গত মাসেই গিয়েছে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার পথিকৃৎ সত্যেন্দ্রনাথ বসু। এই বিশ্বের অর্ধেক কণাই তাঁর নামাঙ্কিত — বোসন কণা। বাকি ফের্মিয়ন। যতদিন এই পৃথিবীতে আলো থাকবে, ততদিনই ফোটন থাকবে। ততদিনই থাকবে বোসন। আর ততদিনই বোসন স্রষ্টা আলো হয়ে থাকবেন। তাঁর ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকীতে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য। লিখছেন বিনয় মালাকার...
‘যারা বলেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা সম্ভব নয়, তারা হয় বাংলা জানেন না অথবা বিজ্ঞান বোঝেন না’ — এই কথাটি বলেছিলেন বাঙালির গর্বের প্রফেসার সত্যেন্দ্রনাথ বসু। তিনি খাটে থাকলে বিড়াল মেঝেতে, আর তিনি মেঝেতে থাকলে পোষ্য বিড়াল খাটে — পদার্থবিদ্যার জটিল কোয়ান্টাম তত্ত্বের এটাই বোধহয় সরলতম রূপ। পদার্থবিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকে অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে যে নামটি সবচেয়ে নিবিড়ভাবে যুক্ত সেটি হল সত্যেন্দ্রনাথ বসু (বোস)। এই যোগসূত্রের কারণ বোস-আইনস্টাইন স্ট্যাটিস্টিকস, যা কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানে এক বিপ্লব সৃষ্টি করেছিল। এই প্রজন্মের সর্বশ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার হিগস বোসন বা গড পার্টিকেল এবং বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট (বিইসি)— সম্ভব হয়েছে এই সংখ্যাতত্ত্বের জন্যই।
১৮৯৪ সালের ১ জানুয়ারি উত্তর কলকাতার ঈশ্বর মিল লেনে জন্মগ্রহণ করেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু। ১৯১৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে তিনি লেকচারার হিসাবে যোগ দেন। এই সময়ে তিনি এবং মেঘনাদ সাহা আইনস্টাইনের সাধারণ ও বিশেষ আপেক্ষিকতাবাদের বিষয়গুলি জার্মান ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন এবং সেগুলি ‘প্রিন্সিপল অব রিলেটিভিটি’ নামে একটি বই আকারে প্রকাশ করেন। এটাই ছিল আইনস্টাইনের কাজের প্রথম ইংরাজি অনুবাদ। ১৯২১ সালে সত্যেন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে রিডার হিসাবে যোগদান করেন।
১৯২৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একদিন ‘ফোটো ইলেকট্রিক এফেক্ট অ্যান্ড আল্ট্রাভায়োলেট ক্যাটাস্ট্রপি’ পড়ানোর সময় বর্তমান তত্ত্বের দুর্বলতা বোঝাতে গিয়ে তার সঙ্গে পরীক্ষালব্ধ ফলাফলের পার্থক্য তুলে ধরেন। কিন্তু ওই তত্ত্ব প্রয়োগ করতে গিয়ে তিনি একটি ভুল করে বসেন। যার কারণে পরীক্ষালব্ধ ফলাফলের সঙ্গে তত্ত্বের অনুমান একেবারে মিলে যায়। ‘প্লাঙ্কস ল অ্যান্ড দ্য লাইট কোয়ান্টা হাইপোথিসিস’ নামে একটি প্রবন্ধ লিখে সত্যেন্দ্রনাথ বসু তখন পাঠিয়ে দিলেন ইংল্যান্ডের বিখ্যাত জার্নাল ‘ফিলসফিক্যাল ম্যাগাজিন’-এ।
