মানসিক উত্তেজনার বশে ঘরে বাইরে বিবাদে জড়িয়ে অপদস্থ হতে পারেন। হস্তশিল্পীদের পক্ষে দিনটি শুভ। মনে ... বিশদ
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সপ্তাহের মধ্যে মোট চারবার গভীর জঙ্গল থেকে বেরিয়ে লোকালয় সংলগ্ন এলাকায় হানা দিয়েছিল বাঘটি। রবিবার মৈপীঠের বৈকুণ্ঠপুরে গঙ্গার ঘাটে তার পায়ের টাটকা ছাপ মিলেছিল। রাস্তার পাশে মরে পড়ে থাকা গোরু টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করেছিল। এসব দেখে গ্রামবাসীরা খবর দেন বনদপ্তরকে। নলগড়া-কুলতলি বিটের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে স্টিলের জাল দিয়ে দেড় কিলোমিটার জঙ্গল ঘিরে দেন। সন্ধ্যায় খাঁচা পাতেন। একটি খাঁচায় ছাগল টোপ দিয়ে রাখা হয়েছিল। সেই টোপেই বাজিমাত। ধরা দেয় দক্ষিণরায়। খাঁচাবন্দি হতেই গর্জন করতে থাকে সে। সেই গর্জন শুনে বাঘ দেখতে ছুটে আসেন এলাকাবাসী। এরপর জঙ্গলে নেমে খাঁচা তোলেন বনদপ্তরের কর্মীরা। তবে গ্রামবাসীদের বাঘ দেখার ইচ্ছা পূরণ হয়নি। কারণ, খাঁচাটিকে কালো প্লাস্টিক জড়িয়ে নৌকায় তোলা হয়। বাঘ খাঁচাবন্দি হওয়ায় আতঙ্ক কিছুটা হলেও পিছু ছেড়েছে। গত কয়েক দিন ধরে বাঘের আতঙ্কে সন্ধ্যার পর মানুষ পথে বের হচ্ছিল না। গবাদি পশু ঘরে আটকে রাখা হচ্ছিল। শুধু তাই নয়, এই সময় গঙ্গার ঘাটে পর্যটকদের ভিড় থাকে। ঘাট থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে পায়ের ছাপ দেখা গিয়েছে শুনে বাঘের আক্রমণের বিষয়ে অনভিজ্ঞ পর্যটকরা ভিড় করে দেখতে ছুটছেন। তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবাচ্ছিল প্রশাসনকেও। মৈপীঠ থানার পুলিস ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়েছিল। অবশেষে বাঘ খাঁচাবন্দি হওয়ায় এলাকাবাসীর মতো স্বস্তিতে প্রশাসনও।
যদিও বাঘ একটি নাকি দু’টি তানিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, ‘একটি নয়, দু’টি বাঘ এই জঙ্গলে চলে এসেছে।’ তবে বনদপ্তরের কর্তাদের অন্য মত। তাঁরা বলেন, ‘একটি বাঘের পায়ের ছাপই মিলেছে। আজমলমারি ১১ নম্বর জঙ্গল থেকে বেরিয়ে ঠাকুরাণ নদী পার হয়ে সেটি জঙ্গলে এসেছিল। সেটি খাঁচাবন্দিও হয়েছে’। তবে এদিন রাতেও বাঘ দেখতে আসা অনেকেই আরও একটি বাঘ থাকার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। প্রসঙ্গত, নগেনাবাদ থেকে গঙ্গার ঘাট পর্যন্ত জঙ্গল ধরে আসতে বাঘটিকে মোটামুটি ১৫ কিমি পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। আর রাস্তা ধরে এলে ৯ কিমি। এদিন বনকর্মীরা খাঁচা রাখার পাশাপাশি আতসবাজিও মজুত করে রেখেছিল। প্রয়োজনে তা জঙ্গলে চার্জ করার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছিল। দক্ষিণ ২৪ পরগনা বন বিভাগের কর্তাব্যক্তিরাও ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছিলেন। আতঙ্কে ঘুম উড়েছিল গঙ্গার ঘাট সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের। কিন্তু কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বাঘ খাঁচাবন্দি হবে অনেকেই ভাবেননি। স্থানীয়রা বলেন, ‘বাঘ বারবার চলে আসছে। ভয়ে সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে বের হওয়া যায় না। দু’টি বাঘই এসেছে। কারণ একের পর এক এলাকায় পরপর ঢুকে পড়ছে সেগুলি। রাত পাহারার ব্যবস্থা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত ৬ জানুয়ারি মৈপীঠের কিশোরীমোহনপুর শ্রীকান্তপল্লিতে বাঘের পায়ের ছাপ দেখা গিয়েছিল। সাত জানুয়ারি আবার আতঙ্ক দেখা দেয় দক্ষিণ বৈকুণ্ঠপুরে। সেখানেও একটি মৃত ষাঁড়কে টেনে নিয়ে যাওযার চেষ্টা করেছিল একটি বাঘ। ওই দিনই অবস্থান বদল করে উত্তর বৈকুণ্ঠপুরে লোকালয় সংলগ্ন জঙ্গলে চলে যায় সে। আট জানুয়ারি নিজেই আজমলমারি ১১ নম্বর জঙ্গলে ফিরে যায়। ফের ৯ জানুয়ারি নগেনাবাদ এলাকায় বাঘের পায়ের ছাপ। গর্জনে ঘুম ভেঙে যায় বাসিন্দাদের। ১০ জানুয়ারি সে বাঘ নিজেই আজমলমারি এক নম্বর জঙ্গলে ফিরে যায়। এবার আবার বৈকুণ্ঠপুর গঙ্গার ঘাটে কেঁদো বাঘের হানা।