সাংগঠনিক কর্মে বড় সাফল্য পেতে পারেন। উপস্থিত বুদ্ধি আর সাহসের জোরে কার্যোদ্ধার। বিদ্যায় সাফল্য। ... বিশদ
এই অবস্থায় তাঁর যাবতীয় দায়িত্ব নেন মামা লুকাস ওয়াজেনরোড। কোপারনিকাস পোল্যান্ডের ক্রাকোতে পড়াশোনা শুরু করেন। এই সময়ই তিনি লাতিন, গ্রিক, জার্মানি সহ প্রায় পাঁচটি ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। কোপারনিকাসের মামা চাইতেন যে, ভাগ্নে যেন পড়াশোনা করে চার্চের ক্যানন পদে অধিষ্ঠিত হন। কিন্তু গণিত, মহাকাশ বিদ্যার মতো বিষয় কোপারনিকাসকে বেশি আকর্ষণ করত। যদিও শেষ পর্যন্ত মামার ইচ্ছাও পূরণ করেছিলেন তিনি।
সারা বিশ্বে কোপারনিকাস একজন মহাকাশ বিজ্ঞানী হিসাবে পরিচিত হলেও অর্থনীতিতেও ছিল তাঁর সমান পারদর্শিতা। ১৫১৭ সাল নাগাদ অর্থনীতি বিষয়ক প্রবন্ধও প্রকাশ করেন। যেখানে তিনি পোল্যান্ডের মুদ্রাস্ফীতি, প্রচলিত মুদ্রা ব্যবস্থার সরলীকরণ, বিভিন্ন দ্রব্যের মূল্য পূর্ব নির্ধারিত করা সহ বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করেন। বস্তুত অর্থনীতির বেশ কিছু বিখ্যাত তত্ত্ব যেমন ‘গ্রেশামের সূত্র’ কিংবা ‘টাকার পরিমাণ তত্ত্ব’— এগুলো সবই এসেছে কোপারনিকাসের ধারণা থেকেই।
কোপারনিকাস ডাক্তারিবিদ্যাতেও ছিলেন পারদর্শী। যদিও এ ব্যাপারে তাঁর কোনও ডিগ্রি ছিল না। আসলে কোপারনিকাসের মামা ওয়াজেনরোড ছিলেন অসুস্থ। ওয়াজেনরোড নিজের চিকিৎসা নিজেই করতেন। তাঁর এই মামাকে সাহায্য করার জন্যই কোপারনিকাস ইতালির পাদোয়াতে প্রায় দুই বছর শারীরবিদ্যা অধ্যয়ন করেন। কিন্তু নিয়মমাফিক ডিগ্রি লাভের আগেই পড়া ছেড়ে দেন। যদিও শোনা যায় যে, তাঁর অসুস্থ মামা কিংবা যাদের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়েছে প্রত্যেকের চিকিৎসাই কোপারনিকাস খুব সুন্দর ভাবে করেছিলেন।
১৫১৪ সাল নাগাদ কোপারনিকাস মহাকাশে গ্রহগুলির গতি সম্পর্কিত তাঁর ধারণাগুলো বইয়ের আকারে লিখে তাঁর কয়েকজন পরিচিতদের মধ্যে বিতরণ করেন। এরপর প্রায় ১৮ বছর পরে ‘পৃথিবী যে সূর্যের চারদিকে ঘুরছে’ সেই তত্ত্ব সম্বলিত একটা পাণ্ডুলিপির খসড়া করেন। কিন্তু নিজে সেই বই প্রকাশ করার সাহস পাননি সেই সময়কার ধর্মযাজকদের ভয়ে। শেষে তাঁর মৃত্যুর দুই মাস আগে ১৫৪৩ সাল নাগাদ সেই পাণ্ডুলিপিটি অত্যন্ত সজ্ঞানেই উৎসর্গ করেন পোপ তৃতীয় পলকে। কারণ তিনি জানতেন যে, সেই সময়কার ধর্মযাজকদের বিরুদ্ধাচরণ করে সাধারণ মানুষের মধ্যে সঠিক তত্ত্বের প্রতিষ্ঠা করার সামর্থ্য তাঁর নেই। কোপারনিকাস তাঁর গোটা জীবনে আইন, গণিত, চিকিৎসাশাস্ত্র, দর্শন বিভিন্ন বিষয় অধ্যয়ন করলেও কোনও বিষয়েই কিন্তু প্রথাগত কোনও ডিগ্রি লাভ করেননি। শোনা যায়, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ডিগ্রি লাভের ঠিক আগের মুহূর্তে তিনি শিক্ষা ক্ষেত্র ত্যাগ করতেন। কিন্তু কোনও বিষয়েই তাঁর পাণ্ডিত্যের কোনও অভাব ছিল না। ৭০ বছর বয়সে ১৫৪৩ সালের ২৪ মে এই মহান বিজ্ঞানী প্রয়াত হন।