কিন্তু প্রবন্ধটি সেখানে প্রকাশের যোগ্য বিবেচিত হল না। এরপর সত্যেন্দ্রনাথ বসু সেটি পাঠিয়ে দিলেন জার্মানিতে, খোদ আইনস্টাইনের কাছে। চিঠিতে আইনস্টাইনকে লিখলেন, ‘আমি আপনার অনুভূতি এবং মতামতের জন্য আপনাকে এর সঙ্গে প্রবন্ধটি পাঠাচ্ছি। আপনি এ ব্যাপারে কী ভাবছেন তা জানার জন্য আমি উদ্বিগ্ন হয়ে আছি...’। সত্যেন্দ্রনাথ বোসের প্রতিভাকে চিনতে ভুল করেননি আইনস্টাইন। তিনি প্রবন্ধটি জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে ‘জাইটশ্রিফট ফ্যর ফিজিক’ জার্নালে প্রকাশনার ব্যবস্থা করলেন। সত্যেন্দ্রনাথ বোসের প্রবন্ধ সম্পর্কে আইনস্টাইন লিখলেন, ‘আমার মতে বোস কর্তৃক প্লাঙ্কের সূত্র নির্ধারণ পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’
জন্ম হল নতুন এক সংখ্যাতত্ত্বের — বোস-আইনস্টাইন সংখ্যাতত্ত্ব। সত্যেন্দ্রনাথ বসু তার এই প্রবন্ধটিতে ক্লাসিক্যাল পদার্থবিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়াই প্লাঙ্কের কোয়ান্টাম তত্ত্ব প্রতিপাদন করেন এবং সদৃশ-অভিন্ন কণার (ভরহীন ফোটন কণা) দশার সংখ্যা গণনার একটি উপায় বর্ণনা করেন। এই প্রবন্ধটি ছিল মৌলিক এবং কোয়ান্টাম পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে রচিত। বোসের এই ধারণাটি গ্রহণ করে আইনস্টাইন প্রয়োগ করলেন ভরযুক্ত পরমাণুতে। পাওয়া গেল পদার্থের এক নতুন অবস্থা, যা বর্তমানে বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট বা বিইসি নামে পরিচিত। বিইসি আসলে খুব নিম্ন তাপমাত্রার বোসন কণার (ফোটন কণার) একটি ঘনীভূত স্যুপ।
বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট হল পদার্থের একটি বিশেষ অবস্থা — বোস গ্যাসকে (ফোটন গ্যাস) যখন পরমশূন্য তাপমাত্রার (মাইনাস ২৭৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। অর্থাৎ ০ কেলভিন। যেখানে হিমাঙ্ক ০ সেন্টিগ্রেড) খুব কাছাকাছি তাপমাত্রায় ঠান্ডা করা হয় তখন বহু সংখ্যক ফোটনকণা সর্বনিম্ন কোয়ান্টাম স্তরটি দখল করে। তাপমাত্রা যত কমে পরমাণুর গতিশক্তিও তত কমে, ধীরে ধীরে স্থির হয়ে যায় এবং সর্বনিম্ন শক্তিস্তরে চলে আসে। বোস গ্যাস হল, চিরায়ত আদর্শ গ্যাসের কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সংস্করণ। এটি বোসন কণা দ্বারা গঠিত, যাদের পূর্ণসংখ্যক ঘূর্ণনমান আছে এবং এরা বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান মেনে চলে। ১৯৯৫ সালে এরিক কর্নলে, কার্ল ওয়াইমেন এবং উলফ গেঙ্গ কেটারলি পরীক্ষামূলকভাবে বিইসির অস্তিত্ব প্রমাণ করেন এবং এরজন্য ২০০১ সালে তাঁরা পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান।
পদার্থের পাঁচটি অবস্থার (কঠিন, তরল, গ্যাস, প্লাজমা ও বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট) মধ্যে বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট সবচেয়ে রহস্যময়। পরমশূন্য তাপমাত্রার কাছে পৌঁছনোর ফলে বিজ্ঞানীদের কাছে এক নতুন রোমাঞ্চকর, বিস্ময়ে ভরা জগৎ খুলে গিয়েছে — কোয়ান্টাম। হাজার হাজার বিজ্ঞানী সেই জগৎকে বোঝার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির চেষ্টা করছেন। যা পাল্টে দিতে পারে মানব সভ্যতাকে।
