কর্মপ্রার্থীদের কর্মলাভ কিছু বিলম্ব হবে। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য লাভ ঘটবে। বিবাহযোগ আছে। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় থেকে ... বিশদ
‘তনু’ থেকে ‘তন্ত্র’ কথাটি এসেছে। তন্ত্র সাধনার মূল দাঁড়িয়ে আছে ‘পঞ্চ ম’-এর ওপর। এই ‘পঞ্চ ম’ হল ‘মদ্য’, ‘মৎস্য’, ‘মাংস’ ‘মন্ত্র’ ও ‘মৈথুন’। তবে তন্ত্র সাধনা আর তন্ত্র প্রকারে কালীপুজোর মধ্যে বিশেষ করে লোকচক্ষুর সামনে মা কালীর যে তান্ত্রিক পদ্ধতিতে পুজো হয়ে থাকে তার মন্ত্র, মুদ্রা ও আচার কিছুটা হলেও আলাদা। তান্ত্রিক পদ্ধতিতে মা কালীর পুজোয় জীব বলি দেওয়া হয় ও মৎস্য ভোগও নিবেদন করা হয়। মাকে সুরা নিবেদন করা হয় মন্ত্র দ্বারা। তান্ত্রিক পদ্ধতিতে কালীপুজোয় বোয়াল মাছ ও অন্যান্য মাছ ভোগ দেওয়া হয়। বলির মাংস পাঁঠার ঘাড় বা গলার কাছ থেকে কয়েক টুকরো মাংস ও রক্ত মাকে ছোট মাটির মুছি বা ছোট সরার মতো বাটিতে করে মন্ত্র দ্বারা সেই সব বাটিতে একটি করে কলা দিয়ে মা কালীকে নিবেদন করা হয়। বলির মাংস রান্না করে মায়ের ভোগে দেওয়া হয়।
ডান পা শব শিবের ওপর রাখা মা কখনও কৃষ্ণবর্ণা, কখনও নীলবর্ণা, আবার পীতবর্ণা, রক্তবর্ণা, শুভ্রবর্ণা কখনও তিনি চামুণ্ডা, কখনও বা শত্রু দমনকারী বগলা, তিনিই আবার তন্ত্রমতে মা কমলা, মহালক্ষ্মী, আবার তন্ত্রের দেবী মাতঙ্গী বিদ্যাদাত্রী সরস্বতী।
মা কালী হলেন বিশ্ব প্রসবিনী মা মহাশক্তি মহামায়ারই ভিন্ন রূপ, ভিন্ন ভিন্ন কর্মসাধনের জন্য পরমা প্রকৃতি আদ্যাশক্তি মহামায়া ভিন্ন ভিন্ন রূপ নিয়ে জগতের কল্যাণে ও অসুর বিনাশে লিপ্ত হয়েছেন।
সাধারণত, কাপালিক, অঘোরী, তান্ত্রিক প্রভৃতি, যাঁরা তন্ত্রের দ্বারা কালী সাধনা করে থাকেন।
তন্ত্রসাধনা বেশ কষ্টকর। প্রথমে পঞ্চ ইন্দ্রিয়কে বশে আনতে হবে। নিজের কুলকুণ্ডলিনীকে জাগাতে হবে। শোনা যায় তন্ত্র সাধনা করতে গেলে সাধক বা সাধিকা ভূত-প্রেত ও নানা রকম ভয় ও প্রলোভনকে জয় করে তবেই সাধনায় সিদ্ধিলাভ করতে পারেন। সন্ন্যাস নিয়ে বা গৃহে থেকেও সঠিক গুরুর পরামর্শে সাধক বা সাধিকা তন্ত্র সাধনায় মা কালীকে তৃপ্ত করতে পারেন।
তন্ত্র কী এই নিয়ে একটু বিশদে আলোচনা করা যাক। মনে করা হয় সনাতন ধর্মে এই তন্ত্র সাধনা খ্রিস্টীয় প্রথম শতকের প্রথম দিকে উদ্ভব ঘটেছিল। তন্ত্র হল এক বৃহৎ ও গভীর গোপন বিষয়। প্রকৃত গুরুর কাছে দীক্ষা নিয়ে গুরু নির্দেশিত পথে তন্ত্র সাধনা করতে হয়। তন্ত্রের মানে অনেক ব্যাপক, তবে সংক্ষেপে বলতে হলে বলা যায় তন্ত্র হল সৃষ্টি পরিচালনার নিয়ম। তাই তন্ত্র বিষয়টির তাৎপর্য বিশাল। তন্ত্র অতিপ্রাচীন বৃহৎ গুপ্ত একটি বিষয়। তন্ত্র সাধকরা মনে করেন এই মহাবিশ্ব শিবশক্তি ও মাতৃশক্তির অপার লীলা। তাই ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের কর্মকাণ্ড অর্থাৎ সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়কে তন্ত্র বলা হয়। প্রথমে শিব ও অন্যান্য দেবতাদের তন্ত্রের মাধ্যমে সাধনা করতে করতে নারী শক্তির সাধনায় তন্ত্রের বিকাশ ব্যাপক হয়েছে বলেও অনেকে মত প্রকাশ করেছেন। দশ মহাবিদ্যার ওপর নির্ভর করে তন্ত্র গড়ে উঠেছে বলেও অনেকে মনে করেন। আর এই দশ মহাবিদ্যার প্রথম বিদ্যা হলেন মা কালী। পরমা প্রকৃতি বিশ্ব প্রসবিনী মা মহামায়ারই বিভিন্ন রূপ দশ মহাবিদ্যা। তার মধ্যে মা কালী তন্ত্র সাধনার মধ্যমণি বলা যায়। গুপ্ত যুগের শেষ দিকে তন্ত্রের প্রচলন ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছিল। তারপর চৈনিক পরিব্রাজকরা অনেক তন্ত্রের পুঁথি তাঁদের দেশে নিয়ে যান এর ফলে বৌদ্ধধর্মে তন্ত্রের প্রবেশ ঘটে। তন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত আছে মন্ত্র ও যন্ত্র। যন্ত্র হল দর্শন আর পুজো হল পদ্ধতি। অবিদ্যাকে গ্রাস করে জ্ঞানশক্তির উন্মোচন করে তন্ত্র। আর প্রাকৃতিক শক্তিকে চৈতন্যময় করাই তন্ত্রের উদ্দেশ্য। তন্ত্র অসীম শক্তির আধার। তন্ত্র সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ের পরিচালনা শক্তি। তাই তো তন্ত্র বিদ্যা অতি গোপন বিদ্যা। এক বৃহৎ ও গোপন বিষয় তন্ত্র। তাই দীক্ষা ছাড়া গুরু কাউকে এই পথের সন্ধান দিতে চান না। মুক্ত বিশ্বকোষে বলা হয়েছে, ‘তন্ত্র হল সনাতন হিন্দু সমাজে প্রচলিত উপাসনার একটি পদ্ধতি। তন্ত্রের উদ্দেশ্যই হল মানুষকে অজ্ঞানতা ও পুনঃজন্মের হাত থেকে মুক্ত করা।