কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ। সরকারি ক্ষেত্রে কর্মলাভের সম্ভাবনা। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় মানসিক অস্থিরতা থাকবে। ... বিশদ
এক আর একে দুই, দু আর একে তিন। এইরূপ এক থাকলে দুই, তাও আবার একে একে মিলিয়ে দুই হয়। পূর্বের এক পরের একের সঙ্গে না মিললে দুই হয় না। আর এই দুই যা বলছি তাও ভ্রম, কারণ পূর্বেও এক পরেও এক। এক ছাড়া আর কিছুই নেই, জোর করে দুই বলা মাত্র। বস্তুতঃ এক ব্যতীত দুই নেই। যা কিছু দেখা যায় ধীরভাবে লক্ষ্য করলে সবই এক। যার সেই এক সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ জ্ঞান হয়নি, তার কিছুই জানা হয় নি। এটা গাছ, ওটা গরু, এটা পুরুষ, ওটা স্ত্রী, নানান্ রূপ দেখছি ও বলছি; এ সকল উপাধি মাত্র। উপাধি কিছুই নয়, অনিত্য। উপরোক্ত উপাধি ও নানান্ বস্তু সকলের মধ্যে সূক্ষ্মভাবে একটি নিত্য পদার্থ (প্রাণ) আছে, যা সর্বত্র বিরাজমান। হাড়-মাংস, ইটপাটকেল এগুলি চলে না। যদি তা হোত তাহলে মৃত অশ্বের দ্বারা গাড়ি চালান যেত বা মৃত স্ত্রী-পুরুষের দ্বারা সন্তান উৎপন্ন হোত। কারণ, মৃত অবস্থায় সবই আছে। হস্ত, পদাদি, নাসিকা, কর্ণ, জিহ্বা, ত্বক, জননেন্দ্রিয় সবই আছে; কিন্তু একের (প্রাণের) অভাবে কেউ কিছু করে না। অতএব একের রূপই দুই। একের জ্ঞান হলে আর রূপ থাকে না, তখন সব এক। হাড়, মাংস সেই একের রূপ মাত্র, রূপ সেই একের ছায়া মাত্র। ছায়া যেমন কিছুই নয়, রূপও তেমনি কিছুই নয়। জগতে যা কিছু হচ্ছে তা সমস্ত এক হতে হচ্ছে। সেই এককে (প্রাণ) জানা চাই, নচেৎ সব বৃথা। সকলের সাধন করতে গেলে কারও সাধন করা হল না, কারণ এক মন কয় জায়গায় স্থির হবে? পঞ্চ স্বামী ভাল নয়, তাতে সকলকে সমান ভাবে সন্তোষ করা যায় না, মনও সকলের প্রতি সমান থাকে না। এ বড় দেবতা ও ছোট দেবতা ভাব হয়ে থাকে, সুতরাং কাহারই সাধন ঠিক মত করা হয় না। এ কারণ একেরই সাধন করা উচিত এবং একেতেই মনকে রাখলে লোকে সতী বলবে, সাধনও ঠিক হবে। কারণ সকলেতেই সেই এক বর্তমান। একজন কথা বলছেন, অপরজন শুনছেন। জিহ্বা, ওষ্ঠ কি কথা বলতে পারে? কর্ণ কি শুনতে পারে? পারে না। ইন্দ্রিয়গুলির নিজস্ব কোনও ক্ষমতা নেই। উভয়কেই অবশ্য জীবিত হতে হবে। চঞ্চলপ্রাণ বুদ্ধি, জিহ্বা, ওষ্ঠ ইত্যাদির মাধ্যমে এক কম্পন সৃষ্টি করলেন অর্থাৎ কথা কইলেন। সেই চঞ্চলপ্রাণই অপর দেহে বুদ্ধি, মন ও কর্ণ ইত্যাদির মাধ্যমে শুনলেন। উভয়ের মাঝখানে যে ব্যবধান সেখানেও তিনিই বহন করলেন, কারণ সেখানেও সেই একই চঞ্চলপ্রাণ বর্তমান। অর্থাৎ একই চঞ্চলপ্রাণ তিনিই কথা কইলেন, তিনিই উহা বহন করলেন এবং তিনিই শুনলেন। কেবল আধারের পার্থক্যহেতু স্বতন্ত্র বলে প্রতীয়মান হয়। ঠিক ঐ একইভাবে অপরকে কটু কথা বললে বা কাহাকেও আঘাত করলে নিজেকেই কটু কথা বলা হয় বা নিজেকেই আঘাত করা হয়। উহা নিজের কাছেই ফিরে আসে, কারণ উভয়ের মধ্যে একই চঞ্চলপ্রাণ বর্তমান। এক ছাড়া যখন দুই নেই তখন নিজেই বলছেন ও নিজেই শুনছেন, নিজেই আঘাত করছেন এবং নিজেই আঘাত প্রাপ্ত হচ্ছেন। কিন্তু যিনি স্থিরপ্রাণ তিনি কিছু করেন না, কিছু করানও না। তিনি সর্ব্বদা সাক্ষী মাত্র, সর্বত্রে সমরূোপ বর্তমান। পিপীলিকা হতে বৃহৎ হস্তী, দূর্বাঘাস হতে বৃহৎ বটবৃক্ষ সর্বত্রে সমপরিমাণে রয়েছেন।
এই দেহের মাঝে যোগীরা প্রাণকে অন্বেষণ করতে গিয়ে দেখেছেন মস্তিষ্কের মধ্যে যে ব্রহ্মরন্ধ্র সেখানেই চৈতন্যের প্রকাশ। এই প্রকাশ হতে প্রাণশক্তি অনুরঞ্জিত এবং প্রাণপ্রবাহ সহস্র নাড়ীর ভিতর দিয়ে ইন্দ্রিয়গণকে ও দেহকে চেতনাযুক্ত করছেন। এই প্রাণশক্তির একটি প্রধান প্রবাহ আছে, উহা মেরুদণ্ডের মধ্যে অবস্থিত। তার মধ্যে সুষুম্নাই প্রাণশক্তির আধার।