কারও কাছ থেকে কোনও দামি উপহার লাভ হতে পারে। অকারণ বিবাদ বিতর্ক এড়িয়ে চলুন। স্বাস্থ্য ... বিশদ
বয়সের কারণে অনেকটা পথ সাইকেল চালাতে কষ্ট হয়। কোমরের ব্যথা বাড়ে। এজন্য পরিবার তাঁকে এবার কাজ থেকে অবসর নিতে বলেছে। কিন্তু একপ্রকার বাড়ির লোকের কথা উপেক্ষা করেই দীনা রায় রোজ সকালে পাঠকের বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন বর্তমান পত্রিকা। এই সংবাদপত্র বিক্রেতার ক্যালেন্ডারে ছুটি বলে শব্দটাই যেন নেই। রোদ, ঝড়, বৃষ্টি কিংবা কুয়াশায় ঢাকা কনকনে শীতের সকালেও ঠিক সময়ে পাঠকের বাড়ির দরজায় বেজে ওঠে দীনা রায়ের সাইকেলের বেল। হাসিমুখে পাঠকের হাতে তুলে দেন ‘বর্তমান’। বললেন, ১৯৮৯ সাল থেকে বাড়ি বাড়ি সংবাদপত্র পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছি। জলপাইগুড়ি শহরের কামারপাড়া থেকে সংবাদপত্র দেওয়া শুরু হয় দীনা রায়ের। উকিলপাড়া, মোহন্তপাড়া, শিরিষতলা, অসমমোড় হয়ে সোজা চলে যান মোহিতনগর। তাঁর কথায়, আমি যত গলির মধ্যে ঢুকে বাড়িতে সংবাদপত্র পৌঁছে দিই, তা আর কেউ করে না। সবমিলিয়ে রোজ ৩০ কিমি সাইকেল চালিয়ে একাজ করে চলেছি। জলপাইগুড়িতে ‘বর্তমান’ পত্রিকার এজেন্ট ভবতোষ ভৌমিক বলেন, দীনা রায়ের মতো সংবাদপত্র বিক্রেতা সত্যিই আমাদের কাছে সম্পদ। দীনা রায় বলেন, অন্যান্য সংবাদপত্রও পৌঁছে দিই। কিন্তু বর্তমান পত্রিকার প্রতি কেমন যেন আলাদা ভালোলাগা তৈরি হয়ে গিয়েছে। পাঠকের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ফাঁকে বর্তমান-এর প্রতিটি পাতার হেডলাইনে একবার হলেও চোখ বুলিয়ে নিতে ভুলি না।
তাঁর কথায়, ১৯৯৭ সালে বাবা মারা যাওয়ায় একদিন পাঠকের বাড়িতে সংবাদপত্র পৌঁছে দিতে পারিনি। আর গত বছর ১৫ ডিসেম্বর মেয়ের বিয়ে ছিল। সেকারণে ওইসময় দু’দিন কাগজ পৌঁছতে পারিনি। তাছাড়া গত ৩৬ বছরে আর কোনওদিন ছুটি নিইনি।
যতই শরীর খারাপ কিংবা পারিবারিক অসুবিধা বা প্রতিকূল আবহাওয়া থাকুক না কেন, ঠিক পৌঁছে দিয়েছি খবরের কাগজ। তবে কতদিন আর একাজ করতে পারব জানি না।
দীনা রায়ের দুই ছেলে, এক মেয়ে। বড় ছেলে মোহিতনগরে ব্যবসা করেন। ছোট ছেলে বিহারের কিষানগঞ্জে একটি বেসরকারি স্কুলে পড়ান। মেয়ে একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ান। কিন্তু ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থানের পরও খবরের কাগজ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেননি দীনা রায়। সংবাদপত্রের প্রতি তাঁর এই আন্তরিকতায় মুগ্ধ জলপাইগুড়ির পাঠকরাও।