হস্তশিল্পীদের প্রতিভার স্বীকৃতি ও সুনাম। আর্থিক ঝুঁকি নেওয়ায় বিরত হন। কর্ম বিষয়ে সুখবর পেতে পারেন। ... বিশদ
জলাশয়ে দীর্ঘদিনের বাস তিনটি কুমিরের। তাদের মধ্যে একটি স্ত্রী। অন্য দু’টি পুরুষ। তিনে মিলে দিব্যি কাটাচ্ছিল। বাধ সাধল এই বসন্ত। এই সময় কুমিরদের মধ্যে মিলনের ইচ্ছে প্রবলভাবে জেগে ওঠে। স্বভাবতই দুই পুরুষ কুমির ওই স্ত্রী কুমিরটিকে একান্তভাবে কাছে পেতে মরিয়া চেষ্টা চালায়। প্রথমের দিকে একে অপরের দিকে তেড়ে যাওয়া…গুঁতোগুঁতি করা…। ঠিক যেমন দেখা যায় হাতি কিংবা বাইসনের ক্ষেত্রে। কিছু পরেই দু’জনেই রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। প্রেমিকার দখল নিতে জড়িয়ে পড়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। কিছুটা দূরে থেকে অসহায়ের মতো দুই প্রেমিকের এহেন লড়াই দেখা ছাড়া আর কোনও উপায়ই ছিল না প্রেমিকাটির!
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ দু’টি কুমিরের যুদ্ধ শুরু হয়। চলে রাতভর। সকালে দেখা যায়, নিথর হয়ে গিয়েছে একটি কুমির। তার দেহ ক্ষতবিক্ষত। অন্য কুমিরটিও অনেকটাই জখম। তা হলেও প্রেমিকাকে পেয়ে যাবতীয় যন্ত্রণা ভুলেছে সে। দু’জনের মধ্যে মিলনের আনন্দ। ঘোরাফেরা করছে জলাশয়ে। বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত কুমিরটির বয়স ১০ বছর। সাত বছর আগে সেটিকে অন্য জায়গা থেকে রমনাবাগানে আনা হয়েছিল। আগে থেকেই সেখানে তিনটি কুমির ছিল। মোট চারটির মধ্যে একটি ফিমেল। তিনটি মেল। ক’দিন আগে একটি পুরুষ কুমির অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে ওই জলাশয়েরই অন্যপ্রান্তে সরিয়ে নিয়ে যায় কর্তৃপক্ষ। তারপরই গতকাল ঘটে যায় মর্মান্তিক ঘটনা।
এডিএফও সৌগত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘সঙ্গমের জন্য দু’টি কুমিরের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। প্রাণী জগতে এমনটা হয়েই থাকে। এবং এটাই স্বাভাবিক। বাঘ বা হাতির মধ্যেও সংঘর্ষ হয়। শীতকালে সাধারণত কুমির সঙ্গম করে না। শীত কমলে তাদের মধ্যে এই প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। দু’টি কুমির মিলে একটি স্ত্রী কুমিরকে পেতে যুদ্ধে মেতে ওঠে। শেষপর্যন্ত তাদের একটি পেরে ওঠেনি। তার লেজের দিকে আঘাত ছিল। গভীর ক্ষত হওয়ার কারণে সেটি মারা যায়। অন্য কুমিরটি বয়সে এবং আকৃতিতে অনেকটাই বড় ছিল।’
তবে, এই ঘটনার নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এক প্রাণী বিশেষজ্ঞ বলছিলেন, এমনটা হওয়ার আশঙ্কা অনেক আগে থেকেই ছিল। বনদপ্তরের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল। তা ছাড়া দীর্ঘক্ষণ ধরে যুদ্ধ চললেও তা কেন বনদপ্তরের নজরে এলে না? সেটাও দেখা উচিত। সঙ্গম হওয়ার পর স্ত্রী কুমির আলাদা হয়ে যায়। সে তখন গর্ভে ডিম বাঁচানোর চেষ্টা করে। কারণ অনেক সময় মেল কুমির সেটা নষ্ট করে দেয়। এক্ষেত্রে একটি জলাশয়ে চারটি কুমির রাখা ঠিক ছিল কি না, তা পর্যলোচনা করা দরকার।
সম্প্রতি সঙ্গমের জন্য এমন যুদ্ধ রমনাবাগানে হয়নি। মৃত কুমিরটি ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। লেজ ছাড়াও শরীরের অন্যান জায়গাতেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। চিড়িয়াখানার এক আধিকারিক বলেন, এ ধরণের লড়াইয়ে দু’জনের মধ্যে একজনের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কেউ কাউকেই ছাড়ে না। একটির মৃত্যুর পরও তার উপর আক্রমণ চলতেই থাকে। কেননা, বিজয়ী সর্বদা চায় প্রতিপক্ষের মৃত্যু নিশ্চিত করতে।