বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
রাজ্য

মামনির জন্য জাস্টিস কে চাইবে?
শান্তনু দত্তগুপ্ত

অভয়ার সঙ্গে মামনি রুইদাসের ফারাক কোথায়? একটাই। মামনির জন্য কেউ ‘জাস্টিস চাই’ লেখা ব্যানার নিয়ে পথে নামেনি। তাঁর জন্য একটাও মোমবাতি জ্বলেনি। জ্বলবেও না। কারণ তিনি ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার নন। তাঁর পরিবারের টাকা বা ‘প্রভাবে’র জোর নেই। আর সবচেয়ে বড় কথা, যাঁরা সমাজ সংস্কারের নামে এই সেদিনও রাত দখল করেছেন, সেই ডাক্তারদের একাংশই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে মর্মান্তিক প্রসূতি মৃত্যুতে অভিযুক্ত। হ্যাঁ, এই মৃত্যুও মর্মান্তিক। ঠিক অভয়ার মতো। আর জি কর মেডিক্যালে আমাদেরই ঘরের এক মেয়ে বেঘোরে প্রাণ দিয়েছিল। মেদিনীপুর মেডিক্যালেও প্রাণ দিয়েছে তেমনই একটি মেয়ে। সদ্য সন্তানের জন্ম দিয়েছিল সে। মন ভরে তাকে দেখার সুযোগও পায়নি। কেন? তদন্ত রিপোর্ট বলেছে, ‘অপটু হাতে’ অপারেশন। সেটাই প্রাণঘাতী হয়ে গিয়েছে মামনির জন্য। সিজারের পর আরও চারজনের অবস্থা ভালো ছিল না সেদিন। নাঃ! জুনিয়র ডাক্তারদের রাজপথে দেখা যায়নি। তথাকথিত নাগরিক সমাজকেও না। কারণ, এখানে রাজনীতি করার পরিস্থিতি নেই। এখানে নিজেদের স্বার্থ বুঝে নেওয়ার রসদ নেই। সুযোগ নেই প্রশাসনকে ব্ল্যাকমেল করে আখের গুছানোর। যে চিকিৎসকরা কয়েক মাস আগেও স্রোতে ভেসেছিলেন, তাঁরা এবার এই সার কথাটা বুঝে গিয়েছেন। তাই ১২ জন ডাক্তারের সাসপেনশনের পর কর্মবিরতির ডাক সত্ত্বেও তাঁরা সাড়া দেননি। তাঁরা কাজে গিয়েছেন। রাজনীতির মঞ্চে নয়। দুঃখ একটাই, এই বোধটা যদি কয়েক মাস আগে হতো...! তাহলে? জাস্টিসের জন্য ১৬২ দিন অপেক্ষা করতে হতো না। আন্দোলনের নাম দিনের পর দিন রাজনীতির শিকার হতে হতো না সাধারণ মানুষকে। দোকানপাট বন্ধ করে মাথায় হাত দিয়ে বসতে হতো না ছোটখাটো ব্যবসায়ীদের। আর লক্ষ লক্ষ রোগীকে বিনা চিকিৎসায় ফিরে যেতে হতো না সরকারি হাসপাতাল থেকে। 
ক্ষতি সেদিন শুধু অভয়ার বাবা-মায়ের হয়নি। ক্ষতির মুখে পড়েছিল গোটা বাংলা। তরতাজা, নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি এক ছাত্রীর প্রাণহানির ক্ষতি। শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলার সম্মান ধুলোয় মেশানোর ক্ষতি। কর্মবিরতির নামে রাজনীতির চোরাবালিতে ডুবে গিয়েছে এই রাজ্যেরই কোটি কোটি মানুষ। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসার আশায় বসে থাকা প্রাণগুলো কিন্তু আর ফিরবে না। মরিয়া হয়ে কাছের মানুষটাকে বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করিয়ে কোমর ভেঙে যাওয়া পরিবারগুলোও আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না। ছোট্ট মুদি দোকানটা বিক্রি করে তাঁদের কেউ এখন হয়তো মাটি ফেলছেন। কেউ হয়তো কাজ খুঁজে নিয়েছেন ইটভাটায়। তাঁদের ক্ষতিপূরণ কে দেবে? চিকিৎসকদের একাংশ আন্দোলন শিখরে থাকার সময় দুনিয়াভর ‘ডোনেশন’ বাবদ যে অর্থ কামিয়েছিলেন, তার থেকে কি ওই মানুষগুলো ক্ষতিপূরণ পাবেন? নাকি সরকারি হাসপাতালের রোগীদের মরতে ছেড়ে দিয়ে বেসরকারি নার্সিংহোমে দেদার প্র্যাকটিসের টাকা তুলে দেবেন মামনি রুইদাসের পরিবারের হাতে?
