পদার্থ ও রসায়নিক বিদ্যার অনুশীলনে বিশেষ উন্নতি।প্রায় সম্পূর্ণ কাজে বাধা আসতে পারে। বিকেল থেকে মানসিক ... বিশদ
মৌনী অমাবস্যার পুণ্যমুহূর্তে স্নানের জন্য মঙ্গলবার রাত থেকেই যে ঢল নামবে, তা প্রত্যাশিতই ছিল। সেইমতো ভিড়ও জমেছে। ঘড়ির কাঁটা সবে রাত ১টা পেরিয়েছে। যেখান থেকে নাগা সন্ন্যাসী ও বিভিন্ন আখড়ার সাধুরা প্রথম স্নানে যাবেন, সেই আখড়া মার্গে ভিড়ের চাপে আচমকা ভেঙে পড়ল ব্যারিকেড। প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপযুক্ত নির্দেশ নেই। আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে দিল দিশাহারা মানুষ। শত শত পুণ্যার্থী মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে, আর তাঁদের উপর দিয়েই চলে যাচ্ছে জনস্রোত। যেহেতু আখড়া মার্গ, তাই চতুর্দিকে ব্যারিকেড এবং যত্রতত্র রাখা বড় বড় ট্র্যাশক্যান। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাওয়ার উপায়ই নেই। ফলে মুখোমুখি হয়ে যায় কিছু ভিড়। ঠেলাঠেলি, ধাক্কা এড়াতে কোনদিকে যাওয়া যায়? সেটা বুঝতে পারেনি শিক্ষিত, শহুরে, নিরক্ষর, দেহাতি... কেউই! অভিযোগ, কোনও পুলিস, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট টিমকে পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রাণ বাঁচাতে ঊর্ধ্বশ্বাসে মানুষ শুধু একটু ফাঁকা স্থান খোঁজার চেষ্টা করছিল। কিন্তু তারা হুমড়ি খেয়ে পড়েছে পিছন থেকে আসা ধাক্কায়। প্রাণ যায়। অমৃত রয়ে যায় অধরা।
শাহি স্নান স্থগিত হয়ে যায় রাতেই। আবার শুরু হয় সকাল ৭টায়। ততক্ষণে ‘অকুস্থলে’ বিপর্যয়ের চিহ্নমাত্র নেই! এমনই নিপুণভাবে ‘সাফ’ করা হয়েছে সবকিছু। কিন্তু বাধ সাধলেন একের পর এক আখড়ার সাধুসন্তরা। তাঁরা জানিয়ে দিলেন, প্রথম স্নান করব না। ভিড় কমলে যাব। ততক্ষণে সম্পূর্ণ ভিন্ন উপদেশ দিতে শুরু করেছেন যোগী। এতদিন মাহাত্ম্য প্রচার হচ্ছিল সঙ্গমের। এদিনের দুর্ঘটনার পর যোগী বলেন, ‘সঙ্গমেই স্নান করতে হবে, এমন নয়। যে যেখানে আছেন, তার নিকটবর্তী ঘাটেই স্নান করুন।’ অর্থাৎ, তিনি বুঝিয়ে দিলেন, আগামী দিনেও সঙ্গমে যাওয়ার ক্ষেত্রে কঠোরতা আরোপ করা হবে।
ছ’মাস ধরে মহাআড়ম্বর। মহাকুম্ভের ডঙ্কা বাজিয়ে কোটি কোটি মানুষকে আহ্বান। ভিড়ে ঠাসা সঙ্গম দেখিয়ে প্রশস্ত হয়েছে কুম্ভ ইকনমির পথ। কিন্তু আসল দিনে দেখা গেল, সামান্য পরিকাঠামো প্রস্তুতিতেই চরম ব্যর্থতা। চূড়ান্ত অব্যবস্থা, অতিরিক্ত ভিআইপি বন্দনা এবং পরিকল্পনাহীনতার ত্র্যহস্পর্শে আবার পূর্ণকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে হতাহতের ঘটনা। ১৯৫৪ কিংবা হাল আমলের ২০১৩ সাল। ১৯৮৬ অথবা ২০০৩। কুম্ভমেলায় পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুমিছিলের দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা বারবার হয়েছে। তারপরও জাঁকজমক ও হিন্দুত্ব রাজনীতিতে যতটা মনোনিবেশ করা হয়েছে, তার ছিটেফোঁটা শিক্ষাও অতীত থেকে নেয়নি যোগী সরকার। ‘আসল দিনে’ তারই প্রমাণ মিলল। আসল দিন কেন? কুম্ভমেলায় সাধারণত মকর সংক্রান্তির স্নানকেই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ শাহিস্নান হিসেবে দেখা হলেও, মৌনী অমাবস্যার ভিড় চিরকালই সর্বোচ্চ। শৈব থেকে শাক্ত, তাবৎ পন্থীরা এই দিনেই স্নান করেন সবথেকে বেশি। অথচ এই দিনের জন্যই প্রস্তুতি শূন্য? মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’র তাবৎ দলের অভিযোগ, ন্যক্কারজনকভাবে হতাহতের সংখ্যা গোপনের চেষ্টা হচ্ছে। সমাজবাদী পার্টির দাবি, লাশ গায়েব করা হয়েছে। এই ঘটনার পর কুম্ভ থেকে নিখোঁজের সংখ্যা অনেকটা বাড়বে। কারণ, মৃতদেহেরও সন্ধান মিলবে না। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়ান বলেছেন, ‘এই ঘটনা যদি গঙ্গাসাগরে ঘটত, এতক্ষণে মোদি সরকারের সব এজেন্সি, কমিশন, সংগঠন ঝাঁপিয়ে পড়ত। গঙ্গাসাগর সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করে বাংলা দেখিয়ে দিয়েছে, কীভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ আয়োজন করা যায়।’ যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন, ‘বিরোধীরা রাজনীতি করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে অযথা গুজব ছড়ানো হচ্ছে।’
সঙ্গম অথবা সঙ্গমের নিকটবর্তী অংশকে এবার যেন সাধারণ ভারতবাসীর জন্য ব্রাত্যই করে রাখা হয়েছে। প্রথম থেকেই দেখা যাচ্ছে ভিআইপিদের আনাগোনা। পক্ষান্তরে আম জনতার ভাগ্যে জোটে শুধু মাইলের পর মাইল হাঁটা অথবা পুলিসের তাড়া। আবহমানকাল ধরে কুম্ভই ছিল চিরন্তন ভারতের মিলনমেলা। মৌনী অমাবস্যায় সেই কুম্ভ পরিণত হল বিচ্ছেদমেলায়! পুণ্য মন্ত্রোচ্চারণের প্রত্যাশা বদলে গেল হাহাকারে! অর্ধসমাপ্ত রামমন্দির উদ্বোধন। পরিকল্পনাহীন কুম্ভ। বিজেপির কাছে হিন্দুত্ব যেন নিছক মেগা-ইভেন্ট! মানুষের প্রাণের মূল্য? নেই! কারণ সংখ্যাই তো অন্ধকারে!