়ে আগ্রহ বাড়বে। তবে তা বাস্তবায়িত হওয়াতে সমস্যা আছে। লৌহ ও ... বিশদ
আজকের পৃথিবী স্পষ্টত দু’টি ভাগে বিভক্ত। গণতান্ত্রিক আদর্শে পরিচালিত রাষ্ট্র আর একনায়কের অধীন রাষ্ট্র। সরকারিভাবে ঘোষিত গণতান্ত্রিক দেশের সংখ্যা অনেক। কিন্তু প্রকৃত গণতান্ত্রিক দেশ ক’টি? এই নিয়ে যখন বিতর্ক বাধে তখন আমরা তুলনামূলক বিশ্লেষণে যাই। সবার আগে আমেরিকার নামটি আসে। কারণ মার্কিন মুলুকটাই ‘পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী গণতন্ত্র’ হিসেবে প্রশংসিত। তাদের গণতন্ত্রের অনুশীলনের বয়স ২৩১ বছর। গণতন্ত্র নিয়ে তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সারা পৃথিবীর মুক্তিকামী মানুষকে উজ্জীবিত করেছে। পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারত। লোকসংখ্যার বিচারে। ৯০ কোটির বেশি ভোটার। এমন একটি দেশের গণতন্ত্রকে ছাপিয়েই সমীহ আদায় করে এসেছে আমেরিকা বহুকাল যাবৎ। তার কারণ আমেরিকার ‘কোয়ালিটি অফ ডেমোক্রেসি’ ভারতের চেয়ে অনেক ভালো। বরং ভারতের গণতন্ত্রের উপর যখনই ছোট বড় আঘাত এসেছে বলে মনে হয়েছে, আমরা নিজেদের শুধরে নিতে চেয়েছি দৃষ্টান্ত হিসেবে আমেরিকাকে সামনে রেখে। পরিতাপের বিষয়, বুধবার সেই আমেরিকা দেখাল ক্ষমতার দ্বন্দ্ব কতখানি কুৎসিত হতে পারে! প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়ে গিয়েছে গত নভেম্বরে। পপুলার ও ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট মিলিয়ে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প পরাজিত হয়েছেন। জয়ী হয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। কিন্তু ক্ষমতাসীন ট্রাম্প এই রায় মানতে রাজি ছিলেন না। ভোটে জালিয়াতি হয়েছে, তাঁকে ষড়যন্ত্র করে হারানো হয়েছে—এমন অবান্তর অভিযোগ তুলে তিনি এই রায় খারিজের দাবিতে সরব ছিলেন। সমর্থকদের তাতিয়ে যাচ্ছিলেন ভোটের বিরূপ ফল জানার মুহূর্ত থেকেই।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের আনুষ্ঠানিক অভিষেকের বাকি সপ্তাহ দুই। তার আগে বুধবার বসেছিল কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন—আনুষ্ঠানিকভাবে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের বৈধতা স্বীকারসহ বাইডেনকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ‘কনফার্ম’ করার জন্য। সেইসময় ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকরা ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে হামলে পড়ে। তারা দেওয়াল বেয়ে উঠে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। গায়ের জোর ফলিয়েছে। ভিতরে ঢুকে সদস্যদের ভয় দেখিয়েছে। আইনরক্ষকদের কাজে বাধা দিয়েছে। ট্রাম্প-ভক্তদের রায়টে প্রচুর সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে। কংগ্রেসের কর্মসূচি পণ্ড করার চেষ্টা হয়েছে। এমনকী চারজনের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন অনেকে। সব মিলিয়ে যে-কাণ্ড ঘটেছে তা আমেরিকার ইতিহাসে বিরল এক দৃষ্টান্ত। এর দায় প্রেসিডেন্ড ট্রাম্প কোনওভাবেই অস্বীকার করতে পারেন না। তাঁর এই সীমাহীন ক্ষমতার লোভ দেশে দেশে নিন্দিত হোক। এই ঘটনায় শুধু আমেরিকার মুখ পুড়ল না, গুরুতরভাবে আহত হল সারা পৃথিবীর গণতন্ত্র। এরপর বিশ্বজুড়ে একনায়করা ঘৃণ্য ‘ট্রাম্পইজম’কেই গণতন্ত্রের মুখ বলে প্রচার করতে চাইবে। সুখের কথা এই যে ভারতসহ গণতন্ত্রপ্রেমী দেশগুলি এই ঘটনাকে দ্রুত ধিক্কার জানিয়েছে। তীব্র নিন্দা করেছে ট্রাম্পকে। এমনকী ট্রাম্প আস্থা হারিয়েছেন নিজের পার্টি রিপাবলিকানের সদস্যদের কাছেও। অদূর ভবিষ্যতে শক্তিশালী বাইডেন প্রশাসনের প্রধান কাজ হোক যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন সংস্কার, যাতে আগামিদিনে আর কোনও ট্রাম্প এতটা কদর্য হওয়ার দুঃসাহস না-দেখান। মার্কিন সংবিধান মতে, ট্রাম্পকে ‘অযোগ্য’ ঘোষণাসহ এখনই ক্ষমতার থেকে বহু যোজন দূরে সরিয়ে উচিত। সারা পৃথিবীর গণতন্ত্রকে আশ্বস্ত করার জন্য এটি জরুরি।