বিদ্যার্থীরা শুভ ফল লাভ করবে। মাঝে মাঝে হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় ক্ষতি হতে পারে। নতুন ... বিশদ
মানব সভ্যতার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা করে নিয়েছে যোগ। প্রায় গোটা বিশ্ব জুড়েই ছড়িয়ে পড়েছে যোগের প্রভাব। ‘যোগ’ কথাটির অর্থ হল ‘সংযোগ করা’। যোগাভ্যাসের মূলে রয়েছে মন এবং আত্মা। কখনও যোগের মাধ্যমে আত্মার সঙ্গে মনের মিল ঘটানোর হয়, কখনও আবার আলাদা করা হয়।
নির্দিষ্ট সময়ের উপর নির্ভর করে যোগকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। সেই ভাগগুলি হল—
প্রি ক্লাসিক্যাল যোগা— হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মে প্রভাব দেখা যায় এই সময়ের যোগে। এই যোগের মাধ্যমে মন ও আত্মার মিলন ঘটানো হতো।
ক্লাসিক্যাল যোগা—অষ্টগুণ পথের এবং যোগ সূত্র নীতি ছিল এই পর্যায়ের যোগের মূল বৈশিষ্ট্য। আত্মাকে শুদ্ধ করার জন্য মন এবং শরীরকে আলাদা করাই ছিল এই স্তরের যোগের মূল উদ্দেশ্য।
পোস্ট ক্লাসিক্যাল যোগা— প্রাচীন যোগের বিভিন্ন পদ্ধতি এবং নীতিগুলিকে এখনকার জীবনযাত্রায় জড়িয়ে ফেলাটাই এই যোগের মূল কাজ। পঞ্চগুণ পথে বিভিন্ন যোগাসন, ধ্যান এবং খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে মানুষের জীবনকে পরিপূর্ণ করে তোলাই এই যোগের উদ্দেশ্য।
প্রাচীন ঋষি থেকে আজকে যুগ পর্যন্ত যোগের বিভিন্ন ধরন তৈরি হয়েছে। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—
ভক্তি যোগ— এক্ষেত্রে যোগের আধ্যাত্মিক বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাই এই ধরনের যোগাভ্যাসে কঠিন শারীরিক অভ্যাস থাকে না বললেই চলে। যোগের পথে পা বাড়িয়ে চূড়ান্ত আধ্যাত্মিকতাকে খুঁজে পাওয়াই এই যোগের মূল লক্ষ্য।
কর্ম যোগ— ব্যক্তির জীবনে নিয়মানুবর্তিতা আনার বিষয়টিই এই যোগে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। কর্ম যোগে ব্যক্তিকে নিজের থেকে বের করে গোটা ব্রহ্মাণ্ডের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলে।
জ্ঞান যোগ— জ্ঞানের চতুর্থ স্তম্ভের নিয়ম মেনেই এই যোগ করা হয়। শরীরে সঙ্গে মন এবং আত্মাকে মিলিয়ে দেওয়াই এই যোগের উদ্দেশ্য।
রাজ যোগ— এই যোগের মাধ্যমে ব্যক্তি মানসিক নিয়ন্ত্রণ আনতে পারেন। ভারসাম্য পূর্ণ জীবনযাপন করার জন্য রাজ যোগ অত্যন্ত উপযোগী। বিভিন্ন আসন ও ধ্যানের মাধ্যমে ব্যক্তির চিন্তার উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে পারে এই যোগ।
ক্রিয়া যোগ— অন্যতম প্রাচীন যোগ পদ্ধতি হল ক্রিয়া যোগ। জ্ঞানলাভের অন্যতম পথ হল এই যোগ।
তবে এখন বিশ্বব্যাপী যোগের জনপ্রিয়তায় বেশকিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে হট যোগা এবং বিয়ার যোগার মতো বেশকিছু বিষয়কে যোগ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। তবে সত্যি বলতে, এর মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছাড়া আর কিছুই ছড়ানো হচ্ছে না। তাই এই ধরনের যোগার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির ফলে আখেরে মানুষ সমস্যারই সম্মুখীন হচ্ছেন। কিন্তু আসল যোগ সম্পূর্ণ অন্য কথা বলে। নির্ভেজাল যোগশাস্ত্র নিয়ে নিয়মিত পড়াশোনা চালানো দরকার।
অতীতের তুলনায় এখন মানুষ অনেক বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হয়েছে। আর মানুষকে শারীরিক এবং মানসিক দুই দিক দিয়েই সুস্থ রাখতে পারে যোগ। যোগের উপকারিতার বিষয়টিকে সম্মান জানিয়ে গোটা বিশ্ব জুড়ে ২১ জুন যোগ দিবস পালিত হয়। তাই যোগের প্রতি মানুষের ঝোঁক দিনদিন আরও বাড়ছে। আর যোগের এই বাড়বাড়ন্তের ফলেই সারা পৃথিরী জুড়ে যোগ প্রশিক্ষকের চাহিদাও অনেক গুণ বেড়েছে। তাই এই সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগিয়ে যোগের উপর বিএসসি এবং এমএসসি ডিগ্রি করে নিজের কেরিয়ারকে সঠিক পথে চালনা করা যেতেই পারে।
যোগায় কেরিয়ার
রিসার্চ অফিসার-যোগা এবং ন্যাচেরোপ্যাথি
যোগা অ্যারোবিকস ইনস্ট্রাকটর
আয়ুর্বেদ চিকিৎসকের সহকারী
যোগ প্রশিক্ষক
যোগ শিক্ষক
হোলিস্টিক কাউন্সেলর
যৌগিক বিজ্ঞানের রিসার্চ অফিসার
সহকারী যোগা থেরাপিস্ট
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের সহকারী
যোগা থেরাপিস্ট
থেরাপিস্ট এবং ন্যাচেরোপ্যাথ
হেলথ ক্লাবের প্রশিক্ষক)
সমস্ত দিক পর্যালোচনা করে বলা যায়, যোগশিক্ষার জন্য প্রকৃত প্রশিক্ষণ এবং প্রশিক্ষকের দরকার। যোগশিক্ষায় বিএসসি এবং এমএসসি কোর্সগুলি ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এতএব যোগ বিষয়ে গভীরে জানেন এমন পেশাদার লোকের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। একটা কথা বলা দরকার যে, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ও সার্বিকভাবে ভালো থাকতে যোগের অবদানের সঙ্গে বিবর্ধনও প্রয়োজন। তাই এক্ষেত্রে বৃদ্ধি পাচ্ছে শিক্ষিত গবেষকের চাহিদাও। আরও একটা বড় ব্যাপার হল, যোগ শিক্ষা শেষ হওয়ার পর সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার মুখাপেক্ষী হওয়ার দরকার পড়ে না। নিজেও স্বতন্ত্রভাবে কাজ করা যায় বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে! ছাত্রছাত্রীদের জন্য কোর্সের শেষে প্লেসমেন্টের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে যাতে তাঁরা সমাজের সর্বস্তরে স্বাস্থ্যের সার্বিক উন্নতিতে নিয়োজিত হতে পারে।