বিশেষ কোনও পারিবারিক কারণে মানসিক দুশ্চিন্তা বাড়তে পারে। কাজকর্মের ক্ষেত্রে বিশেষ সুখবর পেতে পারেন। ... বিশদ
দুধ অতি পবিত্র জিনিস। তা পুজোয় লাগে। সেই দুধ কাটালে অপবিত্র হয়ে যায়। একসময় বাঙালির এই ধারনা ছিল। ফলে ছানার সন্দেশও তৈরি হতো না। সে প্রথা ভাঙল হুগলির ওলন্দাজদের জন্য। তখন চুঁচুড়াকে কেন্দ্র করে ওলন্দাজদের জনবসতি। শোনা যায়, তাদের হেঁশেলে তৈরি হতো কটেজ চিজ। সেটি দুধ কাটিয়ে তৈরি। বাঙালি ধীরে সেই পদ্ধতি রপ্ত করল। তারপর প্রায় বিপ্লব ঘটিয়ে বাঙালির ঘরে তৈরি হতে শুরু হল ছানা। কতিপয় সাহসী মানুষ বিদেশিদের দৌলতে বুঝল, এ ছানা সুস্বাদু। তেমনই পুষ্টিতে ঠাসাও বটে। সেই যে তৈরি হল ছানা এখন তা দিয়ে সন্দেশ-রসগোল্লা বানিয়ে বিশ্বজয় করেছে ফেলেছে বাংলা। ছানা ঠেসে অপেক্ষাকৃত শক্ত করে ক্রমে তৈরি হল পনির। বিশ্বে হরেক রকমের পনির আছে। কিন্তু বাংলার ঐতিহ্যবাহী সেই পনির বিশ্বের দরবারে জায়গা পেয়েছে ব্যান্ডেল কটেজ চিজ হিসেবে। সেই চিজ, বা পনির বা ছানা থেকে যে কেক তৈরি হয়, তারই নাম ব্যান্ডেল কটেজ চিজ কেক। চলতি বাংলায় এর পরিচিতি ছানার কেক নামে। এখন ছানার জয়জয়কার হলেও প্রায় হারিয়ে গিয়েছে ছানার কেক।
কেন হারিয়ে গেল সেই চিজ বা কেক তৈরির চল? হুগলি জেলা মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির চেয়ারম্যান অমিতাভ দে বলেন, ‘এই চিজ বা তা থেকে তৈরি কেক বাংলা থেকে একেবারে হারিয়ে গিয়েছে বললে ভুল হবে। কলকাতার নিউ মার্কেটে ব্যান্ডেল কটেজ চিজ এখনও পাওয়া যায়। তাছাড়া বো বারাকে ক্রিসমাসের আগে নিয়ম করে কটেজ চিজ কেক তৈরি হয়। তা কিনতে কিন্তু রীতিমতো লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয় ক্রেতাদের।’ অমিতাভবাবুর প্রতিষ্ঠান ফেলু মোদকও তৈরি করে ছানার কেক। সাড়ে চারশো টাকা দাম এক কেজির। সেই কেকের কদরও যথেষ্ট। এর পাশাপাশি হুগলির কোথাও কোথাও এখনও এই চিজ তৈরির প্রচলনও রয়ে গিয়েছে।
এক সময় ব্যান্ডেল কটেজ চিজের জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা জিআই তকমা পাওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু গবেষণার অভাবে সে কাজ বেশিদূর এগয়নি। তবে এই ছানার কেক বা চিজ কেক কি বাংলারই নিজস্ব সম্পদ? অনেকে বলেন, বহু দোকানেই তো ছানাপোড়া পাওয়া যায়। তার গড়নও কেকের মতো। সেগুলি ছানার কেক হিসেবেই বিক্রি হয়। ওড়িশায় এই মিষ্টির ব্যাপক প্রসিদ্ধি। অমিতাভবাবুর অবশ্য বলেন, ‘ওড়িশার একরকম মিষ্টি হল ছানা পোড়া। এটি স্টিম বা ভাপিয়ে তৈরি হয়। কারণ ওই মিষ্টি দেবতাকে নিবেদন করা হয়। সেখানে পোড়া মিষ্টি দেওয়া চলে না। চিনি দিয়ে ক্যারামেল করে রং ফুটিয়ে তোলা হয়। আমাদের ছানার কেক তৈরি হয় বেক করে। সাধারণ কেকের মতোই প্রণালী। ছানার কেক অনেক বেশি সুস্বাদু। পুষ্টিকর তো বটেই।’ বাস্তবিকই বো বারাকে বড়দিনের আগে ছানার কেক কেনার জন্য লম্বা লাইন রবিবার। তা দেখে ফিরেও গিয়েছেন বহু ক্রেতা।