সমাজের যে দিকটা আপনাদের নজরে আসে না... সেই শ্রেণির মানুষের ঘরে একবার উঁকি দিয়ে দেখুন। এই প্রশ্নগুলোই শুনতে পাবেন। ডাক্তারদের বিরুদ্ধে আমরা কেউ নই। কিন্তু আমরা অবশ্যই এই রাজনীতির বিরুদ্ধে। আম জনতার কাছে ডাক্তাররা ভগবানের থেকে কম নন। চোখ বন্ধ করে তাঁদের হাতে তুলে দেন প্রিয় মানুষটাকে। কিন্তু সেই ডাক্তারই যখন বলেন, ‘কর্মবিরতি চলছে। সব মিটলে আসুন’... অসহায় চোখগুলো দৃষ্টি হারায়। ক্ষতি এই চোখের জলও। 
ছ’মাস খুব কম সময় নয়। আম আদমি হিসেবে অঙ্ক কষতে বসুন। ভেবে দেখুন, এই ১৬২ দিনে কী পেলেন, আর কী হারালেন। আর যদি পেয়েই থাকে, কারা পেল? কী স্বার্থ পূরণ হল তাদের? এই ১৬২ দিনে একদিকে বিচার চলেছে আর জি কর কাণ্ডের। আর অন্যদিকে স্রেফ রাজনীতির নামে বিচারের কাঠগড়ায় তুলে দেওয়া হয়েছে বাংলাকে। ঘটনাস্থলে সঞ্জয় একা ছিল না, বৃহত্তর ষড়যন্ত্র, সন্দীপ ঘোষ প্ল্যান করেছিলেন, কলকাতা পুলিস ঠিকমতো তদন্ত করেনি... এমন বহু তত্ত্ব এই ১৬২ দিনে সামনে আনা হয়েছে। শনিবার শিয়ালদহের বিশেষ আদালতের বিচারক যখন রায় ঘোষণা করছেন, এই সব থিওরি ততক্ষণে হাসপাতালের মর্গে শুয়ে পড়েছে। কারণ, আইন-আদালত তত্ত্বে বিশ্বাসী নয়। কোনওদিন ছিল না। ভবিষ্যতেও থাকবে না। মিডিয়া ট্রায়াল বা আন্দোলন মঞ্চ থেকে জন্ম নেওয়া তথাকথিত ‘বিচার’ তাই চায়ের সঙ্গে ‘টা’ হিসেবে ভালো লাগতে পারে। দিনের শেষে নিরামিষ তথ্য-প্রমাণই প্রকৃত দোষীকে সমাজের সামনে বেআব্রু করবে। এদিন সেটাই হয়েছে। আর ‘বর্তমান’ আরও একবার প্রমাণ করেছে, গল্প লেখা, আর খবর করা এক জিনিস নয়।
জাস্টিস প্রত্যেক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিক চায়। আর জি করের মর্মান্তিক খুনের ঘটনাতেও চেয়েছিল। এখনও চাইছে। এবং পেয়েছে। গোটা বাংলা মনেপ্রাণে প্রার্থনা করছে, কাল দোষীর যেন ফাঁসির সাজাই হয়। কিন্তু জাস্টিসের নামে যদি সমাজের দুর্বল অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়? আগামী কাল সঞ্জয়ের ফাঁসির সাজা হলেও কিন্তু বিচার সম্পূর্ণ হবে না।
মেদিনীপুর মেডিক্যালে জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য ডঃ অর্চনা মজুমদার।
1d ago
কলকাতা
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

শেয়ার প্রভৃতি ক্ষেত্র থেকে অর্থাগমের সম্ভাবনা।  সন্তানের কর্ম প্রাপ্তির সুখবর পেতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে জটিলতা কিছুটা...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৭৮ টাকা৮৭.৫২ টাকা
পাউন্ড১০৩.৬৮ টাকা১০৭.৩৮ টাকা
ইউরো৮৭.৬০ টাকা৯০.৯৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
19th     January,   2025
দিন পঞ্জিকা