নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: গলব্লাডার স্টোনের অপারেশন প্রাইভেটে করাতে পাড়ার নার্সিংহোম থেকে পাঁচতারা হাসপাতাল ভেদে খরচ পড়ে ৩০ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা। আর তাই যদি হয়ে যায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে, ক্ষতি কী! তাও আবার যদি সেই অপারেশন করেন প্রথম সারির সার্জনরা, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। বর্তমানে পিজি হাসপাতালে গলব্লাডার স্টোনের অপারেশন করাতে গেলে লাইন পড়বে কমপক্ষে ৬০০ জন রোগীর শেষে। মানে ওয়েটিং ৬০০! কবে যে তাঁর অপারেশন হবে, তা ওপরওয়ালাই জানেন! ফলে বিরক্তি, ক্ষোভ, ভোগান্তি পোহাতে হয় বাড়ির লোকজনদের। পুরনো রোগীরা সার্জারি বিভাগে অপারেশনের ডেট নিয়ে খোঁজখবর নিলেই সেই এক কথা। হবে, হবে! পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবার অভিনব সিদ্ধান্ত নিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ‘ওয়েটিং’ মেকআপ করে রোগী ও বাড়ির লোকজনকে স্বস্তি দিতে ১০ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি— টানা ৬ দিন এখানকার সার্জারি বিভাগ ২৫০ গলব্লাডার স্টোন অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গোটা সার্জারি বিভাগকে নামানো হচ্ছে এই অভাবনীয় প্রকল্পে। বিভাগীয় চিকিৎসকদের দাবি, ৬ দিনে ২৫০ গলব্লাডার স্টোন অপারেশনের এই উদ্যোগ শুধু রাজ্যেই নয়, দেশেও প্রথম। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শুধু এই প্রকল্পের জন্য হাসপাতালের ১৫০টি বেড তৈরি রাখা হচ্ছে। আশঙ্কাজনক রোগীদের সামলাতে চার-পাঁচটি আইসিইউ বেডও থাকছে। সূত্রের খবর, পিজির অধিকর্তা ডাঃ মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় সার্জারি বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে এই পরিকল্পনা নিয়েছেন। বিভাগীয় প্রধান ডাঃ এ বসু ছাড়াও কো-অর্ডিনেট করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে হাসপাতালের দুই স্বনামধন্য সার্জন অধ্যাপক ডাঃ দীপ্তেন্দ্র সরকার ও সহকারী অধ্যাপক ডাঃ সিরাজ আহমেদকে। প্রসঙ্গত, গণ অপারেশন করে ‘ওয়েটিং’ কমানোর উদ্যোগ কিন্তু রাজ্যে নতুন নয়। এর আগে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এই কাজ করেছিল। কিন্তু দিনে গড়ে ৪০-৪২টি করে ওটি করে, ৬ দিনে ২৫০ অপারেশন করার উচ্চাকাঙ্খী উদ্যোগ। এর আগে কোথাও এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে হাসপাতাল সূত্রে দাবি করা হচ্ছে।
চিকিৎসকমহল সূত্রের খবর, ১০-১৫ ফেব্রুয়ারি রোজ সকাল ৮টায় অপারেশন শুরু হবে। শেষ অপারেশন হবে সন্ধ্যা ৬টায়। অপারেশন থিয়েটারের ৬টি টেবিলেই ওটি চলবে। রোজ শুধু এই কাজের জন্য নামবেন ৩৬ জন চিকিৎসক-নার্স। কিন্তু, ১০ ঘণ্টায় ৪০টি অপারেশন করা কি আদৌ সম্ভব? ডাঃ সিরাজ বললেন, ‘কেন নয়? দক্ষতা, অভিজ্ঞতা অনুযায়ী একজন জেনারেল সার্জনের গলব্লাডার স্টোন অপারেশন করতে ১০ মিনিট থেকে ২ ঘণ্টা পর্যন্ত লাগতে পারে। গড়ে ৪০-৪৫ মিনিট লাগার কথা। পরিকল্পনা করে এই কর্মসূচিতে হাত দেওয়া হচ্ছে। মোটেই অসম্ভব নয়।’