কর্মপ্রার্থীদের কর্মলাভ কিছু বিলম্ব হবে। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য লাভ ঘটবে। বিবাহযোগ আছে। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় থেকে ... বিশদ
শুধুমাত্র দুঃসময়ে সাহায্য করলেই যে কোনও সমস্যার সমাধান হয় না বা তার চিরস্থায়ী সুরাহা হয় না, এটা উপলব্ধি করেন নারী সংঘের কর্মকর্তারা। তাই তাঁরা সাময়িকভাবে খাদ্য-বস্ত্র বিতরণ করলেও চিন্তা করতে থাকেন এমন কিছু করার, যার মাধ্যমে এই সমস্ত মহিলা স্বনির্ভর ও স্বাবলম্বী হয়ে নিজের প্রয়োজন নিজেই মেটাতে পারবেন। আর এই চিন্তাধারার সঙ্গে সঙ্গে বদলাতে থাকে নারী সেবা সংঘের কার্যপ্রণালী। এই সুচিন্তাধারাকে অবলম্বন করে নারী সেবা সংঘ দুঃস্থ অসহায় মহিলাদের হাতের কাজ শিখিয়ে তাদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে এগিয়ে চলা শুরু করল। প্রথমে আশুতোষ মুখার্জি রোড, পরে পদ্মপুকুর রোডের ভাড়া বাড়িতে এবং তারপরে ৪৫, ঝাউতলা রোড, কলকাতা-১৯-এ প্রতিষ্ঠা হল এই সেবা সংঘ। ততদিনে সরকারি অনুমোদন ও সরকারি সাহায্য পেয়ে গিয়েছিল এই সেবা সংঘ। এরপর ষাটের দশকের শেষ ভাগে সরকারি সহায়তায় যোধপুর পার্কে দু’বিঘা জমি এবং বাড়ি তৈরির ব্যবস্থা করা হয়।
কিন্তু অত কম সহায়তায় তখন সম্পূর্ণ বাড়ি নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। সত্তরের দশকে কার্যকরী সমিতি নানাভাবে অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে বাড়িটির কিছুটা তৈরি করতে সক্ষম হয়। এবং এরপরে বাড়িটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগের সহায়তায় বাসযোগ্য করা হয়। সেই সত্তর দশকেই সরকার থেকে মহিলাদের জন্য ট্রেনিং সেন্টার গঠন করেও নারী সেবা সংঘকে সাহায্য করেছিল। এবং এই সময়ই কেন্দ্রের সহায়তায় কার্যরত মহিলাদের জন্য একটি হস্টেল খোলা হয়।
এই নারী সেবা সংঘ যাতে আরও সুষ্ঠু এবং সুন্দরভাবে তাদের কাজ করতে পারে, সে জন্য শ্রদ্ধেয়া সীতা চৌধুরী যিনি এই সংঘ প্রতিষ্ঠার সময় সম্পাদিকা ছিলেন এবং পরবর্তীকালে ষাটের দশকে সভানেত্রীর পথ অলঙ্কৃত করেন, তিনি তাঁর অক্লান্ত শ্রম দিয়ে এই নারী সেবা সংঘকে একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
বর্তমানে এই নারী সেবা সংঘ নানান ধরনের কাজ করে চলেছে। সেগুলো হল—
নিম্নবিত্ত পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের জন্য একটি হোম গঠন করেছে। এখানে সরকার অনুমোদিত অনাথ আশ্রমের মেয়েরাও থাকে। মোট আশিজন মহিলার বিনা খরচে থাকা-খাওয়া আর শিক্ষার ব্যবস্থা করতে সক্ষম এই সংঘ। এই সংঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে,আগে সরকারের সোশাল ওয়েলফেয়ার ডিপার্টমেন্ট ও মাস এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট থেকে অনেক মেয়ে পাঠানো হতো তাদের