হস্তশিল্পীদের প্রতিভার স্বীকৃতি ও সুনাম। আর্থিক ঝুঁকি নেওয়ায় বিরত হন। কর্ম বিষয়ে সুখবর পেতে পারেন। ... বিশদ
তখন কথায় কথায় কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দিত গ্রামে। বহু মানুষ মারা পড়তেন। আচমকা একদিন দুলালি মায়ের আবির্ভাব ঘটে। তাঁর লীলাতেই সবার কলেরা ভালো হয়ে যায়। সেই থেকে দুলালি মা হয়ে ওঠেন সাগিরা গ্রামের একান্ত আপনজন। বুধবার তিনি চরণ ফেলেছেন সাগিরায়। তাঁর আগমনে কিছুটা আগে হোলি খেলায় মেতেছেন বাসিন্দারা। একে অপরের মুখে রঙিন আবিরে রাঙিয়ে দিচ্ছেন ফাগুনকে সাক্ষী রেখে। কথিত, এটাই দুলালি মা’কে ঘিরে সাগিরার ‘ফাগ উৎসব’। রীতি অনুযায়ী দোল উৎসবের ঠিক আগেই দুলালি মা’কে নিয়ে গ্রাম ঘোরানো হয়।
শতাধিক বছর আগে মঙ্গলকোটের বহু গ্রামেই কলেরা রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। সেই সময় সাগিরা গ্রামের বাসিন্দারা স্বপ্নাদেশ পেয়ে দুলালি মায়ের পুজো শুরু করেন। তাতে নাকি বাসিন্দাদের সব মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়। কলেরা আর সেভাবে বেয়াড়া হয়ে উঠতে পারেনি। যাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তাঁরাও ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকেন। তখন আউশগ্রামের ভেদিয়ার বুধুরা গ্রামে দুলালি মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে মাকে এনে এই বসন্তে সাগিরা গ্রামে তিনদিন রেখে পুজো শুরু করেন গ্রামবাসীরা। শেষের দিন গ্রাম ঘোরানো হয় দেবীকে। সঙ্গে নাম সংকীর্তন।
ভেদিয়ার ভিটি গ্রামের বাসিন্দা অশোককুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘মায়ের মূল উৎসব হয় চৈত্র মাসে। আর বাকি গ্রাম ঘোরানো শুরু হয় ফাল্গুন-চৈত্র মাসে। বীরভূমের নানুর সহ পূর্ব বর্ধমান মিলে গ্রাম ঘোরানো হয়। সব গ্রামেই তিনদিন ধরে অনুষ্ঠান হয়। শেষের দিন ধূলোট হয়।’
সাগিরা গ্রামের বাসিন্দা নকুল দাস, রঘুনাথ দাস, লক্ষ্মী সর্দাররা বলছিলেন, ‘দুলে মা খুবই জাগ্রত। আমাদের পূর্বপুরুষ থেকে শুরু করে আজকের প্রজন্ম পর্যন্ত মা’কে ঘিরে পুজো-উৎসবের রেওয়াজ চলে আসছে। দোল উৎসবের আগে দুলে মায়ের ‘ফাগ’ উৎসব আমাদের কাছে উপরি পাওনা। একে অপরের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন আসেন। সবাই রঙ মাখি, আবির খেলি।’
এদিন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আট থেকে আশি—সবাই আবিরে রাঙা। গোটা সাগিরাই রঙিন। আর ক’দিন বাদেই হোলি উৎসব। তখনও এই গ্রাম রং খেলায় মেতে উঠবেন। ফলত, বছরে দু’ বার হোলি উৎসব পালন করেন গ্রামবাসীরা। পড়ুয়ারা বলছিলেন, ‘দু’বার রঙ খেলতে আমাদের খুব ভালোই লাগে।’ প্রবীণদের কথায়, ‘এটা আসলে ফাগ উৎসব। জল রঙের ব্যবহার হয় না। নানা রঙের আবির মাখানো হয়। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা অকাল হোলি বলে।’
মঙ্গলকোটের লাখুরিয়া পঞ্চায়েতের পুরানো সাগিরা গ্রাম একসময় জমজমাট ছিল। ছবির মত সাজানো গ্রাম। ১৯৭৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় সবকিছু তছনছ হয়ে যায়। ২০০০ সালের বন্যাতেও গ্রাম ছাড়তে হয় বাসিন্দাদের। বানের জলে তলিয়ে মৃত্যু হয়েছে অনেকের। পুরনো সেই অভিশপ্ত গ্রামে ছেড়ে দেন বাসিন্দারা। চলে আসেন অজয়ের অপর পাড়ে। নতুন বসতি স্থাপন করেন। সেটাই এখন নতুন সাগিরা। কিন্তু, ভুলে যাননি তাঁদের বিপদভঞ্জনকারিনী দুলালি মা’কে। তাঁকে নিয়ে এখন পরম্পরা উৎসবে মাতোয়ারা বাসিন্দারা। মঙ্গলকোটের সাগিরা গ্রামে দুলালি মায়ের পুজো উপলক্ষ্যে শুরু হয়েছে অকাল হোলি।-নিজস্ব চিত্র