নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: ক্যাম্পাস থেকে ভেসে আসছে ঢাকের আওয়াজ, শঙ্খধ্বনি। মাঝেমধ্যে বাতাসে মিশছে উলুধ্বনি। রাস্তার দু’পাশে গাছের সারি। পাতা ঝরার দিন না এলেও তা মাটিতে পড়ে রয়েছে। দু’পাশে উৎসুকদের ভিড়। কোনও রাস্তা ধরে ছাত্ররা তত্ত্ব নিয়ে চলছে। আবার কোথাও ছাত্রীরা ডালি সাজিয়ে ছাত্রদের হস্টেলে ঢুকছে। বাঙালি বিয়েতে তত্ত্ব আদান-প্রদানের রীতি বহুদিনের। গায়ে হলুদের দিন পাত্রের বাড়ি থেকে তত্ত্ব যায়। কনেদের বাড়ি থেকে তত্ত্ব আসে ফুলশয্যার দিন। আর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে তত্ত্ব দেওয়া নেওয়া হয় সরস্বতী পুজোর পরের দিন। চারহাত এক করার শপথবাক্য হয়তো এদিন পড়া হয় না, কিন্তু শুভক্ষণে অনেকই আগামীতে পথ চলার অঙ্গীকার করে নেয়। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এটা বহু পুরনো রীতি। এক সময়ে ছাত্রীদের হস্টেলে ছাত্রদের প্রবেশের অধিকার ছিল না। ইচ্ছে থাকলেও হস্টেলে গিয়ে মনের মানুষকে উপহার দেওয়া হতো না। এখন অবশ্য বছরভর কিছুটা স্বাধীনতা থাকে। কিন্তু প্রাচীন প্রথা অবলুপ্ত হয়নি। মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিভিন্ন হস্টেলের পড়ুয়ারা তত্ত্ব নিয়ে বেরিয়ে যান। ছাত্ররা বিনা বাধায় ছাত্রীদের হস্টেলে ঢুকলেন। ছাত্রীদেরও দেখা গেল একই পথে হাঁটতে। বিবেকানন্দ, অরবিন্দ, নেতাজির মতো ছাত্রবাসগুলিতে এদিন সকাল থেকে বসন্তের হাওয়া বয়ে যায়। এক পড়ুয়া বলেন, চিপস, চকোলেট এবং বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি দিয়ে তত্ত্ব সাজানো হয়। এই দিনটির গুরুত্ব সকল পড়ুয়াদের কাছে অন্য রকম। যারা হস্টেলে থাকে না তারাও এদিন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হাজির হয়ে যায়। প্রতিটি হস্টেলে এবারও ধুমধাম করে পুজো হয়েছে। এবার থিমের নিরিখে উদ্যোক্তারা একে অপরকে টেক্কা দিয়েছে। কোনও মণ্ডপে ফুটে উঠেছে সমাজ সচেতনতার ছবি, আবার কোথাও তুলে ধরা হয়েছে হারিয়ে যাওয়া শিল্পকলা। সরস্বতী পুজোর দিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিস সুপার সায়ক দাস, মহকুমা শাসক তীর্থঙ্কর বিশ্বাস সহ অন্যান্য আধিকরিকরা হাজির হয়েছিলেন। মহকুমা শাসক বলেন, এখানকার পুজো অন্য রকম। এখানে এসে ছাত্রজীবনের কথা মনে পড়ে যায়।
পড়ুয়ারা বলেন, এখানে পুজোর রেশ পরের দিনও থাকে। কে কোন হস্টলে তত্ত্ব নিয়ে যাবে তার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। মনের মানুষের কাছে পৌঁছে তত্ত্ব দেওয়ার পাশাপাশি অনেকেই ফিসফিসিয়ে অন্য কথাও বলে নেয়। এক পড়ুয়া বলেন, প্রেম উদযাপনের এমন দিন আর পাওয়া যায় না। ভ্যালেন্টাইন ডে তে এখানে তেমন কিছু হয় না। কিন্তু সরস্বতী পুজোর সময় এখানে বসন্ত নেমে আসে। বছরের বাকি দিনগুলিতে পড়ুয়ারা পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। শুধু এই দু’দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রেমের হাওয়া বয়।-নিজস্ব চিত্র