শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহবৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে মানসিক ... বিশদ
ঠিক এই জায়গাতেই অভিনেত্রী-প্রযোজক সুচন্দ্রা ভানিয়ার অন্বেষণ। তাঁর মুক্তি আসন্ন ছবি ‘পূর্ব পশ্চিম দক্ষিণ উত্তর আসবেই’ সেই বুজরুকির বিরুদ্ধে এক বলিষ্ঠ বার্তা — যে তন্ত্র মানেই ত্রাস নয়। ভয়াল, ভয়ঙ্কর, জটিল, কুটিল কোনও সাধন মার্গও নয়। এই পথের উন্মার্গগামীদের হাতে কখনওই বলি প্রদত্ত নয় নিরীহ, অসহায় সাধারণ মানুষ। পরম ব্রহ্মের সঙ্গে মিলিত হওয়ার প্রাচীন সাধন পদ্ধতিতে নেই কোনও শর্টকাট।
যারা শঠ, অসৎ, তাদের চিন্তা ও কর্মপদ্ধতিকে চিহ্নিত করার জন্য তিনটি গল্প (মূল কাহিনীকার অভীক সরকার) বলেছেন সুচন্দ্রার ছবির পরিচালক রাজর্ষি দে। দেখিয়েছেন সৎ ও অসৎ তন্ত্রপন্থার ভোদাভেদ। সেই সূত্রেই মহাপীঠ তারাপীঠ। প্রাগৈতিহাসিক এই পূণ্যভূমি থেকেই তাই ছবির অভিনব প্রচার পর্ব শুরু করল টিম ‘জাস্ট স্টুডিও’। স্মরণাতীতকালের মধ্যে আর কোনও বাংলা ছবির এমনভাবে তারা মায়ের চরণস্পর্শ করে প্রচারাভিযানের নজির নেই বলেই দাবি নির্মাতাদের।
তারই অন্যতম অঙ্গ হিসেবে তারাপীঠের তামাম তান্ত্রিককুলকে অন্নভোগ সেবা দিলেন সুচন্দ্রারা। তাঁদের অন্ন পরিবেশন করলেন ছবির অভিনেতা-অভিনেত্রী, কলাকুশলীরাও। শুধু তান্ত্রিকরাই নন, পাত পেড়ে পেঠভরে আহার করলেন কয়েকশো দরিদ্রনারায়ণও। এমন অভিনব উৎসবে শামিল হয়ে অভিভূত অভিনেতা আরিয়ান ভৌমিক। আরিয়ান বলেন, ‘আমি শিব ভক্ত। তবুও এর আগে বাবা-মায়ের সঙ্গে একাধিকবার তারাপীঠে এসেছি। কিন্তু এমন আত্মার আনন্দ কখনও পাইনি। সাধুসঙ্গ, তাঁদের অন্ন পরিবেশন, আমি ধন্য।’ আরিয়ানের সঙ্গে ছবির অন্যতম গল্প ‘রক্তফলক’-এ অভিনয় করছেন ছোটপর্দার জনপ্রিয় মুখ পায়েল দেব। এটি তাঁর ডেব্যু ফিল্ম। তিনিও ছোটবেলা থেকে একাধিকবার তারাপীঠে মাতৃদর্শন করেছেন, কিন্তু এমন মহৎ উদ্দেশ্যে এখানে আগমন এই প্রথম। উচ্ছ্বসিত অভিনেত্রী বলেন, ‘মায়ের ইচ্ছেতেই ঘটল সব। মায়ের কাছে প্রার্থনা করি আমি যেন সফল অভিনেত্রী হতে পারি।’ পরিচালক রাজর্ষি বললেন, ‘বাংলা ছবির জগৎ প্রতিমুহূর্তে তারা মাকে স্মরণ করে চলে। তাঁর আশীর্বাদ কামনা করে। ছবির শুরুতে, মুক্তির আগে তারাপীঠে পুজো দেওয়া বাংলা ছবির রীতি। সেই রকমভাবে মাকে স্মরণ করতে গিয়ে এমন পরিকল্পনার কথা মাথায় আসে। যেখানে ছবির বিষয়ে তারাপীঠ যুক্ত রয়েছে। সবমিলিয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা।’
অন্নভোগ পর্ব শেষ করেই সুচন্দ্রাকে সামনে রেখে গোটা দল হাজির হল মায়ের গর্ভগৃহে। সেখানকার গোটা আয়োজন তদারক করলেন তারাপীঠের পুরোহিত, মন্দির কমিটির সদস্য জয়দেব চক্রবর্তী। ছবির সাফল্য কামনায় সেখানে বেশকিছুক্ষণ ধরে চলল মাতৃ আরাধনা।
প্রোমোশন পর্বের দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরু সন্ধ্যায় মায়ের আরতিতে। মন্দির প্রাঙ্গণের পাশেই বাঁধানো অনুষ্ঠান মঞ্চে ছবির টিজার ও প্রোমো লঞ্চ অনুষ্ঠানে উপচে পড়ল ভিড়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তারাপীঠ মন্দির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায়, সম্পাদক ধ্রুব চট্টোপাধ্যায়, স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান সজল চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। সুচন্দ্রা বলেন, ‘তন্ত্রের নামে বুজরুকি আর ভণ্ডামির বার্তা দেওয়াই এই ছবির মূল উদ্দেশ্য। তন্ত্র সাধনা কোনও সুবিধাবাদ নয়, ব্রহ্মত্ব প্রাপ্তির কঠিণ অধ্যাবসায়। সেটা সকলকে বুঝতে হবে।’
সবশেষ গন্তব্য তারাপীঠ মহাশ্মশান। সেখানেও ছবির সাফল্য কামনায় আয়োজিত হল রাতজাগা হোম-যজ্ঞ। শামিল হলেন ছবির সঙ্গে যুক্ত সকলেই। ছবির মুক্তি অক্টোবরের শেষে।
ছবি: দীপেশ মুখোপাধ্যায়