বেশি বন্ধু-বান্ধব রাখা ঠিক হবে না। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য আসবে। বিবাহযোগ আছে। কর্ম পরিবেশ পরিবর্তন হতে ... বিশদ
১৯৭৪ সালে পরিষদ শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। সফল ১৬ জনকে নিয়োগ করা হয়। তিন বছর নিশ্চিন্তে চাকরি করার পর ১৯৭৭ সালে তাঁদের জীবনে ঘনিয়ে আসে দুর্বিপাক। তাঁদের জমা করা নথিপত্র জাল দাবি করে সুজাপুর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। প্রথমে পুলিস কেস, পরে তাঁদের বিরুদ্ধে পুরোদস্তুর ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়। ওদিকে নিম্ন আদালত বারংবার জানতে চায়, কোন যুক্তিতে ওই শিক্ষকদের নথিকে জাল বলা হচ্ছে? আর এভাবেই পেরিয়ে যেতে থাকে একটির পর একটি বছর। অবশেষে পুলিস তাঁদের বিরুদ্ধে যে চার্জশিট এনেছিল, ১৯৯৮ সালে তাও খারিজ করে দেয় নিম্ন আদালত। ক্রিমিনাল কেস থেকে তাঁদের মুক্তিও দেয় আদালত। কিন্তু, সরকার সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে। রাজ্যের শীর্ষ আদালত সরকারি আবেদন খারিজ করে দেয়। কিন্তু, তারপরেও চাকরি ফিরে না পাওয়ায় দুর্ভাগা সেই শিক্ষকরা হাইকোর্টেরই দ্বারস্থ হতে বাধ্য হন।
২০০৯ সালের ২০ আগস্ট। ১৬ জনের মধ্যে তখন বেঁচে ১৪ জন। খাতায়কলমে দু’জনের চাকরির মেয়াদ শেষ। বিচারপতি মহারাজ সিনহা সেদিন পরিষদকে নির্দেশ দিলেন, মামলাকারী যাঁদের এখনও চাকরির মেয়াদ রয়েছে, তাঁদের অবিলম্বে পুনর্বহাল কর। সবাইকে ১৯৭৭ সাল থেকে পাওনা যাবতীয় অর্থ মিটিয়ে দাও। কিন্তু, পরিষদ তা মানতে নারাজ। বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে সেই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করা হয়। ঘটনাবলি শুনে বেঞ্চ শুরুতেই জানায়, ওই শিক্ষকদের চাকরিতে যোগ দিতে দাও। কিন্তু, এখনই বকেয়া অর্থ দেওয়ার দরকার নেই। ২০১০ সালের ৩ মে দেওয়া সেই নির্দেশ মতো কেউ ৫৮, কেউ ৫৯ বছর বয়সে কাজে যোগ দেন। কেউবা মাস ছয়েক চাকরি করে চাকরি থেকে অবসর নেন। কিন্তু, মেলেনি বকেয়া পাওনা। পেনশনও জোটেনি।
এদিন ওই শিক্ষকদের অন্যতম মিন্নাতুল্লা ও অন্যান্যদের হয়ে আইনজীবী কমলেশ ভট্টাচার্য আদালতকে জানান, এ এক অদ্ভুত ঘটনা! যেখানে অভিযোগকারী নিজেই বিচারক। পরিষদ অভিযোগ আনল। অথচ, অভিযুক্তদের কারণ দর্শানোর নোটিস দিল না, শৃঙ্খলাভঙ্গের তদন্ত হল না। তাও ওই শিক্ষকদের চাকরি থেকে সরিয়ে দিল। আদালতে সেই অভিযোগ খারিজ হল। তাও তাঁদের চাকরি ফিরিয়ে দিল না। পরিষদ যা করেছে, তা শুধু বেআইনি নয়, চূড়ান্তভাবে অসাংবিধানিক। নিম্ন আদালত থেকে হাইকোর্ট পর্যন্ত পরিষদের যাবতীয় অভিযোগ-আবেদন বাতিল হয়েছে। তাও চাকরি ফিরিয়ে দেয়নি। আইনের শাসনকে গুরুত্ব না দেওয়ার এমন মর্মান্তিক উদাহরণ দুর্লভ বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।