কারও কাছ থেকে কোনও দামি উপহার লাভ হতে পারে। অকারণ বিবাদ বিতর্ক এড়িয়ে চলুন। স্বাস্থ্য ... বিশদ
মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে থাকত ওই অবাঙালি ব্যবসায়ী পরিবার। দুই মেয়ের বিয়ের পর অশোক শাহ ও রশ্মিতা শাহের সঙ্গী বলতে আর কেউ ছিল না। তাঁদেরই এমন বীভৎসভাবে খুন? ঘটনার রাতেই ঘুম উড়ল গোটা পাড়ার। ঢুকছে লালবাজারের একের পর এক গাড়ি। স্নিফার ডগ, সায়েন্টিফিক উইং, থ্রি-ডি ক্যামেরা। শুরু হল তদন্ত। ‘ওয়ার-রুমে’ তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) সোলোমান নেশাকুমারের নেতৃত্বে আততায়ী খুঁজতে নেমে পড়লেন গোয়েন্দা বিভাগের হোমিসাইড, গুন্ডাদমন ও ওয়াচ শাখার আধিকারিকরা। স্পেশাল সাপোর্টে সাইবার বিভাগের অফিসাররা। কে খুন করল? তাও এভাবে? নেপথ্যে কী? প্রাথমিক তদন্তে যতটুকু বোঝা গেল, বিবাদটা পারিবারিক। এবং সম্পত্তি নিয়ে। তাতেই খুন ভবানীপুরের শাহ দম্পতি।
তেড়েফুঁড়ে নামল লালবাজার। ঘটনার তিনদিনের মাথায় গ্রেপ্তার তিনজন। যতীন মেহেতা, সুবোধ সিং, রত্নাকর নাথ। কারা এরা? প্রত্যেকেই শাহ পরিবারের সদস্য। এবং নিহত অশোক শাহের কাকার দিকের শাখা-প্রশাখা। এরাই কি আসল খুনি? জেরায় কিন্তু তারা বলল, খুন তারা করেনি। কারিগর মূলত দু’জন—বিশাল অরোরা ও সন্তোষকুমার পাতি ওরফে রাহুল। দু’জনেই ভাড়াটে খুনি। কিন্তু সুপারি কে দিয়েছিল? অন্য একটি নাম প্রকাশ্যে এল—দীপেশ শাহ। পরিবারেরই সদস্য। গোয়েন্দারা জানতে পারলেন, সুবোধ সিংয়ের সূত্রেই বিশালের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল দীপেশের। বিশালের থেকে ৪০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিল সে। ফেরত দিতে চলছিল টালবাহানা। বিশালকে চটিয়ে বাঁচা যাবে না, বুঝেছিল দীপেশ। তাই ভয়ঙ্কর প্ল্যান করে সে। বিশালকে সুপারি দেয় শাহ দম্পতির। শর্ত, খুনের পর সম্পত্তি থেকে যে বিশাল অঙ্কের অর্থ হাতে আসবে, তার বখরা মিলবে। ৬ জুন রাতে ভবানীপুরের বাড়িতে ঢোকে বিশাল ও রাহুল। গেট পাহারায়? দীপেশ। কোনও চান্স না দিয়ে আগেই গুলি চালায় রাহুল। সেই গুলি রশ্মিতা শাহের ঘাড় ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়। তারপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে কোপানো হয় দু’জনকেই।
কিন্তু খুনিরা কোথায়? বিভিন্ন রাজ্যে হানা দিতে শুরু করেন গোয়েন্দারা। ওড়িশা, আর উত্তরপ্রদেশ থেকে ধরা পড়ে বিশাল ও রাহুল। কিন্তু তিন বছর পেরিয়েও খোঁজ নেই দীপেশের। বছর বছর পুলিসকে কার্যত নাকে দড়ি দিয়ে ঘোল খাওয়াচ্ছে সে। ঘনঘন বদলাচ্ছে লোকেশন। বারবার হুলিয়া বদল। ২০২৩ সালে বড়বাজার এলাকার একটি সিসি ক্যামেরা ফুটেজ হাতে আসে গোয়েন্দাদের। দীপেশ না তো? প্রায় চিরুনি তল্লাশি চালায় লালবাজারের ওয়াচ শাখার টিম। সেই চেষ্টাও বিফলে। গোপন সূত্রে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, গিরিশ পার্ক এলাকায় দীপেশের এক বান্ধবী রয়েছে। সেই বান্ধবী রয়েছে গোয়েন্দা-নজরে। ট্র্যাকে রয়েছে পরিবারও। কিন্তু অদ্ভুতভাবে স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টাই করেনি দীপেশ। সন্তান স্নেহকেও উপেক্ষা করেছে। গুজরাতের একটি হোটেলে কাজ করত। সেখানে টিম পাঠিয়েছিল পুলিস। অফিসাররা হানা দিয়েছিলেন মুম্বইতেও। জারি হয়েছে লুকআউট নোটিস। তাও অধরা অপরাধী। সবচেয়ে বড় কথা, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কোনও লেনদেন নেই! তাহলে তার চলছে কীভাবে? কেআজও রহস্য। ফেল করে যাচ্ছে পুলিসের যাবতীয় প্রযুক্তিও।