ব্যবসা সূত্রে উপার্জন বৃদ্ধি। বিদ্যায় মানসিক চঞ্চলতা বাধার কারণ হতে পারে। গুরুজনদের শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন ... বিশদ
পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশে বিবি আসিফা ডেন্টাল কলেজের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী ছিলেন ২৫ বছরে নিমরিতা। গত ১৬ সেপ্টেম্বর কলেজ সংলগ্ন হস্টেল থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। নিমরিতার গলায় দড়ির ফাঁস লাগানো ছিল। সিন্ধ প্রদেশ পুলিস তাঁর দেহ ময়নাতদন্তে পাঠায়। তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানিয়ে দেওয়া হয়, ঘটনাটি ‘আত্মহত্যা’র। কিন্তু মৃত্যুর এই তত্ত্বকে কোনওভাবেই মেনে নিতে চাননি নিমরিতার পরিবার। তাঁদের দাবি নিমরিতাকে খুন করা হয়েছে। এ নিয়ে তুমুল হইচই শুরু হয় সিন্ধ প্রদেশে। নিমরিতার মৃত্যুর সঠিক তদন্তের দাবি তোলেন সংখ্যালঘু হিন্দুরা। বিক্ষোভের আঁচ লাগে গোটা পাকিস্তানেই।
নিমরিতার পরিবারও যথাযথ তদন্তের দাবিতে অনড় থাকে। তাঁর এক দাদা বিশালও চিকিৎসক। তিনি করাচির একটি হাসপাতালে কর্মরত। বিশালেরও দাবি ছিল, নিমরীতার গলায় দড়ির দাগ যেভাবে লক্ষ্য করা গিয়েছে তা আত্মহত্যার তত্ত্বকে সমর্থন করে না। তাঁর বোনকে খুনই করা হয়েছে। এই দাবি তুলে সিন্ধ হাইকোর্টের দ্বারস্থও হয় নিমরিতার পরিবার। গত ১৮ সেপ্টেম্বর নিমরিতার মৃত্যুতে বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। সেই মতো নতুন করে তাঁর মৃতদেহ ময়ানতদন্ত হয়।
গতকাল ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেন চাঁদকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ওমেন মেডিকো-লিগ্যাল অফিসার ডাঃ অমৃতা। এদিন পাকিস্তানের ‘নিউজ ইন্টারন্যাশনাল’ সেই রিপোর্ট উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, নিমরিতাকে প্রথমে ধর্ষণ করা হয়। পরে তাঁকে খুন করা হয়েছে। শ্বাসরুদ্ধ হয়েই তিনি মারা যান বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ, ধর্ষণকারী প্রমাণ লোপাট করতেই নিমরিতার গলায় ফাঁস লাগিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করেছিল বলে স্পষ্ট ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে ওই রিপোর্টে। শুধু তাই নয়, ধর্ষণেরও প্রমাণ মিলেছে নিমরিতার ডিএনএ টেস্টে। পুরুষের ডিএনএ’র কিছু নমুনার উপস্থিতি মিলেছে ওই পরীক্ষায়। পাশাপাশি নিমরিতার পোশাক পরীক্ষাতেও উঠে এসেছে ধর্ষণের তত্ত্ব।
অথচ, আগের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে নিমরিতার মৃত্যুকে নিছক ‘আত্মহত্যা’র ঘটনা বলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল বলে অভিযোগ। পাকিস্তানের নামজাদা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এসএমবিবিএমইউ’র উপাচার্য আনীলা আত্তাউর রহমানও দাবি করেছিলেন, নিমরিতা আত্মহত্যাই করেছেন। আদালতের পর্যবেক্ষণে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর করাচির স্বাস্থ্য দপ্তরের মেডক্যাল সংক্রান্ত আইনি বিশেষজ্ঞরা পূর্বে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, নিমরিতার মৃত্যুর তদন্ত সঠিক পথে এগয়নি। তাঁর গলায় দড়ির দাগ দেখে তদন্তকারীদের সন্দেহ হওয়া উচিত ছিল, নিমরিতাকে খুন করা হতে পারে। তা ছাড়া নিমরিতার উচ্চতা মাত্র পাঁচ ফুট। হস্টেলের যে ঘর থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয়েছে, সেই ঘরের উচ্চতা ১৫ ফুট। ফলে নিমরিতার পক্ষে সিলিং ফ্যানে ফাঁস লাগানো একেবারের অসম্ভব। এই সব দিকগুলি খতিয়ে দেখার ব্যাপারে তদন্তকারীদের আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।