শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহবৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে মানসিক ... বিশদ
ইতিমধ্যেই সিনেপ্রেমীরা দেখে ফেলেছেন মিশন মঙ্গলের ট্রেলার। সেখানে স্পষ্টই বলা হয়েছে, সত্য ঘটনা অবলম্বনে এই ছবি তৈরি করা হয়েছে। দক্ষিণী পরিচালক জগনও এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তাঁকে এই ছবির বিষয়ে রসদ জুগিয়েছে খোদ ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)। জগনের বোনও ইসরোর বিজ্ঞানী। তাঁর কাছ থেকেও ইসরোর মঙ্গল মিশন সম্পর্কে অনেক তথ্য জোগাড় করেছেন জগন।
বছর ছয় আগের ঘটনা। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় তখন চরম ব্যস্ততা। বিজ্ঞানী-প্রযুক্তিবিদদের তখন নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই। আমেরিকা, রাশিয়া ও ইউরোপের সঙ্গে একাসনে বসতে চলেছে ভারত। টেনশন তো থাকবেই। মঙ্গল গ্রহে অভিযান চালাতে চলেছে ইসরো। এই প্রকল্পের নাম ছিল ‘মঙ্গলায়ন’।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মঙ্গল অভিযানে যা খরচ করছিল, তার চেয়ে নামমাত্র খরচে ভারত এই অভিযান করেছে। এমনকী, হলিউডের মঙ্গল নিয়ে বিখ্যাত ছবি ‘গ্র্যাভিটি’ বানাতে যা খরচ হয়েছে, মঙ্গলায়নের খরচ ছিল তার চেয়েও কম।
২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। মঙ্গলের উদ্দেশে রওনা দিল ভারতের প্রথম মহাকাশ যান। পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে মঙ্গলের কক্ষপথে সেই যান রওনা দিল ২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টম্বর। তাই ভারতীয় মহাকাশ গবেষণায় এই ২৪ সেপ্টেম্বর দিনটি আক্ষরিক অর্থেই রেড লেটার ডে। যে যানের মেয়াদ ছিল মাত্র ১৮০ দিন, ইসরোর সেই মহাকাশযানই চার বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করে চলেছে। পাঠিয়ে চলেছে লাল গ্রহের একের পর এক তথ্য-ছবি। পৃথিবীর অন্য দেশের তুলনায় অনেক কম খরচেই ভারত মঙ্গলে যান পাঠাতে পেরেছে। এর পিছনে কিন্তু রয়েছে অনেক ক্যালকুলেশন। ইসরোর পরিকল্পনাই ছিল কম জ্বালানিতে রকেট ছোঁড়া। তার জন্য এমন একটা সময় দরকার ছিল, যখন রকেট সবচেয়ে কম দূরত্ব অতিক্রম করবে। মঙ্গল-পৃথিবী আর সূর্যের কৌণিক দূরত্বের একটা নির্দিষ্ট মাপঝোক করেই ইসরোর বিজ্ঞানীরা রকেট ছুঁড়েছিলেন। ২০১৩ সালের নভেম্বরের ওই সময় যদি রকেট ছোড়া না যেত, তবে মঙ্গলায়নের পরিকল্পনা প্রায় আড়াই বছর পিছিয়ে যেত।
