হস্তশিল্পীদের প্রতিভার স্বীকৃতি ও সুনাম। আর্থিক ঝুঁকি নেওয়ায় বিরত হন। কর্ম বিষয়ে সুখবর পেতে পারেন। ... বিশদ
বহরমপুর শহরের মোহনের মোড় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গমগম করে। মোহনা মোড়ের চৌমাথা পেরিয়ে কৃষ্ণনাথ কলেজের দিকে কয়েক পা গেলেই কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের দক্ষিণ দিকের পাঁচিলের উল্টো দিকে কটাদার দোকান। ঠেলাগাড়িতে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে কেরোসিনের স্টোভ জ্বলতে শুরু করে। স্ত্রী প্রভাতি সাহা পুরি-সব্জির সমস্ত উপকরণ নিজে হাতে প্রস্তুত করে দেন। ঠেলাগাড়িতেই একা হাতে যত্ন সহকারে তরকারি বানিয়ে ডালপুরি ভাজতে শুরু করেন। বেলা ২টো পর্যন্ত কটাদার হাত চলতেই থাকে।
একদিকে কটাদা ভেজে চলেছেন, অন্য একজন খরিদ্দারের হাতে হাতে খাবার তুলে দিচ্ছেন। পুরির সঙ্গে সব্জি শুধু ফ্রি নয়, প্লেট বাড়ালে যতটা ইচ্ছা সব্জি মেলে। পুরি প্রতি দাম মাত্র আড়াই টাকা। কটাদার ঠেলা গাড়ি থেকে প্রতিদিন ১৫০০-১৭০০ ডালপুরি বিক্রি হয়।
৩০ বছর ধরে একই জায়গায় ডালপুরি বিক্রি করে আসছেন সজল সাহা। এক টাকা দিয়ে শুরু করেছিলেন। তবে গত ১২ বছর আড়াই টাকা দাম রয়েছে। সজলবাবু বলেন, বেশি লাভের আশা কোনওদিন করিনি। মানুষের মুখে সস্তায় ভালো খাবার তুলে দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়েই এই ব্যবসা শুরু করেছিলাম। বিক্রি বেশি হয়। তাতেই পুষিয়ে যায়। এই দোকান থেকেই এক মেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে বিয়ে দিয়েছি। পাকা বাসস্থান করেছি। আর এক মেয়েকে লেখাপড়া শেখাচ্ছি।
বর্তমান বাজারে বহরমপুর শহরে ডালপুরি নানপুরি ৭ টাকা পিস দামে বিকোচ্ছে। সেখানে কটাদা ১২ বছর ধরে একই দামে হাজার হাজার মানুষের হাতে সস্তায় সকালের টিফিন জুগিয়ে আসছেন। রিকশ চালক, টোটো চালক থেকে শুরু করে শ্রমিক, চাকুরিজীবীদের লাইন পড়ে কটাদার দোকানে। খবরের কাগজে টাটকা ভাজা পুরি নিয়ে নিজের টোটোয় বসে তৃপ্তিতে খাচ্ছিলেন অশোক নন্দী। অশোকবাবু বলেন, শহরে এত সস্তায় সুস্বাদু টিফিন আর কোথাও মেলে না। তাই কটাদাই ভরসা আমাদের। টিফিন কৌটোয় বাড়ির জন্য পুরি নিতে এসেছিলেন বাবুপাড়ার অনিন্দিতা বিশ্বাস। তিনি বলেন, শনি, বৃহস্পতিবার বাদে এখান থেকেই সকালের টিফিন যায়। এই খাবার খেয়ে কোনওদিন সমস্যা হয়নি।
সজলবাবুর দাবি, কড়াইয়ের তেল নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিবর্তন করা হয়। যার ফলে পুরির রং কালো হয় না। প্রভাতিদেবী বলেন, সস্তায় ভালো খাবার খাইয়ে আমার স্বামী পরিচিতি পেয়েছে। এটাই আমার কাছে বড় প্রাপ্য।