১৯৬৪ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী পিটার হিগস প্রস্তাব দেন হিগস ফিল্ড এবং হিগস বোসনের। হিগস ফিল্ড হল, অদৃশ্য এক বল বা শক্তিক্ষেত্র যা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে। আর হিগস বোসন হল এমন এক কণা যা অন্যদেরকে ভর দেয়। অর্থাৎ হিগস বোসন হল হিগস ফিল্ডের বাহক। যেমন করে ফোটন হল তড়িৎ-চুম্বকীয় ক্ষেত্রের বাহক। যে কণা হিগস ফিল্ডের সঙ্গে যত বেশি নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করবে তার ভর তত বেশি হবে। ফোটনের মতো কণা যারা হিগস ফিল্ডের সঙ্গে কোন সম্পর্ক তৈরি করে না, তারা ভরহীন। অর্থাৎ কোন বস্তুর ভরের কারণ হল হিগস বোসন।
২০১২ সালে লার্জ হ্যার্ডন কোলাইডার পরীক্ষায় হিগস বোসন কণার অস্তিত্ব ধরা পড়ে এবং পিটার হিগসকে এই জন্য ২০১৩ সালে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। অর্থাৎ হিগস বোসন প্রস্তাবনার (১৯৬৪) মাত্র ৪৮ বছর পর এটিকে পরীক্ষাগারে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট প্রস্তাব (১৯২৪) করার ৭৭ বছর (২০০১) পর পরীক্ষাগারে এর অস্তিত্ব ধরা পড়ে। প্রশ্ন হল বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট শনাক্ত করতে এত দীর্ঘ সময় কেন লাগল? কেন না গবেষণাগারে বিইসির অস্তিত্ব প্রমাণ করার মতো প্রয়োজনীয় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি গত শতাব্দীর ন’য়ের দশকের আগে পর্যন্ত ছিল না। ১৯৮০ দশকে লেজার কুলিং (এটা মাইক্রোকেলভিন পর্যন্ত শীতল করতে পারে) উদ্ভাবিত হয় এবং ১৯৯০-এর গোড়ার দিকে চৌম্বকীয় বাস্পীভবন কুলিং (এটা ন্যানোকেলভিন পর্যন্ত ঠান্ডা করতে পারে) উদ্ভাবিত হয় এবং এই সমস্ত কৌশলগুলি জানার পরই বিইসির অস্তিত্ব প্রমাণ করা সম্ভব হয়।
যদি বিইসির অস্তিত্ব ১৯৭৪ সালের আগে প্রমাণ করা যেত, তবে হয়তো সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার কথা নোবেল কমিটি ভাবত। ২০১২ সালে কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে তদানীন্তন সার্নের ডিরেক্টর-জেনারেল রলফ হিউয়ার বলেন ‘সত্যেন্দ্রনাথ বোসের নোবেল পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল।’ নোবেল ফাউন্ডেশন কমিটির তরফে মরণোত্তর নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় না। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার পথিকৃৎ, কোয়ান্টাম স্ট্যাটিসটিক্সের উদ্ভাবক সত্যেন্দ্রনাথ বসু ১৯৭৪ সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অনেকেই মনে করেন বোস-আইনস্টাইন সংখ্যাতত্ত্ব, বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট এবং বোসন কণার জনক সত্যেন্দ্রনাথ বোসের নোবেল পুরস্কার না পাওয়াটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
