নিজস্ব প্রতিনিধি, চকদিঘি: সদ্য আসা আমের মুকুলের সুবাসে চারিদিক ম ম করছে। মাঘের দুপুরে সূর্যের আভা পড়ে গাছের পাতা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। চকদিঘি রাজবাড়ির আমবাগানের সর্বত্র সেই রশ্মি মাটিতে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে না। গাছের গোড়ায় বাসন্তী রংয়ের শাড়ি পড়ে বসে এক অষ্টাদশী। হাত হাত রেখেছে তারই সমবয়সি প্রেমিক। হালকা হাওয়ায় চুল উড়ছে। শুধু এই একজোড়া নয়, প্রতিটি আম গাছের গোড়াতেই চলছে প্রেমালাপ। আগে এলে আগে পাবে। এই নিয়মেই গাছের গোড়ার দখল পেয়েছে যুগলরা। সামনেই পুরনো রাজবাড়ি। বহু ঘর ফাঁকা। সুযাগ পেলে একটু অন্তরঙ্গ মুহূর্ত কাটানোর জন্য রোমিও জুলিয়েটরা ঢুঁ দিচ্ছেন। কিন্তু মন খুলে ‘কিছু’ করা যাচ্ছে না। ঘরের মধ্যে ফিসফিস আওয়াজ পেলেই কর্কশ কণ্ঠে ভেসে আসছে, ‘ওখানে কে রে। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আয়। না হলে প্রেম ঘুচিয়ে দেব’। যেমন হুমকি তেমনই কাজ। তিনটি বাইকে ছুটে এলেন পুলিস কর্মীরা। সামনে একটি বাইকে ছিলেন এক এসআই। তিনি বলেন, সরস্বতী পুজোর দিন থেকে ডিউটি শুরু হয়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পাহারা দিতে হচ্ছে। এত বড় এলাকায় এই কয়েকজন পুলিস কর্মী দিয়ে কী হবে বলুন। কে কোন দিকে ঢুকে যাচ্ছে, টের পাচ্ছি না।’ তাঁর কথা শেষ হতে না হলেই রাজবাড়ির এক কেয়ারটেকার ওই পুলিস আধিকারিককে বলেন, স্যার কিছুক্ষণ আগেই হাতানাতে ধরেছিলাম। ছেলেটা জঙ্গল দিয়ে পালিয়ে গেল। মেয়েটাকে সতর্ক করে ছেড়ে দিয়েছি।
সরস্বতী পুজোর পরের দিন চকদিঘি রাজবাড়ির চত্বর হয়ে উঠেছিল বৃন্দাবন। প্রেমলীলা আর ভালোবাসার নানা রূপ দেখে এলাকার বাসিন্দারা চোখে রুমাল দিয়ে যাচ্ছিলেন। মাঝবয়সি এক ব্যক্তি সব দেখে বলেন, এই বয়সে প্রেম করবে না তো আর কবে করবে। রাজবাড়ি চত্বর ফাঁকা পড়ে থাকে। আমবাগানে বসে রোমান্টিকতা করা যায়। শুধু চকদিঘি নয়, জামালপুর সহ বিভিন্ন এলাকার প্রেমিক-প্রেমিকারা সরস্বতী পুজোর দিন থেকে এখানে হাজির থাকে। সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রেমে ডুব দিয়ে তারপর বাড়ি ফিরে যায়। প্রেম যাতে বাড়াবাড়ি পর্যায়ে না যায় তারজন্য পুলিসের টহল রয়েছে। তারা রাজবাড়ির সব ঘর ঘুরে দেখে। আমগাছের তলায় বসে এক প্রেমিক লাজুক মুখে বলছিলেন, এখানে বসে একটু ভালো ভাবে গল্প করা যায়। খারাপ কিছু তো আর করছি না। সরস্বতী পুজোর দিন বা পরের দিনই তো এমন ছাড়পত্র পাওয়া যায়। কথা বলার সময়ই সেখান থেকে বাইক চড়ে গেল পুলিস বাহিনী। যেতে যেতে এক আধিকারিক রোমিওদের দিকে তাকিয়ে বলে গেলেন, এখানে গল্প করো। রাজবাড়ির ভিতরে যাওয়ার দরকার নেই। কিছুক্ষণ পর আবার আসছি। রাজবাড়ির ভিতরে ধরা পড়লে কিন্তু রক্ষা হবে না ।