সামাজিক কল্যাণ কর্মে সাফল্য ও জনখ্যাতি। বাতজ সমস্যায় বিব্রত হতে পারেন। কাজ কারবারে শুভ। ... বিশদ
নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ আমলে এলাকার জমিদার ছিলেন আশারাম রায়। নবাব তাঁকে রায় ও পরে বাবু উপাধি দেন। সেই সময় আশপাশের গ্রামে কোনও দুর্গাপুজোর চল ছিল না। তাই মানুষকে পুজোর দিনগুলিতে আনন্দ দিতে দেবী দুর্গার আরাধনা করেছিলেন তিনি। তখন মাটির তৈরি মন্দিরে একচালার প্রতিমাকে সামনে রেখে পুজো শুরু হয়। আজও প্রাচীন প্রথা বজায় রেখে পুজো চালিয়ে আসছেন তাঁর বংশধরেরা। তবে বহু বছর আগে মন্দিরটি পাকা করা হয়েছে। অতীতে বোধনের দিন থেকে পুজো শুরু হতো। পুজোতে মোষ, মেষ ও পাঁঠা বলি দেওয়া হতো। এখনও সেই রীতির কোনও পরিবর্তন হয়নি। বোধনের দিন প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে পুজো শুরু হয়। প্রদীপ জ্বলে মায়ের ঘট বিসর্জন পর্যন্ত।
চিরাচরিত নিয়মানুযায়ী পরিবারের বয়স্ক সদস্যর নামে পুজোর সংকল্প হয়। এবার ৯২ বছরের উমানাথ রায়ের নামে সংকল্প হবে পুজো। তাঁর ভাই স্বদেশরঞ্জন রায় বলেন, চিরাচরিত প্রথা মেনে বোধনের দিন একটি পাঁঠা বলি দেওয়া হয়। এরপর প্রতিদিন পুজো ও ভোগ নিবেদন করা হয়। ষষ্ঠী থেকে মৃন্ময়ী মূর্তির পুজো নিবেদন করা হয়। সপ্তমীর দিন দেবী মূর্তির সামনে তিনটি বলিদান হয়। সন্ধিপুজোয় একটি। নবমীর দিন চারটি পাঁঠা, একটি মোষ ও একটি মেষ বলি দেওয়া হয়। বোধন থেকে দেবীর অন্নভোগের সঙ্গে অবশ্যই লাগে কচুর শাক।
দশমীর দিন সকালে কুমারী পুজো ও সিঁদুর খেলা এবং পরে বাইচে করে প্রতিমা গ্রাম প্রদক্ষিণ করিয়ে দিঘিতে নিরঞ্জনের মধ্য দিয়ে পুজোর সমাপ্তি হতো। এখন সেই রীতিতে বদল এসেছে। দেবী মূর্তি ট্রাক্টরে চাপিয়ে গ্রাম প্রদক্ষিণের পর নিরঞ্জন দেওয়া হয়। এরপর একটু একটু করে নিভে যেতে থাকে সংকল্প প্রদীপ। রাতেই অপরাজিতার স্তোত্রপাঠের মধ্য দিয়ে শেষ হয় পুজো।
পরিবারের সদস্যরা বলেন, আগে পুজোয় বিলাসিতা ছিল। বসত নাচের আসর। বিভিন্ন জায়গা থেকে জমিদাররা পুজোর সময় আসত। এখন সেসব অতীত। তবে এই পরিবারের বেশ কিছু মানুষ কর্মসূত্রে বাইরে থাকলেও পুজোর দিনগুলিতে তাঁরা গ্রামে আসেন।
স্বদেশবাবু বলেন, এই পুজোরও আগে আশারাম রায়ের কাকা গোলাপ আচার্য গ্রামে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। তিনিও রায় উপাধি পেয়েছিলেন। তখন পিতৃহারা আশারাম রায় ছিলেন নাবালক। সাবালক হওয়ার পর পৃথক হয়ে যাওয়ায় পুজোও ভাগ হয়ে যায়। তখন থেকেই গ্রামে রায়বাড়ির দু’টি পুজো হয়। একটি রায়বাড়ির, অন্যটি বাবুপাড়ার রায়বাড়ির পুজো। দু’টি পুজোয় একসঙ্গে ঘট ভরা থেকে বিসর্জন হয়। গ্রামের প্রবীণ মানুষরা বলেন, জাঁকজমক কমলেও দু’টি পুজোর নিষ্ঠার কোনও পরিবর্তন হয়নি। রাত জেগে ঠাকুর দেখতে গেলেও এই দুই পুজো দেখতে যাওয়া হয়ই। ওখানে না গেলে পুজো অসম্পূর্ণ থেকে যায়।