পদার্থ ও রসায়নিক বিদ্যার অনুশীলনে বিশেষ উন্নতি।প্রায় সম্পূর্ণ কাজে বাধা আসতে পারে। বিকেল থেকে মানসিক ... বিশদ
সুজিত ভৌমিক, কলকাতা: পার্ক স্ট্রিটের রেস্তরাঁয় ডিনার সারতে এসেছিলেন মনোজ শর্মা। সেই সল্টলেকের সিএফ ব্লক থেকে। সঙ্গে দুই ছেলে, মুদিত আর সুমিত। বয়স মাত্র আট আর ছয় বছর। ২৬ বছর আগের কথা। ১৯৯৯ সালের ২৫ এপ্রিলের ওই রাতে গাড়িতেই দুই ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন মনোজ। মারুতি গাড়ি। আর কেউ কি সঙ্গে ছিল? হ্যাঁ ছিল। ‘গন্দি আন্টি’। এমন নাম কেন? ছেলেরা বিলকুল পছন্দ করত না তাকে। সে নাকি খুব খারাপ। দুষ্টু। তাই ‘গন্দি’। আনন্দের ডাইন আউটে তাই একটু বিরক্তি লেগে ছিল মুদিত আর সুমিতের মনে। তাও...।
পরদিন সকালে ওই মারুতি গাড়িতেই পাওয়া যায় মুদিতের মৃতদেহ। পার্ক স্ট্রিটেই। গলা টিপে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছিল তাকে। কিন্তু সুমিত কোথায়? মনোজ শর্মাই বা কোথায় উধাও হয়ে গেলেন? কলকাতা শহর ছাড়িয়ে বহুদূর... ডেবরায় রাস্তার পাশে এক নয়ানজুলিতে পাওয়া গেল সুমিতকে। মৃতপ্রায়। দ্রুত নিয়ে যাওয়া হল হাসপাতালে। আপ্রাণ চেষ্টায় প্রাণ ফিরে পেল সুমিত। সেই জানাল, বাবা তো একা আসেনি! সঙ্গে ‘গন্দি আন্টি’ও ছিল। কে এই মহিলা?
খাস কলকাতার বুকে এমন নৃশংস খুন! তাও অতটুকু শিশুকে! তদন্তে নামে পার্ক স্ট্রিট থানা। সঙ্গে লালবাজারের হোমিসাইড শাখার গোয়েন্দারাও। জানা যায়, একাধিক ‘নারীসঙ্গ’ ছিল পেশায় ব্যবসায়ী মনোজের। সেই রাতেও তেমনই এক ‘বান্ধবী’ সঙ্গে ছিল তাদের। কথা বলার মতো অবস্থায় আসার পর সুমিতই গোয়েন্দাদের জানায়, বাবাকে বারবার বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল ‘গন্দি আন্টি’। বাবা কিছুতেই শুনতে চাইছিল না। আর সেও ছাড়তে নারাজ। ২৬ বছর আগের ওই কেসের সঙ্গে যুক্ত অবসরপ্রাপ্ত এক গোয়েন্দা বলছিলেন, ‘সল্টলেকের বাড়িতে তখন স্ত্রী-দুই ছেলেকে নিয়ে ভরা সংসার মনোজের। তাই একাধিক নারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা সত্ত্বেও ভেঙে বেরতে পারছিল না মনোজ। ওই বান্ধবীর সঙ্গে হয়তো ব্যাপারটা আর এড়িয়ে যাওয়ার মতো অবস্থায় ছিল না। মানসিক চাপ এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল মনোজের। প্রথমে ক্লোরোফর্ম দিয়ে অজ্ঞান করা হয় দুই ছেলেকে। তারপর টিপে ধরা হয় গলা। মুদিত প্রাণে বাঁচেনি। খুনি হয়তো ভেবেছিল, সুমিতও মারা গিয়েছে। কিন্তু না। তদন্তে যতদূর এগোতে পেরেছিলাম, তাতে এটাই আমাদের ধারণা। কিন্তু অদ্ভুতভাবে, দুটো মানুষ কর্পূরের মতো উবে গেল! রাজ্যের মধ্যে তো বটেই, বাইরেও হন্যে হয়ে খোঁজ করা হয়েছিল মনোজের। কোথায় সে? সেই বান্ধবীই বা কোথায়?’ সুমিত আজ ৩২ বছরের যুবক। পুলিসের বক্তব্য, প্রচুর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু বাড়ির লোকজনই যদি সহযোগিতা না করে, তাহলে কীভাবে অপরাধী ধরা পড়বে? সুমিতও এখন আর পুলিসের সঙ্গে কথা বলতে চায় না। প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি এখনও তাদের যোগাযোগ আছে মনোজের সঙ্গে? সেই সময়ের তদন্তকারী গোয়েন্দারাই বলছেন, ১৯৯৯ সালে ব্যবসায়ীর বাবা-মা বেঁচে। এর পিছনে একটা মনস্তত্ত্ব কাজ করে... বাড়ির লোক মনে করে, প্রাণটা তো আর ফিরে পাব না। তার থেকে যে এখনও আছে, সে নিরাপদে থাকুক। মুদিত শর্মা খুন এবং সুমিত শর্মাকে খুনের চেষ্টার মামলাতেও এমন কিছু যদি হয়ে থাকে, চমকে যাওয়ার কিছু নেই।
এখনও তাই মনোজ শর্মা এবং ‘গন্দি আন্টি’ ভ্যানিশ। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যাপারে পুলিস যদি নিশ্চিত হয়, তাহলে কেন ফোন ট্র্যাক করা হল না? টাওয়ার লোকেশন কেন দেখা হল না? কেন নানাবিধ ‘অস্ত্র’ হাতে থাকা সত্ত্বেও ঘুরপথে চেষ্টা করলেন না গোয়েন্দারা? এই প্রশ্ন কিন্তু থাকছেই। কালের নিয়মে মামলা তামাদি হতে বসেছে। ব্যর্থতার বোঝা কাঁধে নিয়ে লালবাজারের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় আজও জ্বলজ্বল করছে মনোজ শর্মার নাম!