কাছে। কিন্তু এখন বহুদিন কোনও মেয়ে পাঠায়নি। তাই এই হোমের বহু আসন খালি পড়ে আছে। নারী সেবা সংঘ চায় আঠারো বছরের উপরে বয়স এমন কোনও মেয়ের অভিভাবক যদি স্বেচ্ছায় লিখিতভাবে তাঁদের মেয়েকে তাদের সংঘে দিয়ে যান, তবে তাঁরা সেই মেয়েটিকে যথোপযুক্ত শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে, তাঁকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করবে।
কারিগরি শিক্ষা বলতে এখানে তাঁতবোনা, কাঁথা তৈরি, পুরনো খবরের কাগজ দিয়ে ক্যারি ব্যাগ তৈরি, কাপড় ছাপা, টেলারিং, বাটিক, বাঁধনি, বই বাঁধানো, উলের কাজ প্রভৃতি শেখানো হয়। আর এটা পারদর্শী শিক্ষিকারা এসে শেখান। এছাড়াও কয়েক বছর আগে এই শিক্ষাক্রমে খাবার সংরক্ষণ বিভাগ চালু করা হয়েছে। নারী সেবা সংঘের রান্নাঘর বা ক্যান্টিনের তৈরি নানাপ্রকার খাবার, মিষ্টি ইত্যাদি খুবই জনপ্রিয়। বর্তমানে কারিগরি শিক্ষাতে স্থান করে নিয়েছে কম্পিউটার ট্রেনিং এবং ডিটিপি মুদ্রণ ব্যবস্থা। এছাড়াও নারী সেবা সংঘ নিম্নবিত্ত পরিবারের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য একটি প্রি-প্রাইমারি এবং প্রাইমারি স্কুল তৈরি করেছেন। যেখানে একসঙ্গে পঞ্চাশ জন শিশু পড়াশোনা, খেলাধুলা করতে পারবে। এছাড়াও সীতা চৌধুরীর নামে একটি স্কুল আছে, যেখানে চতুর্থ শ্রেণী অব্দি পড়াশোনা করার পর বাচ্চারা অন্য স্কুলে পড়ার সুযোগ পেয়ে যায়। এছাড়াও বয়স্ক মহিলাদের জন্য রবীন্দ্র মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও বিদ্যাসাগর মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।
এছাড়াও এই সংঘ কাজে নিযুক্ত অর্থ উপার্জনকারী মহিলাদের জন্য একটি হস্টেল চালু করেছেন। যেখানে চল্লিশজন মহিলা থাকতে পারবেন।
এই এত বড় কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য সরকার থেকে সামান্য অনুদান আর কিছু দরদি বন্ধুদের সাহায্য যথেষ্ট নয়। তাই তাঁরা প্রতিবছর একটি মেলার আয়োজন করেন। মেলাটি বসন্ত মেলা বলে পরিচিত। ১৯৭৭ সাল থেকে শ্রদ্ধেয়া সীতা চৌধুরীর নেতৃত্বে এই মেলাটি শুরু হয়েছিল। যা এখনও অব্দি হয়ে চলেছে। এই মেলায় সেবা সংঘের মেয়েদের তৈরি জিনিসপত্র, খাবার প্রভৃতি বিক্রি হয়। আর এখান থেকে উপার্জিত অর্থ নারী সেবা সংঘ তাদের কর্মযজ্ঞে ব্যবহার করে।
এই বছর এই নারী সেবা সংঘ ৭৫ বছরে পা দিল। তাই সেই উপলক্ষে নভেম্বর মাস থেকে এক বছর ধরে তারা নানাভাবে এই বর্ষপূর্তি উদ্যাপন করবে।
সামান্য বীজ থেকে আজ নারী সেবা সংঘ মহীরুহে পরিণত হয়েছে। দুঃস্থ, অসহায় মেয়েরা যাতে স্বনির্ভর আর স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে এবং তারা যাতে সমাজের মূল স্রোতের সঙ্গে মিশে দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে উঠতে পারে, সেই চেষ্টাই করে চলেছে নারী সেবা সংঘ।