ব্যবসা সূত্রে উপার্জন বৃদ্ধি। বিদ্যায় মানসিক চঞ্চলতা বাধার কারণ হতে পারে। গুরুজনদের শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন ... বিশদ
দুর্গাপুজো, লক্ষ্মী, কালীপুজো ও জগদ্ধাত্রী পুজো বঙ্গজীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। একইসঙ্গে মিশ্র সংস্কৃতির মিলমিশে বেশ কয়েক বছর ধরেই পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে ছট পুজোও ধুমধাম সহকারে এখানে হয়। দেখা যাচ্ছে, এইসব পুজোকে কেন্দ্র করে যুগের পর যুগ ধরে আমরা সংস্কারবশত জলাশয়-নদীকে নির্বিচারে দূষিত করে গিয়েছি। চেতনা যখন ফিরেছে, তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও এখনও আমরা দীর্ঘলালিত সংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে দূষণ করেই চলেছি। প্রতিমা বিসর্জনের সঙ্গে পুজো-বর্জ্য জলে ফেলার এই অভ্যাস বদলের সময় এসে গিয়েছে। আর এটা নিয়েই সম্প্রতি রাজনীতির জলঘোলা হয়ে চলেছে। একটা চেষ্টা চলছে যাতে মমতার সরকার হেয় প্রতিপন্ন হয়। ইদানীং বিসর্জন ও পুজো সংক্রান্ত বিষয় নিয়েও কিছু বিতর্ক ঘনীভূত হয়েছে। যাতে ইন্ধন জোগাচ্ছে রাজনীতি। ছটপুজোর জন্য প্রয়োজন জলাশয় বা নদীতীর। এটাই রীতি। কিন্তু, দেখা যায় সামান্য অজ্ঞতা বা সংস্কারাচ্ছন্নতার কারণে পুজো পরবর্তী সময়ে জলে পড়ে থাকে অগুনতি বর্জ্য। আর সে কারণেই জলাশয় ও নদী বাঁচানোর জন্য পরিবেশকর্মীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে রবীন্দ্র সরোবরে ছট পুজোর আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন পরিবেশকর্মীরা। তাই সেখানে এবছর ছটের আয়োজন নিয়ে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য।
রাজ্য সরকারের মতে, ছটপুজোর জন্য সরকার ও প্রশাসন এতদিন রবীন্দ্র সরোবরে যে ব্যবস্থা করে এসেছে, তাতে পরিবেশ সুরক্ষার সঙ্গে কোনও আপস করা হয়নি। প্রসঙ্গত, এ বছর রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো করতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সংবাদে প্রকাশ, এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেছেন, দিল্লি থেকে একটা নির্দেশ এসেছে। সেটির ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত চিন্তিত। হঠাৎ করে বলা হয়েছে যে, রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো করা যাবে না। কিন্তু এতদিন ধরে তো তা হয়ে আসছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে ছটের জন্য জলাশয়ের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। ছটপুজোতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্য ১১টি জলাশয় চিহ্নিত করে সেগুলি সাফসুতরো করা হয়েছে। আমরা তো পরিবেশের সঙ্গে কোনও আপস করিনি। যেভাবে বিসর্জন প্রক্রিয়া আমরা সম্পন্ন করি, তা ইতিমধ্যে নানা মহলের প্রশংসা কুড়িয়েছে। ছটপুজোতে রবীন্দ্র সরোবরে যে ব্যবস্থা করা হয়, তাতে সরোবরের পরিবেশের কোনও অসুবিধা হয়নি। মেয়রের এমন মন্তব্যের পর এ সংক্রান্ত বিতর্ক নতুন করে ইন্ধন পেয়েছে। কেএমডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল একটি মামলার রায়ে জাতীয় সরোবরের তকমা পাওয়া রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো সহ সমস্ত ধর্মীয় কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করে। তারপরও ২০১৮ সালে প্রতিবারের মতোই ছটপুজো হয়। চলতি বছর ওই ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের হয় রবীন্দ্র সরোবরের ভারপ্রাপ্ত সংস্থা কেএমডিএ’র বিরুদ্ধে। সেখানে গিয়ে কেএমডিএ জানিয়ে আসে, এবার অবশ্যই আদালতের নির্দেশ মান্য করা হবে। সেইমতোই বিকল্প জলাশয় খোঁজার কাজও শুরু করে কলকাতা পুরসভা। সুতরাং, শুধু রবীন্দ্র সরোবরই নয়, দেশের সব জলাশয়-নদীই জাতীয় সম্পদ। তা রক্ষা করা আমাদের সকলের জাতীয় কর্তব্য। শুধু মাটির উপরের জল নয়, ভূগর্ভস্থ জলও বাঁচানো সকলের দায়িত্ব। ধর্ম থাক, পুজো হোক—কিন্তু, আমাদের যা ধারণ করে থাকে, তাকে পরিত্যাগ করলে আমরাই কি আদৌ থাকব!