ইসরোর এই মঙ্গলায়নে একটা বড় ভূমিকা ছিল মহিলা বিজ্ঞানীদের। ইসরোর মার্স অরবিটার মিশন বা ‘মম’-এর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা। যেমন ডেপুটি অপারেশন ডিরেক্টর রিতু কিরদাল ও নন্দিনী হরিনাথ, জিওস্যাট প্রোগ্রাম ডিরেক্টর অনুরাধা টি কে, প্রজেক্ট ম্যানেজার মৌমিতা দত্ত প্রমুখ। এছাড়াও মঙ্গলায়ন প্রজেক্টের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করা ইসরোর বিশাল টিমে ছিলেন বহু মহিলা বিজ্ঞানী। মঙ্গলায়নের সফল উৎক্ষেপণের পর ওই মহিলা টিমের উচ্ছ্বাসের ছবি ভাইরাল হয়েছিল।
জগন ওই জায়গাটিকেই তাঁর ছবিতে ধরেছেন। একগুচ্ছ মহিলা বিজ্ঞানী, যাঁরা সংসারের কাজও করেন, আবার বিজ্ঞান সাধনায় মগ্ন। ছবিতে ওই মহিলা বিজ্ঞানীদের ব্যক্তিগত জীবনের ছোঁয়া যেমন থাকছে, তেমনি থাকছে মঙ্গলায়নের লড়াইও। ওই মহিলা বিজ্ঞানীদের ভূমিকায় থাকছেন বিদ্যা বালন (তারা সিন্ধে), সোনাক্ষী সিনহা (একা গান্ধী), তাপসী পান্নু (কৃতিকা আগরওয়াল), নিত্য মেনন (বর্ষা গৌড়), কীর্তি কুলহারি (নেহা সিদ্দিকী) প্রমুখ। অক্ষয়কুমার (রাকেশ ধাওয়ান) হলেন এই মিশনের প্রধান। বিদ্যা বালন হলেন প্রজেক্ট ডিরেক্টর। প্রপালশন কন্ট্রোলের দায়িত্বে থাকবেন সোনাক্ষী। তাপসীর দায়িত্বে নেভিগেশন ও কমিউনিকেশন। স্যাটেলাইট ডিজাইনার নিত্যা মেনন ও কীর্তি কুলহারি প্রোগ্রাম অটোনমির দায়িত্বে। দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকছেন শরমন যোশি (পরমেশ্বর নাইডু) ও এইচ জি দত্তাত্রেয় (অনন্ত আয়ার)। শরমনের দায়িত্বে পে লোড আর দত্তাত্রেয়র হাতে স্ট্রাকচারাল ডিজাইন।
মঙ্গল অভিযানের ক্ষেত্রে ভারত হল চতুর্থ ও এশিয়ার প্রথম দেশ। তবে প্রথম অভিযানেই সাফল্য একমাত্র ভারতই পেয়েছে। এই অভিযানের দু’টো বড় দিক ছিল। প্রথমটি নামমাত্র খরচ, দ্বিতীয়টি কম শক্তিশালী পিএসএলভি রকেটে মহাকাশযান পাঠানো। কিন্তু মিশন মঙ্গল এই দু’টি ক্ষেত্রেই প্রকৃত সত্যর ধারে কাছে যায়নি। যেমন ট্রেলারে দেখা গিয়েছে, জিএসএলভি রকেট। এই রকেট ইসরো প্রথম ব্যবহার করেছে চন্দ্রযান-২ উৎক্ষেপণে। দ্বিতীয়ত, মিশন মঙ্গল বানাতে যা খরচ হয়েছে, তার চেয়ে কম খরচে ইসরো মঙ্গলায়ন অভিযান সফল করেছে। ইসরোর তখন খরচ হয়েছিল প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা।
মহাকাশ গবেষণা নিয়ে হলিউডে অনেক ছবি হয়েছে। কিন্তু বলিউড সেখানে পিছিয়েই ছিল। ১৯৬৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল দারা সিং অভিনীত ‘চাঁদ পর চড়াই’। কিন্তু সেই অর্থে মহাকাশ গবেষণা ও একটি মিশন সফল করার যাবতীয় খুঁটিনাটি কোনও ছবিতে দেখা যায়নি। সেই অর্থে মিশন মঙ্গল সত্যিই প্রথমসারিতে থাকবে। প্রথম দিকে অনেকেই মনে করেছিলেন ছবিতে অক্ষয়কুমারের তেমন ভূমিকা নেই। কিন্তু এখন বোঝা যাচ্ছে, অক্ষয়ই ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে। ছবিতে বিদ্যা বালনের স্বামীর চরিত্রে দেখা যাবে সঞ্জয় কাপুরকে।