আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সমাগমে আনন্দ বৃদ্ধি। চারুকলা শিল্পে উপার্জনের শুভ সূচনা। উচ্চশিক্ষায় সুযোগ। কর্মক্ষেত্রে অযথা হয়রানি। ... বিশদ
বীরভূম বন বিভাগের অন্তর্গত ইলামবাজার জঙ্গলের ধারে আমখই গ্রাম। ২০০৬ সাল নাগাদ গ্রামের জলাভাব মেটানোর জন্য পুকুর খোঁড়ার সময় মেলে বেশ কিছু কাঠ জীবাশ্ম। পরীক্ষা করে জানা যায় যে, এই অ্যাঞ্জিওস্পার্ম কাঠ জীবাশ্ম দেড় থেকে ২ কোটি বছর প্রাচীন— মায়োসিন যুগের গাছপালার স্মৃতি।
ইলামবাজার শহরের এক প্রান্তে জঙ্গলের গা ঘেঁষে সাজিয়ে গুছিয়ে তৈরি হয়েছে আমখই ফসিল পার্ক। বোলপুর রোড (ধল্লা বাস স্ট্যান্ড) থেকে লাল মাটির পথ জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে গিয়ে আপনাকে হাজির করবে পার্কের গেটে। মুখেই একটা ক্যান্টিন। এখানেই গাড়ি-বাইক রেখে হেঁটে প্রবেশ করতে হবে ফসিল পার্কে। সকাল দশটা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত পার্ক খোলা থাকে। কোনও প্রবেশমূল্য নেই।
নানা ধরনের গাছ দিয়ে সাজানো পার্কটি দেখলে প্রথমে মনে হবে কোনও বোটানিক্যাল গার্ডেনে এসে পড়েছেন। ঢুকতেই সামনে পড়বে পুকুরটি যেখান থেকে প্রথম জীবাশ্মগুলি মেলে। বাঁধানো রাস্তা ধরে এগিয়ে চলুন। দেখবেন, বাগানের মধ্যে বেশ যত্ন করে সাজানো ফসিলগুলি। রয়েছে ছোট্ট কাঠের ব্রিজ। যদিও এখনও কোনও গাইড সিস্টেম চালু হয়নি, কিন্তু ফসিল সম্বন্ধে দু-চার কথা লেখা বোর্ডগুলি পড়ে অনেক কিছু জানতে পারবেন।
বলা হয় যে, পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলা— যেমন বীরভূম, বর্ধমান, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, এমনকী ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার বিভিন্ন জায়গায় কাঠ জীবাশ্মর দেখা মেলে। এছাড়া এমনও কিছু গাছ এই প্রাচীন জঙ্গলে ছিল, যা পরবর্তীকালে বিজ্ঞানীরা বর্তমানে ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালা, মায়ানমার, মালয়েশিয়ার জঙ্গলেও দেখতে পেয়েছেন। আমখই গ্রামে পাওয়া কাঠ জীবাশ্ম অতীতের রাজমহল পাহাড় ও ছোটনাগপুর মালভূমি থেকে বীরভূমের উত্তর-পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত বৃহৎ অরণ্যের উপস্থিতি প্রমাণ করে বলে বনবিভাগের ধারণা। তাদের মতে, দেড় থেকে দু’কোটি বছরের প্রাচীন এই বিস্তৃত অরণ্যের গাছপালা রাজমহল পাহাড় ও ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চল থেকে বন্যায় নদীর স্রোতে ভেসে এসে রাঢ় অঞ্চলে কাদা ও বালি চাপা পড়ে প্রস্তরীভূত অরণ্যে পরিণত হয়েছে।
বেশি সময় লাগে না পার্কটি ঘুরে দেখতে। ছবি তুলতেও বাধা নেই। তবে কোনওভাবেই ফসিলের কাছে যাবেন না। পার্কের নিয়মগুলি অবশ্যই পালন করবেন। একটি মিউজিয়ামও চালু হওয়ার কথা আছে। অদূর ভবিষ্যতে পার্কটি আরও সুন্দর করে সাজানোর পরিকল্পনা আছে— যেমন ডিয়ার পার্ক, ছোটদের খেলার জায়গা ইত্যাদি।
ইতিমধ্যে দেশের প্রথম সারির ফসিল পার্কগুলির মধ্যে আমখই উড ফসিল পার্ক জায়গা করে নিয়েছে। ইদানীং বিশ্বজুড়ে ভূতত্ত্ব-নির্ভর পর্যটন বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করছে। তাই আশা করা যায়, খুব শীঘ্রই আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে বীরভূমের এই স্বল্প পরিচিত পার্কও জায়গা করে নেবে। ছবি: লেখক