ব্যবসা সূত্রে উপার্জন বৃদ্ধি। বিদ্যায় মানসিক চঞ্চলতা বাধার কারণ হতে পারে। গুরুজনদের শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন ... বিশদ
দেখা যাচ্ছে, স্কুল সার্ভিস কমিশন বা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ যেসব ক্ষেত্রে নিয়োগের আগে বিস্তারিত মেধাতালিকা প্রকাশ না করছে, সেগুলিতে সমস্যা কম হচ্ছে। আবার মেধাতালিকা প্রকাশ করলেই শুরু হচ্ছে অভিযোগের বন্যা। ফলে গোটা প্রক্রিয়াই বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে আর বিস্তর বিলম্বিত হচ্ছে। গোটা প্রক্রিয়া স্বচ্ছ থাকবে, এই দাবি করে একাদশ রিজিওনাল লেভেল সিলেকশন টেস্ট (আরএলএসটি)-এ কম্বাইন্ড মেরিট লিস্ট প্রকাশ করেছিলেন তদানীন্তন চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মণ্ডল। আলাদা আলাদা ক্যাটিগরিতে একাধিক তালিকাও প্রকাশ করা হয়। কিন্তু তা নিয়ে তৈরি হয় নতুন সঙ্কট। একজন প্রার্থী হয়তো যে-কোনও একটি ক্যাটিগরিতে সুযোগ পেয়েছেন, তিনিও চাকরির দাবি জানিয়ে বসেন। শুধু দাবি জানানো নয়, রীতিমতো আন্দোলন শুরু হয়। মাসের পর মাস এসএসসির সদর কার্যালয়ের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ চলে।
সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তীতে এসএসসি আর সেই ঝুঁকি নেয়নি। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ প্রথম থেকেই এসব নিয়ে সতর্ক থাকত। তারা নিয়োগ সম্পন্ন হওয়ার আগে সাধারণের জন্য তালিকা খুলে দিত না। তাই প্রথমিকে বিপুল সংখ্যক নিয়োগ নিয়ে যত অভিযোগ, মামলা হওয়ার কথা ছিল, সেই তুলনায় অনেক কম হয়েছে। এসএসসিও মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগের স্টেট লেভেল সিলেকশন টেস্ট (এসএলএসটি)-এ তালিকা প্রকাশের ধার মাড়ায়নি। যে প্রার্থী ইন্টারভিউ বা লিখিত পরীক্ষায় সুযোগ পেয়েছেন, তিনিই নিজের রোল নম্বর ওয়েবসাইটে দিয়ে তা দেখতে পেয়েছেন। আর যিনি পাননি, তিনিও সেটা সেভাবেই জেনেছেন। তিনি ছাড়া, কে ডাক পেলেন আর কেই-বা ডাক পাননি, তা প্রার্থীরা দেখতে পাননি। নিয়োগের ক্ষেত্রেও তাই। ফলে, অন্যান্য ঝামেলা হলেও নিয়োগের দুর্নীতি নিয়ে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বা প্রধান শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ অনেকটাই কম ছিল।
প্রক্রিয়াগুলি কিছুটা নির্বিঘ্নে চললেও স্বচ্ছতার অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন ছিলই। বিভিন্ন মহলে অভিযোগ উঠছিল, নিয়োগে দুর্নীতি হচ্ছে। দুর্নীতি না হোক, অনিয়ম তো হচ্ছেই। শেষ পর্যন্ত উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগের ক্ষেত্রে আদালতের রায়ে নিয়োগের আগে মেধা তালিকা প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছে এসএসসি। শুধু মেধা তালিকা প্রকাশই নয়, ইন্টারভিউ, লিখিত পরীক্ষা, অ্যাকাডেমিক স্কোর, প্রফেশনাল স্কোর, ইন্টারভিউয়ে প্রাপ্ত নম্বর সবই তুলে দিতে হয়েছে। আর এ দেখেই ভূরি ভূরি অভিযোগ আসছে। ১৪,৩০০ যেখানে শূন্যপদ, সেখানে অভিযোগই এসেছে ছ’-সাত হাজার। এসএসসি-কে এখন সেগুলি নিষ্পত্তি করেই নিয়োগ শুরু করতে হবে। ফলে, প্রক্রিয়াটা অনেকটাই বিলম্বিত হবে, তা নিশ্চিত।
এবারে একটা প্রশ্ন উঠছে, তাহলে উপায়টা কী? যে শিক্ষকরা দেশ তথা সমাজের ভিত গড়বেন, তাঁদের নিয়োগে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা থাকা জরুরি। আবার, যদি মেধাতালিকা প্রকাশ করলেই হাজারো অভিযোগ, মামলা আর আন্দোলন শুরু হয়, তাহলেও সেটা কর্মসংস্থানের পক্ষে খুবই নেতিবাচক। সরকারকেও মাঝামাঝি একটা বিকল্পের কথা ভাবতে হবে, যাতে স্বচ্ছতাও বজায় থাকে আবার প্রক্রিয়াটা দীর্ঘসূত্রী না-হয়। এর জন্য নিয়োগবিধিতে প্রয়োজনীয় বদল আনতে হলেও সরকার তাই আনুক। এটাই কাম্য।