এই মানুষটি বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার প্রবল সমর্থকই শুধু ছিলেন না, সারাজীবন তিনি এই ধারাটিকে লালন করেছেন। বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার প্রসারের উদ্দেশ্যে ‘বিজ্ঞান পরিচয়’ নামে একটি পত্রিকাও তিনি প্রকাশ করতেন। তাঁর নেতৃত্বেই ১৯৪৮ সালে কলকাতায় ‘বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ গঠিত হয়। ১৯৬৩ সালে ‘জ্ঞান ও বিজ্ঞান’ পত্রিকাতে কেবলমাত্র মৌলিক গবেষণা নিবন্ধ নিয়ে ‘রাজশেখর বসু সংখ্যা’ প্রকাশ করেন। তিনি দেখান যে, বাংলা ভাষাতেও বিজ্ঞানের মৌলিক নিবন্ধ রচনা করা সম্ভব। বিজ্ঞানসাধক এই মানুষটিকে নিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ নিজেও বলেছেন, ‘A man of genius with a taste for literature and who is scientist as well’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩৭ সালে বিজ্ঞান বিষয়ক বই ‘বিশ্ব পরিচয়’ লেখেন এবং সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে এই বইটি তিনি উৎসর্গ করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে সত্যেন বোস বলেন, ‘নোবেল পুরস্কার লাভ করলেও আমি এতটা কৃতার্থ বোধ করতাম না।’ নোবেল পুরস্কার না পাওয়র প্রসঙ্গে সত্যেন্দ্রনাথ নিজে অবশ্য জানিয়েছিলেন, ‘আমার প্রাপ্য সমস্ত স্বীকৃতি আমি পেয়েছি। বিজ্ঞানে আবিষ্কারটাই আসল কথা। কে করলেন তাতে কী যায় আসে?’ আসলে বিজ্ঞানের মহাকাশে চিরস্থায়ী এক নক্ষত্রের নাম সত্যেন্দ্রনাথ বসু।
(লেখক হুগলি জেলার নেতাজি মহাবিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান)
আইনস্টাইনকে লেখা সত্যেন্দ্রনাথের প্রবন্ধ
বোস তার প্রবন্ধে যা দেখিয়েছিলেন তা হল, ফোটনের ক্ষেত্রে ক্ল্যাসিকাল পরিসংখ্যানের কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই। এর জন্য নতুন একটি পরিসংখ্যান প্রয়োজন যা এখন বোস-আইনস্টাইন সংখ্যাতত্ত্ব নামে পরিচিত। বোস-আইনস্টাইন সংখ্যাতত্ত্বে ধরা হয় ফোটনগুলি সদৃশ এবং অভিন্ন। এদেরকে আলাদা করে চেনা যায় না এবং এরা ক্ল্যাসিকাল গ্যাসের অণুগুলির মতো নয়। ফোটনের বেলায় একসঙ্গে থাকার সম্ভাবনা (বাঞ্চিং প্রোবাবিলিটি) গ্যাসের অণুগুলির (এরা সদৃশ কিন্তু এদেরকে আলাদা করে চেনা যায়) তুলনায় বেশি। একটি উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে। যদি দুটি স্বতন্ত্র মুদ্রাকে টস করা হয়, তবে দুটি হেড (এইচ) বা দুটি টেইল (টি) পড়ার সম্ভাবনা এক-চতুর্থাংশ। অর্থাৎ ২৫ শতাংশ। কারণ এক্ষেত্রে সম্ভাব্য ফলাফলগুলি হল এইচএইচ, টিটি, এইচটি এবং টিএইচ। কিন্তু মুদ্রাগুলি যখন অভিন্ন-সদৃশ হয়, তখন সম্ভাব্য ফলাফলগুলি হল এইচএইচ, টিটি, এইচটি। এবং একত্রিত হওয়ার সম্ভাবনা এক-তৃতীয়াংশ। অর্থাৎ ৩৩.৩৩ শতাংশ। অর্থাৎ অভিন্ন-সদৃশ ফোটনের বেলায় একত্রিত হওয়ার সম্ভাবনা ২৫ থেকে বেড়ে হয় ৩৩.৩৩ শতাংশ। বিংশ শতাব্দীতে যে চারটি তত্ত্ব পুরনো কোয়ান্টাম ফিজিক্স থেকে নতুন কোয়ান্টাম মেকানিক্স আবিষ্কারের পথ প্রশস্ত করেছিল, সে চারটি হল — ১) ম্যাক্স প্লাঙ্কের কোয়ান্টাম তত্ত্ব, ২) আইনস্টাইনের আলোক তড়িৎ প্রক্রিয়া ৩) নীলস বোরের পরমাণু মডেল এবং ৪) বোস সংখ্যাতত্ত্ব।